মার্চ ২৬, ২০২০/ভিডিও কনফারেন্স—

0

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর পূর্ণ বক্তব্য।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

আমরা আজ এমন এক সময়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, যখন গোটা বিশ্ববাসী প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সমগ্র বিশ্ব এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলছে। মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে। প্রতি মুহুর্তে নতুন আক্রান্ত আর মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। লক ডাউন, আইসোলেশন, সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে সম্পূর্ণরুপে থমকে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। প্রতিটি দেশ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হতে পরিত্রান পেতে অন্য দেশ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। ভয়ংকর এক কঠিন পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছি আমরাসহ বিশ^বাসী। সরকারী হিসাবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৩৯ জন আক্রান্ত আর ৫ জনের মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয়েছে। কেভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ন্যুনতম প্রয়োজনীয় টেস্ট কিট, চিকিৎসকদের পিপিই কিংবা হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসিইউ’র প্রচন্ড অভাব এদেশে। সারাদেশের হাসপাতাল থেকে হাজার হাজার স্যাম্পল আসছে অথচ টেস্ট করতে পারছে মাত্র ৭০-৮০ টি। এই অপ্রস্তুত দৃশ্যপটের মধ্যে সামনে আরো কঠিন পরিস্থিতি ধেয়ে আসছে। গোটা দেশবাসী শংকিত-আতংকিত। এই অবস্থার দ্রুত অবসান জরুরী।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
এই ভয়াল দুর্যোগময় সময়ে, মহাক্রান্তিকালে দেশবাসী, সরকার, সাধারণ জনগণ ও বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যের প্রতি সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করছি।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর রাতে লন্ডন থেকে প্রদত্ত এক ভিডিও বক্তৃতায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় জনাব তারেক রহমান অবিলম্বে দেশে ‘চিকিৎসা জরুরী অবস্থা’ ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি যে আহবান জানিয়েছেন তা কার্যকর করার জন্য আমরা দাবী জানাচ্ছি।

একই সঙ্গে তিনি ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের কাজকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা এবং বিশেষ বোনাস প্রদান, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিক্যাল সরঞ্জাম, পিপিই, করোনা টেস্ট কিট সরবরাহ করে দেশের প্রতিটি উপজেলায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রবীণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষি শ্রমিক, গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানার শ্রমিক এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আর্থিক সহায়তার উদ্দেশে দ্রুততার সঙ্গে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং দেশে কমপক্ষে আগামী ছয় মাসের জন্য জাতীয় কিংবা স্থানীয় সকল নির্বাচন স্থগিত করারও দাবী জানিয়েছেন। আমরা মনে করি দেশ এবং জনগণের স্বার্থে প্রতিটি দাবীই অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের আহবান জানাই।

সচেতন বন্ধুরা,
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান তাঁর ভিডিও বার্তায় মা বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির ঘোষণায় আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘দেশে গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে এটি অবশ্যই আনন্দ ও স্বস্তির খবর। সন্তান হিসেবে এজন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই’। তারেক রহমান দেশের চলমান সঙ্কটকে সবার জন্যই মহাবিপদ উল্লেখ করে আতংকিত না হয়ে বরং সাহস ও ধৈর্য নিয়ে এবং নিরাপদ থাকার সকল নির্দেশনা অনুসরণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

দেশনায়ক তারেক রহমান বলেন, সারাবিশ্বের মানুষ এক মহাবিপদের কাল অতিক্রম করছে। বিশ্বের সকল ধনী-গরীব, শক্তিমান কিংবা দুর্বল, সাদা কিংবা কালো প্রতিটি মানুষই এখন ভীত ও আতংকিত। প্রতিটি দেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। দেশে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। তাই বর্তমান পরিস্থিতি একাধারে একটি বৈশ্বিক সংকট। আবার প্রতিটি দেশের কাছে এটি একটি জাতীয় সঙ্কট। এটি এখন মানুষের বাঁচা মরার প্রশ্ন। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশ এবং জনগণের স্বার্থে সবাইকে যেকোন মূল্যে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে অবশ্যই বর্তমান সরকারের বৈধতার সংকট রয়েছে, কিন্তু চলমান করোনাভাইরাস সংকট আরো ভয়াবহ এবং অত্যন্ত বিপর্যয়কর।

তারেক রহমান বলেন, জনগণের রায়ে ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। অনেক সংকটময় পরিস্থিতিও মোকাবেলা করেছে। সারাবিশ্বের সাথে মাতৃভূমি বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ সংকটে। তাই এই সংকট মোকাবেলায় বিএনপি বর্তমান সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি’।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ,
জনাব তারেক রহমান বলেন, দোষারোপের রাজনীতি, মুখরোচক বাক্যবান, কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে কিংবা হুমকি-ধামকি শক্তি দেখিয়ে এই ঘোর বিপদ মোকাবেলা সম্ভব নয়। তাই এই বিপদের দিনে প্রতিটি মানুষকে একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিককে নিজের অবস্থা-অবস্থান কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে গিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে নিজেকে, নিজের পরিবারকে এবং প্রতিবেশীকে নিরাপদ রাখার নীতি গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, তবে এই বিপদ মোকাবেলায় সবার আগে প্রয়োজন রাষ্ট্র ও সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।

