শান্তির পয়গাম নিয়ে হজের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে লন্ডন থেকে মক্কা
ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিশ্বকে এই বার্তাই দিতে চাইছেন ৪০ বছর বয়সি ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ ফেয়াদি। তাই তো কোনও কিছুর পরোয়া না করে মহান আল্লাহর নাম ও শান্তির পয়গাম নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েছেন জীবনের সেরা সফরে। হাজার হাজার মাইল পথ তিনি হেঁটেই চলেছেন। এজন্য এতটুকু কষ্ট হচ্ছে না তার।
লন্ডন থেকে পায়ে হেঁটে মক্কা পৌঁছনোর স্বপ্ন আজও জ্বলজ্বল করছে তার দুই চোখে। এই মানুষটির দিকে তাকালেই বোঝা যায় তার সহনশক্তি কতটা, মহান আল্লাহর প্রতি ফরিদের শ্রদ্ধা ও আত্মনিবেদন নজর কাড়ছে বিশ্ববাসীর। আপাতত তিনি পৌঁছে গেছেন তুরস্কে। সফর এখনও ঢের বাকি। ইস্তান্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।
তিনি তার এই সফরের নাম দিয়েছেন ‘ওয়াক ফর পিস।’ এর মাধ্যমে বিশ্বের যুবসম্প্রদায়কে তিনি অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন, প্রমাণ করছেন ইসলাম শুধুই শান্তির ধর্ম।
ফরিদের কথায়, ‘মুসলিম হিসেবে, আমি বিশ্বাস করি আমরা সকলেই আল্লাহর বান্দা, আমাদের কাঁধে এক বিরাট দায়িত্ব রয়েছে বিশ্বের কাছে ইসলামের শান্তির বার্তা তুলে ধরার। তাই আমি একটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে চেষ্টা করছি, দেখানোর চেষ্টা করছি যে, ইসলাম এক শান্তির ঢেউ যা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী।
পায়ে হেঁটে ব্রিটেনের ম্যাঞ্চেস্টারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি ভেবেছিলেন এই যাত্রা করবেন সাইকেলে, পরবর্তীতে তিনি চিন্তা করেন এভাবে তো অনেকেই সফর করেছেন। তাই তিনি ঠিক করেন হেঁটেই পৌঁছবেন তার গন্তব্যে।
ফরিদ বলেন, ‘যদি অন্য আরও অনেকে করতে পারে, আমি কেন পারব না? তাই আমি ঠিক করি হাঁটব। বন্ধুদের এ কথা জানালে প্রথমে তারা আমাকে বিশ্বাস করতে পারেনি।’
আরও জানান, আমি এই যাত্রা শুরু করেছিলাম নভেম্বরের ৩ তারিখ, ২০১৯ সালে। এর আগে এমন অভিজ্ঞতা আমার হয়নি, আমি ভালো হোটেলে থেকেছি ও ফ্লাইটে ভ্রমণ করেছি।’
লন্ডন থেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে পাঁচ দিন পর তিনি পৌঁছেছিলেন ডোভারে। সেখান থেকে ফ্রান্সের কালাইস পর্যন্ত ফেরি নিতে হয়েছিল তাঁকে। সেখান থেকে তুরস্কের ইস্তান্বুলে পৌঁছতে ফরিদের আরও আড়াই মাস সময় লেগে যায়। এর মাঝে অনেক রাত-দিন ভালো-মন্দ নিয়েই কেটেছে। কখনও তাকে শহর থেকে দূরে নির্জন এলাকায় তাঁবু খাটিয়ে থাকতে হয়েছে।
ফরিদের কথায়, ‘অনেক ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়েছে, শহর থেকে দূরের এলাকায় ক্যাম্প করে থাকতে হয়েছে, আমার ভয় লাগত, তবে পরে আমি শহুরে এলাকাতেই রাত কাটাতাম।’
হাজার হাজার মাইল পথ হেঁটে এখন পর্যন্ত তাকে চার জোড়া জুতো পালটাতে হয়েছে। অমানসিক পরিশ্রমের জন্য তাকে কখনও ভিটামিন বা ওষুধও খেতে হয়েছে।
তবে যখনই তার কষ্ট হয়েছে, তিনি মনে মনে ভেবেছেন পবিত্র হজের কথা, নিমেষেই সব কষ্ট উধাও হয়েছে তখন। ফরিদের ইচ্ছা জুলাই মাসে সৌদি পৌঁছে লক্ষ লক্ষ মানুষের সঙ্গে তিনি অংশ নেবেন পবিত্র হজে।
ফরিদ বলছেন, ‘এখনো পর্যন্ত আমি ৪ হাজার কিলোমিটার পথ হেঁটে ইস্তান্বুলে এসেছি। এখনও ২,৭০০ কিমি বাকি।’