বিশ্ব সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে অর্থনৈতিক হুমকি!
পুরোবিশ্ব এখন যেন থমকে আছে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে। প্রভাবশালী দেশগুলোতে এই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। সেই প্রভাব পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতি। ধীরে ধীরে বন্ধ হচ্ছে জনসমাগম হওয়া জায়গাগুলো। তাই বিশ্ব বিনোদন জগতে এখন থমথমে অবস্থা। সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে এই প্রভাব পড়েছে প্রকটভাবে। আটকে আছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। অনেকে এরইমধ্যে গুনছেন ক্ষতির হিসেব। কারণ হল বন্ধ ও শুটিং স্থগিত। তারকাদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন, আবার অনেকে রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে।
সবকিছু মিলিয়ে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অর্থনৈতিক অবস্থা এখন হুমকির মুখে। বিশেষ করে হলিউড ও বলিউডে এই আতঙ্কে ক্ষতি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি অর্থ। বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি রুপি।
কেরেলা, জম্মু-কাশ্মির, দিল্লি, কর্নাটক ও মুম্বাইয়ে শুক্রবার থেকে বন্ধ শপিংমল, জিম ও সিনেমা হল। দিল্লিতে ১৫০টি সিনেমা হল রয়েছে, সরকারের নির্দেশে ৩১ মার্চ পর্যন্ত তা বন্ধ থাকবে। সকলেই লোকসানের মুখ দেখছেন, কারণ যদি সিনেমা হল না চলে তবুও বেতন ও ইলেক্ট্রিক বিল দিতে হবে। অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘সূর্যবংশী’। সম্প্রতি এই ছবির ট্রেলার মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এই ছবির মুক্তির দিন পিছিয়ে যায়। এই আতঙ্কের মধ্যেই মুক্তি পেয়েছে ইরফান খান, কারিনা কাপুর, রাধিকা মদন অভিনীত ‘অংরেজি মিডিয়াম’। কিন্তু সব সিনেমা হলগুলো বন্ধ থাকায় চলচ্চিত্র নির্মাতারা ছবিটি ফের মুক্তি দেওয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা করছেন। এরইমধ্যে সিনেমা হলে দর্শকদের সংখ্যা গভীরভাবে হ্রাস পেয়েছে ও যে ছবিটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা হল টাইগার শ্রফের ‘বাঘি থ্রি’। মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র পরিবেশক রাজেশ থাদানি বলেন, ‘৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে বা তারও বেশি। দিল্লি, কেরেলা ও জম্মু-কাশ্মিরেও সিনেমা হলগুলো বন্ধ পড়ে রয়েছে। বড় বড় সিনেমাগুলোর মুক্তি পিছিয়ে গেছে। ‘বাঘি থ্রি’-এর লোকসান হয়েছে ১০ শতাংশ।’ বক্স অফিস ইন্ডিয়ার মতে, মুক্তি পাওয়া ছবি মুখ থুবড়ে পড়া, বেশকিছু ছবির মুক্তি আটকে থাকা এবং বহু ছবির শুটিং বন্ধ হওয়া, সব মিলিয়ে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির ৮০০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এমন অবস্থা দেখে চিন্তার ভাজ পড়েছে নির্মাতাদের কপালে। কতদিন এ রকম পরিস্থিতি থাকবে, তা নিয়ে চিন্তায় পুরো বলিউড।
করোনা আতঙ্কে আগেই বন্ধ হয়েছে জেমস বন্ড সিরিজের নতুন সিনেমা ‘নো টাইম টু ডাই’-এর মুক্তি। ৭ মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে মুক্তির তারিখ। ‘নো টাইম টু ডাই’ সিনেমাটির মুক্তি ২০২০ সালের এপ্রিলের পরিবর্তে নভেম্বরে পিছিয়ে নেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সিনেমা বাজারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়। জেমস বন্ড সিরিজের মূল মুনাফা আসে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে। করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে এপ্রিলে ‘নো টাইম টু ডাই’ মুক্তি দেওয়া নিয়ে এরইমধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।
গত সপ্তাহে প্যারামাউন্ট পিকচার্স মিশন ইমপসিবল সিরিজের সপ্তম সিনেমার নির্মাণ আটকে দেয়। এর চিত্রায়ণের কথা ছিল ইতালির ভেনিসে। সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি চীনে ‘সনিক দ্য হেজহগ’ মুক্তি দেওয়া স্থগিত করেছে।
পুরোবিশ্বের মতো করোনার এই প্রভাব পড়েছে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেও। সম্প্রতি ঘোষণা দেওয়া হয় দেশের সব সিনেমা হলগুলো বন্ধ থাকবে। আজ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সিনেমা হলগুলো বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দেশের সব সিনেমা হল বন্ধের ঘোষণা দেয় প্রদর্শক সমিতি ও প্রযোজক সমিতি।
হল মালিক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদের বলেন, ‘করোনার কারণে হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিনেমা হলে দর্শকরা যাচ্ছে না। বিশেষ করে সিনেপ্লেক্সগুলোতে জনসমাগম বেশি হয়। এছাড়া অন্যান্য হল ফাঁকাই থাকে। তারপরও করোনা আতঙ্কে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘করোনা থেকে বাঁচতে আমাদের সচেতনতা সবার আগে প্রয়োজন। সেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো এই সময় সিনেমা হলও বন্ধ রাখা প্রয়োজন। জনসমাগম যেখানেই হবে সেটাই বন্ধ করা উচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরইমধ্যে সিনেমা হল বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের হলগুলোও আপাতত বন্ধ হচ্ছে।’ করোনা আতঙ্কের শুরুতেই মুক্তি পায় শাকিব খানের ‘শাহেনশাহ’ সিনেমাটি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সিনেমাটি মুক্তির পরপর ব্যবসায়িক সঙ্কটে পড়ে সিনেমাটি। সিনেমা বন্ধের ঘোষণা সম্প্রতি দেওয়া হলেও বিশ্বব্যাপী এই আতঙ্ক ছড়িয়ে যাওয়ার প্রভাব শুরু থেকেই পড়েছে দেশের সিনেমা হলগুলোতে।