বৃহত্তম গণতন্ত্রে দাঙ্গাতন্ত্র: দিল্লির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ সেনাবাহিনীর
বুধবার ২০ জনের প্রাণ সংহারকারী হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যকার লড়াইয়ের পর ভারতের রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় দাঙ্গা পুলিশ টহল দিচ্ছে, নগরের নেতা কারফিউ জারির আহ্বান জানিয়েছেন।
দুই দিনের অস্থিরতা (এতে তরবারি ও বন্দুক হাতে দাঙ্গাবাজেরা সঙ্ঘাতে মেতেছিল) হলো কয়েক দশকের মধ্যে দিল্লিতে সবচেয়ে খারাপ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। নাগরিকত্ব আইন (যেটাকে সমালোচকেরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার অংশ) নিয়ে ধর্মীয় উত্তেজনা বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে এই সঙ্ঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বুধবার রাজ্যের উত্তর দিকের জেলাগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করার আহ্বান জানিয়েছেন। কেজরিওয়াল বুধবার সকালে টুইট করেন, পুলিশ সবরকম চেষ্টা করার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি, আত্মবিশ্বাস ফেরাতে পারেনি।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী তলব ও কারফিউ জারি করা উচিত। সোমবার নাগরিকত্ব আইনের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সঙ্ঘাতের সূচনা হয়। তারপর তা দাঙ্গাবাজদের মধ্যকার যুদ্ধে রূপ নেয়।
সহিংসতার প্রথম দুই দিনে ২০ জন মারা গেছে, আরো প্রায় ২০০ লোক আহত হয়েছে। এ তথ্য এএফপিকে দিয়েছেন যে হাসপাতালে লোকজনকে নেয়া হচ্ছে, তার পরিচালক। ৬০ জন গুলিতে আহত হয়েছেন বলে পরিচালক সুনীল কুমার জানিয়েছেন।
এলাকাটিতে বাস করে অর্থনৈতিকভাবে অপেক্ষাকৃত গরিব লোকজন। আরো বেশি সঙ্ঘর্ষ হতে পারে- এমন আশঙ্কায় বুধবার তাদের অনেকে সেখান থেকে পালিয়ে গেছে।
জাফরাবাদ এলাকার এক দর্জি এএফপিকে বলেন লোকজন একে অপরকে হত্যা করছে। এখানে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন যে তিনি উত্তর প্রদেশ রাজ্যে তার গ্রামের বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, এখানে কোনো কাজ নেই। এখানে পড়ে থাকার চেয়ে সরে যাওয়াই ভালো। আমরা কেন এখানে এসে মরব?
বুধবার সকালের দিকে এএফপির প্রতিনিধি দেখতে পায়, অশোক নগরে সহিংসতায় দগ্ধ একটি মসজিদ পরিষ্কার করা হচ্ছে।
সামাজিক মিডিয়ায় প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায় (এএফপির সত্যায়িত), কয়েকজন লোক ওই মসজিদের মিনারে থাকা আজান দেয়ার লাউড স্পিকারগুলো খুলে ফেলছে এবং হিন্দু ধর্মীয় একটি পতাকা ও ভারতীয় পতাকা উড়াচ্ছে।
নতুন নাগরিকত্ব আইন বিদেশে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে এ কারণে যে এটি সেক্যুলার ভারতকে হিন্দু ভারত হিসেবে গড়তে চায়, এতে করে দেশটির ২০ কোটি মুসলিম কোণঠাসা হয়ে পড়বে। মোদি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভারতের তিন প্রতিবেশী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত অমুসিলমদের জন্য এই আইনে নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মুসলিমরা এই সুযোগ পাবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় এই সহিংসতার সৃষ্ট হলো। মঙ্গলবার দিল্লিতে তিনি যখন মোদির সাথে কথা বলছিলেন, তখনো দাঙ্গা চলছিল।
তবে ট্রাম্প তার সূচি অনুযায়ী চলে যান এবং তার সহিংসতায় তার সফরে দৃশ্যমান কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।