আফগান চুক্তিতে পাকিস্তানের লাভ, ভারতের ক্ষতি

0

আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে যেতে তালেবানের সাথে যেভাবে চুক্তি করছে যুক্তরাষ্ট্র, তাতে করে পাকিস্তান বিপুলভাবে লাভবান হতে যাচ্ছে। আর মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়তে পারে ভারত।

ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে শান্তিচুক্তি করার দিকে যাচ্ছে, তা অস্বস্তিদায়ক। দিল্লি আরো বেশি খামোশ হয়ে পড়েছে। ক্রুদ্ধদের কেউ কেউ মনে করছে যে ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টে থাকা বিদেশী দালাল উপাদানগুলো নীরবে মার্কিন প্রজেক্টের সাথে সহযোগিতা করছে, যা আসন্ন নমস্তে ট্রাম্প অনুষ্ঠানে ছায়া ফেলছে।
ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা ‘ডিপ স্টেট’ কেউই মনে হয় বুঝতে পারছে না যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভূরাজনীতি সুদূর প্রসারী পরিণতি নিয়ে বদলে যাচ্ছে।
ঘটনাগুলো ঘটছে প্রবল বেগে, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানি ক্যাম্পাসের মাধ্যমে। পাকিস্তানের সহায়তায় ট্রাম্প প্রশাসন প্রায়-কাঙ্ক্ষিত চুক্তি নিশ্চিত করেছে।
চুক্তিটিতে আগামী মাসে আলোচনা শুরু করার জন্য আফগানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া দেশব্যাপী যুদ্ধবিরতির কথাও বলা হয়েছে। তাছাড়া সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে আশ্রয় না দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে আফগানদের পক্ষ থেকে।

সিনিয়র এক মার্কিন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, চুক্তিতে সাত দিন ‘সহিংসতা হ্রাস খুবই সুনির্দিষ্টভাবে’ বলা হয়েছে এবং তা আফগান সরকার এবং আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে তালেবানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তাদেরকে রাস্তার পাশ থেকে আক্রমণ, আত্মঘাতী হামলা ও রকেট হামলা হ্রাস করতে হবে।
সহিংসতা হ্রাস এখনই শুরু হচ্ছে, তবে চুক্তিটি সই হতে পারে ২৯ ফেব্রুয়ারি। এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইও। এতে বোঝা যাচ্ছে, তালেবানের প্রতি ওয়াশিংটনের আস্থা বাড়ছে।
পম্পেইওর এই ঘোষণা আসে তালেবানের উপপ্রধান (হাক্কানি নেটওয়ার্কের ভয়াবহ নেতা) সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ওয়াশিংটন এস্টাবলিশমেন্টের ফ্লাগ ক্যারিয়ার নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতামত কলামে অবাক করা লেখা প্রকাশের সাথে সাথেই। সিরাজুদ্দিন ঘোষণা করেন যে তার যোদ্ধারা সহিংসতা হ্রাসের প্রতি পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসলামাবাদ চায় মাঠের অবস্থা প্রদর্শন করতে ‘সহিংসতা হ্রাসের’ বিষয়টি প্রদর্শন করতে। আর সিরাজুদ্দিনের লেখায় এটাও ফুটে ওঠেছে যে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত সংগঠনটি এখন রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। অবশ্য বেশির ভাগ বিদ্রোহের সমাপ্তি এভাবেই ঘটে।

ওয়াশিংটন ভালোভাবেই জানে যে হাক্কানি গ্রুপই আফগানিস্তানে ভারতীয় কূটনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টের ওপর হামলার জন্য দায়ী। কিন্তু আজ মার্কিনিদের নিজ স্বার্থ রক্ষা প্রয়োজন মেটানোর জন্য আফগান রাজনৈতিক জীবনের মূলধারায় সিরাজুদ্দিনের অভিষিক্তকরণ এবং জাতীয় কার্যত নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াটা দরকার। কারণ তিনিই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
আর পাকিস্তানের এই আশ্বাস দরকার যে কাবুল সরকারে সিরাজুদ্দিনের কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে এবং ভারতীয়দের সাথে গোপন আঁতাত হবে না।

অন্যদিকে সমান্তরাল গতিতে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানিকে স্বমতে আনার ব্যবস্থা করেছে ওয়াশিংটন। গনিকে কিভাবে স্বমতে আনা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে তাকে এমন কিছু দেয়া হয়েছে যা তিনি প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি। সম্ভবত গত বছর আফগানিস্তানে যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে, সেটির প্রতি মার্কিন সমর্থন দিয়েই কাজটি করা হচ্ছে। অবশ্য তার বিরোধী প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ প্রত্যাশামতোই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সন্তান্তরাল সরকার গঠনের হুমকি দিয়েছেন।
তবে সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এই নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার সমালোচনা করে বলেছেন, এটি ছিল কার্যত বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়ন। তবে জাতিসঙ্ঘ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও সময় ক্ষেপণ না করে নির্বাচনকে বৈধতা দিয়ে দিয়েছে।

তবে কারজাই বা গানির বিরোধিতাকারীরা যতই ক্ষোভ প্রদর্শন করুন না কেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন মনে করছে, তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।
বস্তুত, আফগানিস্তানকে স্থিতিশীল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন পশতু কার্ড খেলছে। তারা দেশটিতে আবার পশতু প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। দেশটিতে এমনটা হওয়াই বাস্তবতা।
অবশ্য পশতুদের একটি অংশ এবং তাজিক, হাজারা ও উজবেক জাতীয়তাবাদীরা মনে করছে যে তাদের কোণঠাসা করা হচ্ছে ও ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। তারা তাদের ভবিষ্যত দেশকে একটি আধুনিক, উদার, বহুত্ববাদী ও সত্যিকারের স্বাধীন দেশ হিসেবে দেখতে চেয়েছিল।

তারা উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে মার্কিন-সমর্থনপুষ্ট চুক্তি শেষ পর্যন্ত কাবুলে পাকিস্তানকেই বসাবে চালকের আসনে। তালেবানের সাথে একীভূত হতে তাদের কোনোই আপত্তি নেই। তবে তারা তা চায় আন্তঃআফগান সংলাপের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। একটি অন্তর্বর্তী সরকার এই উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে ভালোভাবেই।
এই প্রেক্ষাপটেই জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতারেস সম্প্রতি চার দিনের সফরে গিয়েছিলেন পাকিস্তান। ওয়াশিংটন চাচ্ছে, আফগানিস্তানের পরিবর্তনের বিষয়টি জাতিসঙ্ঘের তদারকিতে হোক।
আফগানিস্তানে সুদূরপ্রসারী জাতিসঙ্ঘ মিশনের সফলতার স্বার্থে পাকিস্তানের শুভেচ্ছা ও সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার প্রদান করার জন্য গুতারেজকে উৎসাহিত করছে ওয়াশিংটন। কাশ্মির ও মোদি সরকারের মুসলিমবিরোধ নীতির তীব্র সমালোচনা (গত সপ্তাহে পাকিস্তান সফরের সময় করা মন্তব্যে) এই প্রেক্ষাপটেই হয়েছে।

তিনি চটুলভাবে কথা বলেননি। তার তীব্র সমালোচনামূলক মন্তব্যের লক্ষ্য ছিল দিল্লিকে রক্ষণাত্মক অবস্থানে ঠেলে দেয়া। গুতারেজ সম্ভবত ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আফগানিস্তানে ‘লুণ্ঠনকারী’ হিসেবে টিকে থাকতে পারবে না ভারত। আর যাই হোক না কেন, কাচের বাড়ি থেকে আপনি পাথর নিক্ষেপ করতে পারেন না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com