তিনি আরও বলেন, এই ভাইরাসটি এতটাই ছোঁয়াচে এবং স্পর্শকাতর যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে বলেছে, কারো সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, সাবান কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে যাতে মানুষ থেকে মানুষের সংস্পর্শে এটি ছড়াতে না পারে। দেশনায়ক তারেক রহমান বলেন, বর্তমান বিপদ মোকাবেলায় ‘লক ডাঊন’ ‘কোয়ারেন্টাইন’ কিংবা ‘সেলফ আইসোলেশন’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কিন্তু বাংলাদেশের বিরাজমান বাস্তবতায় এমন পরিস্থিতির সঙ্গে দেশের জনগণ ততটা পরিচিত নয়। তাই এসব পদক্ষেপ সফল করতে হলে জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রয়োজন সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ যাতে দলমত, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ সক্রিয়ভাবে ‘লক ডাঊন’ ‘কোয়ারেন্টাইন’ কিংবা ‘সেলফ আইসোলেশন’ প্রক্রিয়ার সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারে। এ কারণে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে সফলভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালগুলোকে উপযোগী করে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, সম্প্রতি দেশের অন্যতম বড় হসপিটাল রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের মহাপরিচালক লিখিতভাবে জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় মাস্ক হসপিটালে নাই। যা সত্যিই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, চিকিৎসকরাই যদি নিরাপদ বোধ না করেন তাহলে তারা রোগীর চিকিৎসা করবেন কিভাবে ?

তারেক রহমান বলেন, জরুরী ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল কিটস সংগ্রহ করা এবং দ্রুততার সাথে ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে তা পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে দেশ ও জনগণকে যেকোন অবহেলায় অত্যন্ত চড়া মূল্য দিতে হবে। দেশের এই সংকটকালে তারেক রহমান করোনাভাইরাস চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত সকল ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কঠিন ত্যাগের বিষয়টি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আপনাদেরকে হয়তো আরো কঠিন ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনাদের এই ত্যাগ সারাবিশ্ব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে, করবে’।
জনাব তারেক রহমান দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে আতংকিত হয়ে অধিকমাত্রায় কেনাকাটা করে ঘরে মজুদ না করার আহবান জানিয়ে বলেন, এই বিপদের সময় কিছু কিছু মানুষের মজুদদারীর কারণে যাতে আরেকজন বঞ্চিত না হয়, এ বিষয়ে প্রত্যেকের সচেতন থাকা প্রয়োজন, অন্যের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রাখা সবার কর্তব্য।’

তারেক রহমান বলেন, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি লক্ষাধিক মানুষ। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি বন্দির বসবাস হওয়ায় কারাগারগুলোতে বিরাজ করছে অমানবিক অবস্থা। তিনি বলেন, খবর বেরিয়েছে কারাবন্দীদের মধ্যেও করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক খবর। এই অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হলেও যাচাই বাছাই করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কয়েদি বিশেষ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা বন্দি তাদেরকে কারামুক্ত করা দরকার। ইতালি, ইরানসহ অনেক দেশই নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই অনেক কয়েদিকে শর্তসাপেক্ষে মুক্ত করে দিয়েছে।

তারেক রহমান একইসঙ্গে কক্সবাজার জেলায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে যাতে করোনাভাইরাস হানা দিতে না পারে সেটি যেকোন মূল্যে নিশ্চিত করা জরুরী, অন্যথায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
প্রিয় স্বদেশের বিপদ মোকাবেলায় স্বাধীনতার ঘোষকের দল বিএনপি’র প্রতিটি নেতাকর্মীকে মানুষের কল্যাণে আবারো বিশেষ ভূমিকা পালন করার কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান একটি দায়িত্বশীল দলের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে নিজেকে এবং নিজেদের পরিবারকে নিরাপদ রাখার পাশাপাশি প্রতিবেশীর কল্যাণে বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্কদের সহায়তায় যথাসম্ভব ভূমিকা পালনের জন্যও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া কিংবা বাংলাদেশ, দেশের প্রতিটি নাগরিক যিনি যেখানেই থাকুন, সবার সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা কামনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আমরা মহান আল্লাহর রহমত কামনা করছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি শিগ্গিরই আমাদেরকে এই মহাবিপদ থেকে রক্ষা করবেন’।

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
এই কঠিন সংকটকালে আগামীর রাষ্ট্রনায়ক দেশনায়ক তারেক রহমান যে দিকনির্দেশনামুলক বক্তব্য দিয়েছেন, যে সকল প্রস্তাব দিয়েছেন, দাবী জানিয়েছেন তা কার্যকর হলে ও অনুসরণ করলে করোনা মোকাবিলা সহজসাধ্য হবে ইন্শাআল্লাহ।
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com