ভারতের পথে ট্রাম্প, বাণিজ্যচুক্তি দৃশ্যত অধরাই থেকে যাবে
ভারতে প্রথম সরকারি সফরের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন অনেক নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী আশা করেছিলেন যে এতে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বাণিজ্যচুক্তিটি থাকবে।
অনেক বিশেষজ্ঞ আশা করেছিলেন যে ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারির এই সফরের জন্য হলেও অন্তত একটি সমঝোতা হবে। এই সফরের সবচেয়ে বাস্তব সাফল্য হতে পারে একটি বিশাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেখার জন্য বিপুলসংখ্যক লোকের সমাবেশ এবং ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার সম্পর্কের হলমার্ক হওয়া ব্যাপক মধুর বাক্যবিনিময়।
আলোচকেরা একটি বাণিজ্যচুক্তি করার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করছিলেন। চুক্তিটি হয়ে গেলে ভারতের দুগ্ধ ও কৃষি বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার পাওয়া যেত এবং বাদাম, চিকপি ও মোটরসাইকেলের মতো মার্কিণ পণ্যসম্ভারের ওপর ভারতীয় শুল্ক হ্রাস পেত।
কিন্তু সফরের সময় যত ঘনিয়ে এসেছে, চুক্তির সম্ভাবনা তত ফিকে হয়ে এসেছে, বিশেষ করে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটিজার চলতি মাসের প্রথম দিকে তার সফর বাতিল করার পর।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (সিএফআর)-এর ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো আলিসা আইরেস বলেন, তারা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে শেষ করবেন, জানি না। চুক্তির মতো কিছু হবে বলে মনে হয় না।
ট্রাম্পও দৃশ্যত কোনো বাণিজ্যচুক্তি না হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা ভারতের সাথে চুক্তি করতে পারি। তবে আসলে পরে বড় চুক্তির জন্য সেটি রেখে দিচ্ছি।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল জানিয়েছে, ট্রাম্পের সফরের আগে কোনো বাণিজ্য প্যাকেজন না থাকায় তারা হতাশ।
তিনি বলেন, বাণিজ্যবিষয়ক পদক্ষেপই কোনো প্রেসিডেন্টের সফরের প্রভাবক হওয়ায় আমরা আশা করেছিলাম যে সফরে উভয় দেশ তাদের অভিন্ন অবস্থান খুঁজে পাবে এবং চুক্তিতে উপনীত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই সম্ভবত তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলোর দিকেই নজর দিয়েছে। বাণিজ্য চুক্তি না হতে পারার ফলে উভয় দেশের শিল্প ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি নেতিবাচক ইঙ্গিত দেবে।
ইটের বদলে পাটকেল
যুক্তরাষ্ট্র হলো চীনের পর ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও পরিষেবাবিষয়ক বাণিজ্য হয় রেকর্ড ১৪২.৬ বিলিয়ন ডলারের। মার্কিন সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালের ১১.২ বিলিয়ন ডলার থেকে তা এই পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। অবশ্য ২০১৪ সালে তা সর্বোচ্চ ছিল ৩১ বিলিয়ন ডলারে।
ব্যবধানটি ভারতের অনুকূলে বাড়ার ফলে শুল্ক, মেধাসত্ত্ব আইন, কৃষিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
আগের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের আমলেও ভারতের সাথে বাণিজ্যচুক্তি ছিল একটি বিরোধপূর্ণ বিষয়। সিএফআরের আইরেস বলেন, তবে ট্রাম্পের আমলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে থাকে। ভারতের বিভিন্ন পদক্ষেপে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
এর প্রতিশোধ নিতে ২০১৮ সালে ভারতীয় অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিল আমদানির ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবে ভারতও বাদাম, চিকপি, আপেলের মতো মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে। তবে তা বাস্তবায়ন করে না। কিন্তু ভারতকে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধাপ্রাপ্ত (জিএসপি) দেশ থেকে নাম কেটে দিলে ভারত প্রতিশোধ নিতে ওইসব পণ্যের ওপর শুল্ক প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে।
নমস্তে ট্রাম্প
তবে দুই দেশের মধ্যে কিছু অগ্রগতিও হয়েছে। এর একটি হলো প্রতিরক্ষা। চলতি মাসের প্রথম দিকে জানা গেছে যে মার্কিন সামরিক হেলিকপ্টার কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করবে ভারত।
বাণিজ্য ছাড়াও ট্রাম্পের সাথে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন মোদি। ট্রাম্পের সফর শুরু হবে মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের আহমদাবাদ দিয়ে। এখানে তিনি একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করবেন। বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ভারতে আমাদের সাথে খুব একটা ভালো আচরণ করা হয় না। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদির মতো লোকদের আমি অনেক পছন্দ করি। আর তিনি আমাকে বলেছেন যে বিমানবন্দর ও ইভেন্টের মধ্যে ৭০ লাখ লোক থাকবে।… খুবই রোমাঞ্চকর বিষয হতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানটির নাম দেয়া হয়েছে ‘নমস্তে ট্রাম্প।’ হিন্দিতে শুভেচ্ছা জানাতে ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে সাধারণভাবে নমস্তে শব্দই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেসব ভারতীয় কোম্পানি ব্যবসা করে, তাদের কাছে ওগুলো অপ্রয়োজনীয় বিষয়। এমনটাই মনে করেন ইকোনমিক লস প্রাকটিসের অংশীদার সঞ্জয় নতানি। তার অনেক ক্লায়েন্ট উভয় পক্ষেই রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু নমস্তে ট্রাম্প আর ওই স্টেডিয়ামে এক লাখ লোক জড়ো করার প্রতিশ্রুতি ছাড়া আমরা আর কিছুই পাচ্ছি না।