করোনা নিয়ে আলোচনায় যে দুটি মুভি
আমার পরিচিত একজন Pandemic টিভি সিরিজটি দেখার জন্য পরামর্শ দিল। এই সিরিজের বিশেষত্ব কী? জানতে চাইলে আমাকে প্রথমে দেখার জন্য বলা হল। ইউটিউবে দুই পর্বের সিরিজটা আছে। ২০০৭ সালের টিভি সিরিজ। দেখা শুরু করলাম। ঘটনা সামান্য একটু ব্যাখ্যা করি।
এমইস স্মিথ নামের একজন তরুণ আরেকজনের সঙ্গে হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। স্মিথ প্লেনে উঠে এবং প্রচণ্ড হাঁচি কাশির পর প্লেনের মধ্যেই মারা যায়। বিমানের অন্যান্য যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের কোয়ারান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয় (যদিও ইতিমধ্যে কেউ কেউ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন)।কিন্তু একজন যাত্রী কোয়ারান্টিনে না গিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেই যাত্রী যেখানে হাঁচি-কাশি দিয়েছেন, যাদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছেন, যাদের স্পর্শ করেছেন কিংবা যাদের সঙ্গে অর্থ লেনদেন করেছেন, সবাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
এবং যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাদের থেকেও অন্য মানুষের মধ্যে একইভাবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। সুপার শপ থেকে মানুষ বিভিন্ন দরকারি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে মজুদ করে রাখে। অনেক আক্রান্ত রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হয়।
Pandemic সিরিজটি শেষ করার পর আরেকজন বন্ধু Contagion মুভিটি দেখতে বলল। তারও একই কথা, আগে দেখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বলা হচ্ছে, এই মুভির কাহিনীর সঙ্গে বর্তমান করোনাভাইরাসের প্রায় সকল কিছুই নাকি মিলে যাচ্ছে। Contagion মুভিটাও দেখলাম। ২০১১ সালের মুভি। এই মুভির কাহিনীও Pandemic এর মতই।
বাদুড়ের ফেলে দেয়া আধা খাওয়া কলা খেয়ে শুকর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। সেই শুকর স্পর্শ করার জন্য হোটেলের শেফ আক্রান্ত হন এবং তার থেকে জ্যামিতিক হারে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।
অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি যেখানে হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন, যা স্পর্শ করছেন, যাকে স্পর্শ করছেন, সেখান থেকেই ভাইরাসটির বিস্তার ঘটছে। কোন ভ্যাকসিন নাই। চীন আমেরিকার রেষারেষিও দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করে। একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
ছবিটি দেখার পরে মনে হয়েছে, Pandemic কিংবা Contagion মুভির কাহিনী নিয়েই বাস্তবে কেউ কি বর্তমানে সারাবিশ্ব নিয়ে খেলছে? এটা ভাবার কারণ হচ্ছে, অচেনা মারাত্মক একটি ভাইরাস, যার বিস্তার বাতাস কিংবা স্পর্শের মাধ্যমেই ঘটছে।
মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস আসলেই কি কোন প্রাণী থেকে সংক্রমণ ঘটেছে নাকি মানুষের তৈরি কোন জীবাণু অস্ত্র, যা ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? কারণ জীবাণু অস্ত্রের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।
অবস্থা এখন এতই বেগতিক, কেউ আর করোনাভাইরাসের উৎপত্তি কীভাবে ঘটছে, সেটা নিয়ে কথা বলছে না। প্রথমদিকে বাদুড়, সাপের কথা বলা হলেও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এখন সবাই ব্যস্ত রোগ পরীক্ষা নির্ণয় এবং ভ্যাকসিন তৈরি করা নিয়ে।
সেটাই বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত। ভ্যাকসিন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে যাক, এটাই সকল মানুষের প্রত্যাশা। বেঁচে যাক সকল মানুষ। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণ ছাড়া করোনাভাইরাস যদি সত্যিই কোন জীবাণু অস্ত্র হয় এবং ইচ্ছা করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তবে লাভের খাতায় কারো না কারো নাম যোগ হবেই।
লেখক: রিয়াজুল হক, যুগ্ম-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক