দিল্লিতে বেছে বেছে মুসলিমদের ওপর হামলা: মার্কিন কমিশন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফরে থাকাকালীন দিল্লিতে মুসলিমদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনা নিয়ে ট্রাম্প কোনো মন্তব্য না করলেও দিল্লির গোটা পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)।
মার্কিন কমিশনের অভিযোগ, দিল্লিতে বেছে বেছে মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। অথচ সব দেখেশুনেও নীরব সরকার। নৃশংস এবং লাগামছাড়া সহিংসতা প্রতিহত করে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ভারত সরকার।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, বুধবার ইউএসসিআইআরএফ-এর ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর শেষ হতেই প্রাণঘাতী সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। বেছে বেছে মুসলিমদের ওপর উন্মত্ত জনতা হামলা চালাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি আমরা। তাতে এখনো পর্যন্ত ২০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২০০ জন।’
তারা আরও জানায়, ‘বেশ কিছু মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে বলেও জানতে পেরেছি আমরা। এমন পরিস্থিতিতে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন বহু মুসলিম। গত বছর ডিসেম্বর থেকে দেশ জুড়ে সিএএ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীনই এই অশান্তি দানা বেঁধেছে।’
তবে মার্কিন কমিশনটির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুখপাত্র রবীশ কুমার টুইটারে বলেন, ‘ইউএসসিআইআরএফ-র অভিযোগ একেবারেই সঠিক নয়, বরং বিভ্রান্তিমূলক। বরং মনে হচ্ছে, বিষয়টির রাজনীতিকরণই ওদের উদ্দেশ্য।
তিনি দাবি করেন, সহিংসতা রুখে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা বাহিনীগুলো। সরকারের শীর্ষ স্তরের প্রতিনিধিরা বিষয়টি তদারকি করছেন।
রবীশ কুমার বলেন, এমন সংবেদনশীল সময়ে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো মন্তব্য না করতে অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফর চলাকালীনই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষে তেতে ওঠে রাজধানী দিল্লি। এলোপাতাড়ি ইট ও গুলিবৃষ্টিতে গত পাঁচ দিনে সেখানে মৃত্যুসংখ্যা ৩০ ছাড়িয়েছে।
কয়েক দশকের মধ্যে দিল্লির নজিরবিহীন এই সাম্প্রদায়িক হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত দুই শতাধিক। আহতদের মধ্যে প্রায় ৭০ জন গুলিবিদ্ধ।
দিল্লির সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
বুধবার রাতে নতুন করে নিহতের খবর না এলেও উত্তর-পূর্ব দিল্লি থমথমে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ‘হিন্দুয়োঁ কা হিন্দুস্তান’, ‘জয় শ্রীরাম’- এসব স্লোগান দিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মসজিদে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
বিবিসি বাংলা জানায়, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে দেখা যায়। কোথাও আবার নিজ হাতে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙেছে পুলিশ।