অহিংস-সহিংস আলোচনা নয়, রাস্তায় নামতে হবে: দুদু
অহিংস ও সহিংস রাজনীতি নিয়ে এখন আলোচনা করার সময় নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহবায়ক শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, অহিংস ও সহিংস নিয়ে আলোচনা না। এখন রাস্তায় নামতে হবে। আন্দোলন করতে হবে। তখনই বুঝা যাবে আন্দোলন কোথায় যাবে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খা হলে জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, রাষ্ট্র এখন স্বৈরতন্ত্রের কবলে। এখন সমাজ পরিবর্তন হয়েছে। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। আমরা জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধু, মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সম্বন্ধে তরুণ বয়সে আমাদের আগ্রহ ছিল। তাদেরকে নিয়ে আমরা ঘাটাঘাটি করেছি। বর্তমানে যুবসমাজ শ্রমিক-কৃষক সমাজ তাদের ব্যাপারে কতটুকু সময় দিচ্ছে। তারা মোবাইলে সময় দিচ্ছে, এই বিষয়গুলো এখন ভাবতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের বন্ধু মারা গেলে রাস্তায় নামে বিচারের দাবিতে। ছাত্ররা চাকরির কোটার ব্যাপারে আগ্রহী। আমাদের এই সমাজে একটি ছেলে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পাওয়ার পরও, চাকরি পাবে কিনা এ বিষয়ে সে উদ্বিগ্ন। কৃষকরা তার ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে কিনা এটা নিয়ে তারা চিন্তিত। এসব বিষয়ে তারা আন্দোলন করছে। রাজপথে নামছে। তরুণ নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার ও আন্দোলন করতে হবে। শেখ হাসিনার মত ভয়ঙ্কর, স্বৈরতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদ,আগ্রাসী সরকার এর আগে কখনো এই দেশে আসেনি। এর মধ্য থেকেই আমাদের কাজ করতে হবে।
রাজনৈতিকভাবে সরকার প্রতিবাদ করার সুযোগ দিচ্ছে না উল্লেখ করে বিএনপির এ নীতিনির্ধারক বলেন, যে জাতি স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লক্ষ প্রাণ দিতে পারে। সে দেশের পার্লামেন্টে বিরোধী দলের উপনেতা পুলিশের আচরণ করতে পারে না। এই রাষ্ট্রটা কেমন ? এ রাষ্ট্র ভয়ঙ্কর। আমরা যেটা দেখছি। শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ এই সব সরকারের আমলে প্রতিবাদ করার সুযোগ ছিল। এমনকি সামরিক সরকারের আমলেও ন্যূনতম প্রতিবাদ করার সুযোগ ছিল। রাস্তায় দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল।
আমি আশাবাদী এর পরবর্তী সরকার হবে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ বিরোধীরাই সরকার গঠন করবে- বলেন শামসুজ্জামান দুদু।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জেল খাটছেন দেশের জন্য, জাতির জন্য,গণতন্ত্রের জন্য। আমরা তার জন্য অহংকার করি।
তিনি বলেন, আজকে আমরা কয়জন মওদুদ আহমেদের বই পড়েছি। একুশে বইমেলার কয়টি বই পড়েছি ? সারাক্ষণ মোবাইলে মুখ গুঁজে রাখলে একটি জাতি একটি রাষ্ট্রের কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হয় আমরা ঠিক সে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। এখান থেকে বেরিয়ে আসাই আমাদের আন্দোলন। খালেদা জিয়া জেলে আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারপার্সন লন্ডনে। বাস্তবতা হচ্ছে তারেক রহমানের দেশে আসার কোন সুযোগ আছে কিনা।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নেতার নির্দেশে আমাদের কাজ করতে হবে। অহিংস থেকেই সহিংসতায় যায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কি অহিংস আন্দোলন ছিল? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন কি অহিংস ছিলো? অহিংস ও সহিংস নিয়ে আলোচনা না। এখন রাস্তায় নামতে হবে। আন্দোলন করতে হবে। তখনই বুঝা যাবে আন্দোলন কোথায় যাবে। ৫০ লক্ষ মানুষ ঢাকা শহরে আনতে পাড়লে সবকিছুই আপনার পক্ষে থাকবে। তখন সরকার ও আপনাকেও গুনবে। ঘরের মধ্যে কথা বললে হবে না, কে বলছে? ঘরের মধ্য থেকে কথা বলেই তো আমরা বাইরে যাব।
২৪ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টা, এক মাসের মধ্যে এই সরকারের পতন হবে এমনটা নয়। তবে এই সরকার থাকবে না। শেখ মুজিবুর এখন নাই, শেখ হাসিনা থাকবে না। অদূর ভবিষ্যতে আমরাও থাকব না ঠিক এমন এভাবে, সময়ের বিবর্তনের ধারণায় অনেক কিছু পরিবর্তন হবে। সেই পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি হচ্ছে এদেশের জনগণ। সেই জনগণকে আমাদেরকে সুসংগঠিত করতে হবে। অপকর্মের হাত থেকে আমরা রক্ষা পাবো বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি করতে পারবো।
সংগঠনের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা জয়নাল আবেদীন ফারুক, কৃষক দলের সদস্য লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনসহ অনেকে।