ইদলিব নিয়ে যেকোনো সময় সিরিয়া-তুরস্ক যুদ্ধ!

0

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে অবিলম্বে নতুন করে আক্রমণ চালানোর হুমকি দিয়েছেন।
এরদোগান ইদলিবে হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছেন ইতোমধ্যেই। তিনি বলছেন, অভিযান এখন ‘সময়ের ব্যাপার মাত্র।’

কিন্তু এর পেছনে কী হিসেব-নিকেশ কাজ করছে?

ইদলিব কার নিয়ন্ত্রণে?
সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশ হচ্ছে এখন বাশার আসাদ বিরোধী বিদ্রোহীদের সর্বশেষ ঘাঁটি। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে আল-কায়েদা সমর্থক গোষ্ঠী যেমন আছে, তেমনি আছে তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহী, কিছু কুর্দি বাহিনীও আছে।

অন্যদিকে রাশিয়া ও ইরানের সাহায্য নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ সরকারের সেনাবাহিনী এখন সিরিয়ার প্রায় সব ভূখন্ড বিদ্রোহীদের হাত থেকে মুক্ত করে ফেলেছে। বাকি আছে শুধু এই ইদলিব। বাশার আসাদের সংকল্প হলো, তিনি ইদলিব দখল করে পুরো সিরিয়াকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করবেন।

এ কারণেই তিনি ডিসেম্বর থেকে ইদলিবে এক অভিযান শুরু করেছেন – যাতে ইতিমধ্যেই শত শত লোক নিহত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তাতে এখনো কোন কাজ হয়নি।

এরদোগান কী চান
এরদোগান চান ইদলিব প্রদেশের সীমান্ত-সংলগ্ন অঞ্চলগুলোকে নিরাপদ এলাকায় পরিণত করতে।

কারণ হলো, সিরিয়ার দশ বছরব্যাপি যুদ্ধের কারণে এত বিপুল সংখ্যক লোক পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে যে তুরস্ক এখন বলছে, তাদের আর নতুন অভিবাসী আশ্রয় দেবার জায়গা নেই।

তারা চায়, সিরিয়ায় যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত লোকেরা যেন তুরস্কে না ঢুকে বরং সিরিয়ার ভূখন্ডের মধ্যেই থাকতে পারে – তার ব্যবস্থা করতে।

তাদের সুরক্ষার জন্য তুরস্ক ২০১৮ সালে রাশিয়ার সাথে মিলে একটা চুক্তি করেছিল। যার ফলে তুরস্কের সৈন্যরা ইদলিবের ভেতরে পর্যবেক্ষণ ফাঁড়ি বসিয়েছে।

ইদলিবে ঘাঁটি গেড়ে বসা বাশার আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের একটি অংশকেও তুরস্ক সমর্থন দেয়।

তাই বাশার আসাদের বাহিনী অভিযান শুরু করার পরই তুরস্কের সেনাবাহিনী জানুয়ারি থেকে তাদের অবস্থানগুলোয় শক্তিবৃদ্ধি করা শুরু করেছে। তুরস্ক সিরিয়াকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, সরকারি বাহিনী পিছিয়ে না গেলে পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করা হবে।

সিরিয়া সরকারের সমর্থক রাশিয়া ইদলিবে যুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্যে তুরস্কের সাথে আলোচনা করেছিল – কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সিরিয়া তুরস্ক যুদ্ধ যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ কী চান?
কিন্তু তুরস্কের এসব পদক্ষেপ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের বাহিনীর অভিযান বন্ধ করতে পারেনি।

আসাদ ইতোমধ্যে ইদলিব ছাড়া বাকি সিরিয়ার প্রায় সব অঞ্চলেই নিজের নিয়ন্ত্রণ পুনপ্রতিষ্ঠা করেছেন, এবং তার লক্ষ্য হচ্ছে ইদলিব পুনরুদ্ধার করে সম্পূর্ণ সিরিয়ার ওপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।

এ কাজে তাকে সাহায্য করছে রাশিয়া এবং ইরান। সিরীয় সরকারি বাহিনীর এই অভিযানে প্রায় দশ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।

দামেস্ক-আলেপ্পো বিমান চলাচল শুরু
এরই মধ্যে আট বছর পর সিরিয়ার দামেস্ক ও আলেপ্পোর মধ্যে যাত্রীবাহী বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। রাজধানী দামেস্ক থেকে একটি যাত্রীবাহী ফ্লাইট দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর উদ্দেশ্যে উড়ে গেছে।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে কর্মকর্তারা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিজয়ের ফলেই ৩৫ মিনিটের এ ফ্লাইট আবার শুরু হতে পেরেছে।

তবে স্থলপথে দুটি শহরের মধ্যে সংযোগকারী মহাসড়কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দখলের জন্য সিরিয়ার সেনাবাহিনী এখনো বিদ্রোহী ও উগ্রপন্থী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com