আওয়ামী লীগ করোনা ভাইরাসের চেয়ে ভয়ংকর: রিজভী

0

করোনা ভাইরাস নিয়ে সরকারের মন্ত্রী এমপিদের বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। করোনা প্রতিরোধে সরকারের কোনো যথাযথ পদক্ষেপ নেই মন্তব্য করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের মন্ত্রীরা এতোদিন ধরে বলে আসছিলেন, করোনা প্রতিরোধে উন্নত দেশের চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আছে বাংলাদেশে। কয়েকদিন আগে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেছিলেন, করোনা নাকি বিএনপির অপপ্রচার। গতকাল (শুক্রবার) ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘করোনা নিয়ে আতঙ্কের মতো পরিস্থিতি হয়নি, করোনার চেয়েও আমরা শক্তিশালী। এই সমস্ত কথাবার্তা বৈশ্বিক বিপদের মুখে মানুষের সঙ্গে মশকরা করার শামিল। করোনা ভাইরাসের চেয়েও ভয়ানক ভাইরাস আওয়ামী লীগ।

তিনি বলেন,’আওয়ামী ভাইরাসের কারণে গোটা দেশ, নির্বাচন ও দেশের মানুষ আজ বিপন্ন। এ কথাটিই প্রকারান্তরে ওবায়দুল কাদের বলে ফেলেছেন। সুতরাং লকডাউন বা শাটডাউন করে মহামারী করোনা সামাল দেয়া যাবে না। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে তা মোকাবিলা করতে হবে। অবিলম্বে জনগণের আশা ভরসার স্থল বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিন সেইসাথে গরীব মানুষের ঋণের কিস্তি স্থগিত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নাগালের মধ্যে রাখুন।

শনিবার (২১ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট ‘আইইডিসিআরের‘ কর্মকর্তারা বলছেন, গড়ে প্রতিদিন মাত্র ১৫-২০ জনের পরীক্ষা হচ্ছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে তিন শতাধিক মানুষে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যে ১ হাজার ৭০০ টেস্টিং কীট ছিল তার মধ্যে অনেকগুলো খরচ হয়ে গেছে এয়ারপোর্টে নাটক করতে। বাকি যে কয়টা আছে, তা দিয়ে কি এমন হবে। হটলাইনের নামে এখন চলছে আইওয়াশ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলো থেকে গত এক সপ্তাহেই প্রায় ১ লাখ মানুষ দেশে এসেছেন এবং এর সাথে তুলনা করলেও স্পষ্ট হচ্ছে যে, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা নগণ্য। ১৭ কোটি মানুষের দেশে যেখানে কয়েক লাখ ‘পিপিই’ দরকার, বেড দরকার কয়েক হাজার, আইসিইউ দরকার, অক্সিজেন দরকার-সেখানে করোনা ধেয়ে আসছে জেনেও গত আড়াই মাসে তা প্রতিরোধে কিছুই করেনি সরকার।

রিজভী বলেন,‘চীনের উহান শহরে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস এখন সারাবিশ্বে মহামারী রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশেও ক্রমশ: ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক-উদ্বেগ। গত ৮ মার্চ থেকে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইতোমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে, আর গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবে ২০। তবে মৃত্যু ও আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে অনেকে মনে করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও)-এর পক্ষ থেকে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক অতি মহামারি হিসেবে ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশ তা প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিলেও বর্তমান মিডনাইট সরকার যথাসময়ে করোনা বিপর্যয়কে গুরুত্ব দেয়নি। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। প্রায় দুই মাস সময় পেলেও সরকার এ বিষয়ে ভ্রুক্ষেপহীন থেকেছে। এই অবহেলা দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের ক্ষমাহীন উদাসীনতা ও প্রাক-প্রস্তুতিহীনতার কারণে একটা বড় ধরনের বিপদ আমাদের সামনে ধেয়ে আসছে। ভাইরাসে সংক্রামকদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্ধারণ, সংক্রামক শনাক্তকরণসহ চিকিৎসক-নার্সদের প্রয়োজনীয় পোশাক (পিপিই) ও যন্ত্রপাতি কোনো কিছুই সরকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। ঢাকার বাইরে কোনো হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত বা আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিদের থাকা-খাওয়া এবং আসবাবপত্র নেই। নেই চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় পোশাক ও ওষুধ। সেন্টারে নেই খাট, বেডসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে নিরাপত্তা পোষাকের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নশীপ ডাক্তারা। দেশের কোনো হাসপাতালই জ্বরের রোগী ভর্তি করছে না, ফিরিয়ে দিচ্ছে। আতঙ্কের বিষয় হলো- দেশের মধ্যে যাদের করোনা হয়েছে, তারা কোনো হাসপাতালে ভর্তি হলেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এমনকি জানতেও পারছেন না যে, এটা করোনা ভাইরাস, না অন্যকিছু! কারণ করোনার টেস্ট করার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে হাজার হাজার ব্লাড স্যাম্পল গেছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরে। কিন্তু তাদের কাছে কোনো টেস্টিং কিট নেই।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশ এখন করোনার ইন্টারন্যাশনাল ডাম্পিং স্টেশন। এয়ারপোর্ট এখনো খোলা। দুমাস ধরে ইটালি ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আক্রান্ত রোগীরা ফিরে সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে। সরকারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। হোম কোয়ারেন্টাইন নামেমাত্র-বেশির ভাগ লোকই আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াচ্ছে, পিকনিক করছে, হাট বাজারে ঘুরছে। অর্থাৎ তারা উৎসব করে গোটা দেশে ছড়াচ্ছে ভাইরাস। বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৩ জন। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর দিয়ে তারা এসেছেন। এসব বন্দরে তাদের স্বাস্থ্যগত স্ক্যানিং করা হয়েছে বলে আইইডিসিআর দাবি করলেও থার্মাল স্ক্যানার কম থাকায় অনেকে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই নিজ নিজ বাড়িতে গেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করলেও বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। এখন প্রবাসীদের ধরতে শুরু হয়েছে অভিযান। কথা হলো আগে থেকে পরিকল্পিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই সময়ের দাবি সকল আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল স্থগিত ঘোষণা করা। এখন লকডাউন করে কি আর থামানো যাবে?

তিনি বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলেছে, করোনা কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে। অথচ সরকার এনিয়ে কোনো পুর্ব প্রস্তুতি বা পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। কারণ জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এমন ভয়াবহ দুর্যোগময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সক্ষমতা এবং শক্তি এই সরকারের নেই। বাংলাদেশে সত্যিকারের জনগণের ভোটে নির্বাচিত বা জবাবদিহিমূলক সরকার থাকলে এসব হতো না। দেশের মানুষ বাচলো না মরলো তার নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। দেশ চুলোয় যাক। সরকারের দরকার অমল ধবল ক্ষমতা। বিএনপিই প্রথম করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তাতেও সরকারের সহ্য হয়নি। লিফলেট বিতরণকালে কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও মামলা দায়ের করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com