করোনায় মুক্তি অনিশ্চিত যেসব ছবি
করোনাভাইরাসের কারণে দেশীয় চলচ্চিত্র ব্যবসা ভেঙে পড়েছে। ছবি মুক্তি, নির্মাণ ও সিনেমা হল বন্ধ রয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়ার আগে মুক্তি পাওয়া দুটি বিগ বাজেটের ছবি ‘বীর’ ও ‘শাহেনশাহ’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। একই সঙ্গে মুক্তি পাওয়া কলকাতা থেকে আমদানি করা আরেকটি ছবি ‘রবিবার’ আর্থিক ক্ষতির অঙ্ক গুনেছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে এবং আগামীতে এর পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্রকাররা। ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় শাকিব খান প্রযোজিত ‘বীর’ ছবিটি। প্রায় দেড় কোটি টাকা বাজেটের এই ছবিটি মুক্তি পায় ৮০টি সিনেমা হলে। প্রদর্শকদের মতে সিনেমা হলের সংখ্যা ও দর্শক কম হওয়ায় বিগ বাজেটের কোনো ছবির নির্মাণ ব্যয় ফেরত আনতে কমপক্ষে এক মাস সময় দরকার। কিন্তু ছবিটি মুক্তির পর ৮ মার্চ দেশে করোনা আক্রান্তের খবর প্রচার হওয়ায় ছবিটি নির্মাণ ব্যয়ের অর্ধেকও তুলে আনতে পারেনি বলে জানান এর প্রযোজক শাকিব খান। ৬ মার্চ মুক্তি পায় শাকিব অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ ছবিটি। ছবিটি মুক্তির দুদিনের মাথায় দেশে করোনার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় দর্শক খরায় এটি ব্যবসায়িক দিক দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। দেড় কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত এই ছবিটি বিশাল লোকসানের কবলে পড়ে বলে জানায় ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা শাপলা মিডিয়া। ২৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়া কলকাতা থেকে আমদানিকৃত ছবি ‘রবিবার’ ৮টি সিনেমা হলে মুক্তি পেলেও করোনার কারণে টানা প্রদর্শন করতে না পারায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ে ছবিটি বলে জানান ছবির আমদানিকারক অনন্য মামুন। ৬ মার্চ মুক্তি পাওয়া ‘হলুদ বনি’ ছবিটিও করোনার কারণে ৯০ ভাগ টাকা তুলে আনতে পারেনি বলে জানায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। এদিকে যে ছবিগুলো ইতিমধ্যে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল করোনার কারণে সেগুলোর মুক্তি স্থগিত করায় সেগুলোও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দিন। তার কথায় কোনো ছবি নির্দিষ্ট সময় মুক্তি না পেলে নানা কারণে ছবিটির মেরিট নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এটি লোকসানের কবলে পড়ে। যেসব ছবি মুক্তির অপেক্ষায় ছিল সেগুলো হলো- ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’ সিনেমা ২০ মার্চ এবং মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ ১৩ মার্চ। মার্চ মাসেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবিটি। এই ছবিগুলোর মুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া ছবির মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক সিনেমা ‘বঙ্গবন্ধু’র শুটিং শুরু হওয়ার কথা আগামী ১৭ মার্চ। করোনার কারণে সেটির নির্মাণকাজ পিছিয়েছেন ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। ১৫ মার্চ থেকে নেপালে ‘কানামাছি’ সিনেমার শুটিং শুরুর কথা ছিল। সেটিও স্থগিত। আরও বন্ধ হয়ে গেছে নেয়ামুলের ‘গাঙচিল’, ‘জ্যাম’, রায়হান রাফীর ‘স্বপ্নবাজী’, ‘ইত্তেফাক’, সৈকত নাসিরের ‘ক্যাসিনো’, সাইফ চন্দনের ‘ওস্তাদ’, ‘মন্ত্র’, ‘কাপ্তান’ ও ‘কয়লা’, দীপঙ্কর দীপনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’সহ বেশ কয়েকটি ছবির শুটিং। এসব ছবির সেট নির্মাণসহ অনেক কাজই আগে শেষ হয়েছিল। শুটিং শুরু করতে না পারায় ছবিগুলোর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট নির্মাতারা। করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব সিনেমা হল। প্রদর্শক সমিতির মতে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হতে যেতে পারে সিনেমা হলগুলো। মিরপুরের সনি সিনেমা হলের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেনসহ বেশ কটি সিনেমা হল ও সিনেপ্লেক্সের কর্ণধার জানান, সিনেমা হল বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা বিল, ট্যাক্স ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত গুনতে হচ্ছে। এতে লোকসানের কবলে পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে চলচ্চিত্রশিল্প।