ফেব্রুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৩৪
ফেব্রুয়ারি মাসে সড়কে ৫০৪টি দুর্ঘটনায় ৫৩৪জন নিহত ও ১১৬৯জন আহত হয়েছেন। একই সময় রেলপথে ৫৬টি দুর্ঘটনায় ৪৮জন নিহত, ১৩জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৯টি দুর্ঘটনায় ৪০জন নিহত, ৫৬জন আহত এবং ৬৪জন নিখোঁজ হয়েছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সোমবার (২ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২১২জন পথচারী, ১৩৪জন চালক, ৭৩জন পরিবহন শ্রমিক, ২৬০জন শিক্ষার্থী, ১৩জন শিক্ষক, ২জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৮৮জন নারী, ৭৬জন শিশু, ১জন সাংবাদিক, ১জন প্রকৌশলী, ২জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৬জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৯৯জন চালক, ১৮৭জন পথচারী, ৬২জন নারী, ৭১জন ছাত্র-ছাত্রী, ৪৫জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৪জন শিশু, ১৩জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ২জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১১জন শিক্ষক, ১জন প্রকৌশলী।
মোট সংগঠিত দুর্ঘটনার ১৫.৭৫ শতাংশ বাস, ২৭.৯৩ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৪.৩০ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৮.১৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ২০.৯৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১০.৫৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ১২.৩৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
এছাড়া মোট দুর্ঘটনার ৫৭.৫৩ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৮.০৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬.৬৭ শতাংশ খাদে পড়ে, ৫.৯৫ শতাংশ অন্যান্য কারণে, ০.৫৯ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ১.৩৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তবে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের হার ২.৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও সড়কে দুর্ঘটনা ৫.৩৫ শতাংশ ও নিহত ২.৪৩ শতাংশ কমেছে।
পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা ১.০৪ শতাংশ, পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা ১.৬৩ শতাংশ এবং বেপরোয়া গতির কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ০.০২ শতাংশ কম সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই মাসে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪৫.০৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৬.১৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৩.০২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩.১৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.১৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১.৩৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় বিগত ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নের ফলে যানবাহনের গতি বাড়ার কারণে আঞ্চলিক মহাসড়কে ৩.৪৩ শতাংশ ও ফিডার রোডে ১.৭৪ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও জাতীয় মহাসড়কে ২.৮১ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে।
এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। এদিনে ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭জন নিহত ৪০জন আহত হন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি এদিনে ৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ৫ জন আহত হন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে-
১। বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালানো। ২। বিপদজনক ওভারটেকিং। ৩। রাস্তা-ঘাটের ক্রটি। ৪। ফিটনেস বিহীন যানবাহন। ৫। যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা। ৬। চালকের অদক্ষতা। ৭। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার। ৮। মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো। ৯। রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা। ১০। রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা । ১১। ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ। ১২। ছোট যানবাহন বৃদ্ধি।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-
১। সি সি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা।
২। টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র সমূহে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা।
৩। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করা।
৪। দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অঙ্কন করা।
৫। গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৬। যাত্রী,পথচারী ও গণপরিবহনবান্ধব সড়ক পরিবহন বিধিমালা জরুরী ভিত্তিতে প্রনয়ন।
৭। গাড়ীর ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।
৮। সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনপূর্বক হতাহতদের চিকিৎসা ও পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
৯। দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেয়া ।
১০। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমী গড়ে তোলা।
১১। গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সকল মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকসহ জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিমাসে একদিন গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।
১২। সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।