করোনার প্রাদুর্ভাবে সব নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি বিএনপির

0

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনসহ ৫ আসনের উপ-নির্বাচন আপাতত স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সেই সঙ্গে দেশের আদালতসমূহ ‘যতদিন প্রয়োজন’ ততদিন বন্ধের দাবি জানিয়েছে দলটি।

করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব দাবি জানান।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কে জনগণসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ইতোমধ্যে নির্বাচন বন্ধ করার দাবি এসেছে। কিছুক্ষণ আগে নির্বাচন কমিশন বলেছে যে, আগামী ২১ মার্চ যে নির্বাচনগুলো আছে তা হবেই এবং ২৯ মার্চ নির্বাচনের ব্যাপারে ২১ তারিখ সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এটাকে একেবারেই একটা একপেশে সিদ্ধান্ত মনে করি। এটা জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বিবর্জিত। জনগণের আশা, এই দুর্যোগের সময়ে কমিশন মানবিক আচরণ করবে। কিন্তু তারা (নির্বাচন কমিশন) সেটা করছেন না বরং অমানবিক আচরণ করছেন।

নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, কমিশন তাদের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করে জনগণের স্বার্থে, মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থে এই নির্বাচনগুলোকে আপাতত স্থগিত রাখবেন। পরবর্তীতে নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এমনিতে ভোটারের শতকরা হার যেটা গত নির্বাচনে দেখেছি ৮-৯ এর বেশি আসবে না। সেই ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের কারণে ভোটাররা কত শতাংশ আসবে সেটা আমরা সবাই অনুমান করতে পারি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আদালতগুলোতে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের ভিড় হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা মিথ্যা মামলায় আসামি তাদের আসতে হয়, হাজিরা দিতে হয়। প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সেখানে উপস্থিত হন। প্রায় প্রত্যেকটি আদালতেই এমন ভিড় হয়। তবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি, অন্যান্যগুলোতেও তাই। আর উপস্থিতির সংখ্যা হাজারের কম হবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি যে রিপোর্টটা পেয়েছি, বিদেশফেরত ৩০ জন বিচারক ইতোমধ্যে কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। ৩০ জন বিচারক যদি কোয়ারেন্টাইনে যান, সেক্ষেত্রে এটা পরিষ্কার- আদালতগুলোতে এই ভাইরাসের সংক্রামণ বেশি হচ্ছে। আমরা সেই কারণে আহ্বান জানাচ্ছি যে, এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে জনগণের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে, তাদের জীবনের কথা চিন্তা করে আদালতগুলো আপাতত কিছু দিন বন্ধ রাখা প্রয়োজন। আমরা আশা করব, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা দেশের কথা চিন্তা করে, জনগণণের কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেবেন।

ফখরুল বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রথম থেকেই সরকার এই করোনাভাইরাসের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। আমরা প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, এখানে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে সরকার। আমরা বলেছিলাম, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করুন। তারা বন্ধ করেনি। পরে ১৬ মার্চ তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনে সব শাটডাউন করা হবে, যা যা দরকার সব বন্ধ করা হবে। এখন তো শাটডাউন করার জায়গাটা অলরেডি তো এসে গেছে। কারণ শাটডাউন না করলে যেভাবে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে তা মহামারি আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশ এমনিতেই একটা ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এ দেশে এই ধরনের একটা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, এখন এটা বাইরের থেকে আসার দরকার হবে না, এটা দেশের অভ্যন্তরে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের দ্বারা সব জায়গায় ছড়াবে।

এ সময় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্ধারণ, সংক্রামক শনাক্তকরণসহ চিকিৎসক-নার্সদের প্রয়োজনীয় পোশাক (পিপিই) ও যন্ত্রপাতি কোনো কিছু সরকার ব্যবস্থা করতে পারেন বলে অভিযোগও করেন ফখরুল।

বিকেল সাড়ে ৫টায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সংম্মেলনে ডাকা হয়। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com