সিনিয়রদের সতর্কবার্তা পাপনের
ছেলেমেয়ে বেশি দুরন্ত হয়ে উঠলে অভিভাবকরা প্রথমে ধমক-টমক দেন। তাতে কাজ না হলে শাস্তির আগের প্রক্রিয়া। মানে ‘টাইট’ দেওয়া। জাতীয় দল ও এর ম্যানেজমেন্টকে কিছুদিন ধরে সতর্ক করছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এবার সরাসরি অ্যাকশনে তিনি। মাঝে হস্তক্ষেপ করা ছেড়েছিলেন। এবার ঘোষণা দিয়ে সেই কাজ শুরু করলেন।
‘টাইট’ দেওয়ার এই প্রক্রিয়া শুরু হলো গতকাল। টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক, সিনিয়র দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালকে ডেকে দুপুরে মিরপুরে বোর্ডের অফিসে বৈঠক করেছেন নাজমুল হাসান। তাদের নির্দেশমতো চলতে করণীয় সবকিছু নির্ধারণ করে দিয়ে পরে মিডিয়ায় তা ঘোষণা করেছেন বিসিবিপ্রধান। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, আগামী অক্টোবরে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে আসার পর সব ঠিক থাকলে ওয়ানডে দলের নেতৃত্বের প্রধান দাবিদার হবেন সাকিব আল হাসান।
বিশ্বকাপ থেকে জাতীয় দলের লাগাতার বাজে পারফরম্যান্স ও নিয়মিত ভুলভাল সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে কিছুদিন ধরে প্রকাশ্যে ফুঁসছিলেন নাজমুল হাসান। আর জানাচ্ছিলেন, বিশ্বকাপের আগে থেকে জাতীয় দলে ‘হস্তক্ষেপ’ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন দল গুছিয়ে উঠবে। কিন্তু দলের লেজেগোবরে অবস্থা দেখে তার আবার হস্তক্ষেপ করা ছাড়া উপায় থাকেনি।
গতকাল তো একেবারে চলমান একটা উদাহরণ দিলেন। সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিকেএসপিতে নির্বাচকরা বিসিবি একাদশ নামে নামিয়ে দিয়েছেন বলতে গেলে অনূর্ধ্ব-২১-এর মতো এক দলকে, যে দলে ছিলেন যুব বিশ্বকাপের ৬ জন। ওটাও সহজভাবে নিতে পারেননি নাজমুল হাসান। ‘নতুন কিছু ছেলে আছে, সাইফ আছে, শান্ত আছে। আমরা এদেরকে দিতে পারতাম। যেহেতু তাদেরকে সামনেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে হবে। তাহলে নতুন ছেলেগুলো ওদের বোলিং একটু হলেও অভ্যস্ত হতো, সাহস পেত। কিন্তু আমরা দেখলাম কেউ নেই।’ তিনি বলছিলেন, ‘এই চমকটা আমিও পাচ্ছি, খেলোয়াড়রাও পাচ্ছে। তাহলে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে কে?’
এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে কর্ম বণ্টন ও নজরদারির মতো ব্যাপার বলে যান বিসিবি প্রধান, ‘ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে। সাধারণভাবে আগের ফর্মুলাতেই চলবে। ১৬ জনের স্কোয়াড নির্বাচকরা দিতে পারবেন। তারপর ১৬ হোক ১৩ হোক এখান থেকে সেরা একাদশ অধিনায়ক ও কোচ নিতে পারবেন। কিন্তু যে জিনিসগুলো হচ্ছে, আমি আগের দিন জানতে চাই। জানতে চাই গেম প্লান কী।’
তার মানে ধাপে ধাপে বিসিবি সভাপতিকে পার হয়ে আসতে হবে নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্ট বা কোচ-অধিনায়ককে। সবকিছু স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। অন্যথা করলে মানবেন না নাজমুল হাসান।
কেন তিনি এমনটা করতে বাধ্য হলেন তার ব্যাখ্যা আরেকবার দিয়ে গেলেন বিসিবি প্রধান, ‘বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ থেকেই এমন হচ্ছে, তারপর আফগানিস্তান সিরিজ। পুরো চেঞ্জ। আমি যা জানতাম তার কিছুই হয়নি। আমরা দেখেছি যারা জীবনে উপরে খেলেনি, তাদের উপরে খেলানো হয়েছে। এটা বিরাট পরিবর্তন। এই জিনিসগুলো হঠাৎ করে খেলার মধ্যে নেওয়া।’ সাম্প্রতিক ঘটনাও টেনে আনেন, ‘পাকিস্তানে টি-টোয়েন্টিতেও আমি দেখলাম ব্যাটিং অর্ডার চেঞ্জ, কে কোথায় আসছে না আসছে! যা জানতাম তা হয়নি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি ঠিক করছি না সেরা একাদশ কী হবে। ঠিক করছি না যে আমরা ব্যাটিং নেব না বোলিং নেব। এই সিদ্ধান্তগুলো অধিনায়ক, কোচ মিলেই নিক আপত্তি নেই। যদি বলা হয় এই হলো ব্যাটিং সিকুয়েন্স, অথচ হলো উল্টোটা সেটা যেন আর না হয়। সেটা হতে পারবে না। এটাই আমি ওদের বলে দিয়েছি।’
মোস্তাফিজুর রহমানকে নভেম্বরে ভারত সফরে টেস্ট দলে রাখা হয়েছিল। খেলানো হয়নি। পরের সিরিজে বাদ। এরকম ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। যেমন পাকিস্তান সফরে রুবেল হোসেনকে ডেকে নিয়ে খেলানোর পরের হোম সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাকে রাখা হয়নি। এমনটা আর মানতে নারাজ নাজমুল হাসান।
জিম্বাবুয়েকে হালকাভাবে না নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার তাগিদ দিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘ভাবটা মনে হচ্ছে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতেই গেছি। যে খেলা দেখে আসছি তাতে কোনো আশা আমি দেখতে পাচ্ছি না। তোমরা (খেলোয়াড়রা) যদি হালকা করে নাও তাহলে ডিজাস্টার হবে।’
বিশ্বকাপের পর থেকে জাতীয় দল যেভাবে চলছে তাতে ত্যক্ত-বিরক্ত তা খেলোয়াড়দের কাছেও গোপন করেননি নাজমুল হাসান ‘তামিম, মুশফিক এবং মুমিনুলদের বলেছি বিশ্বকাপ পর্যন্ত যা খেলেছে আমি সন্তুষ্ট। এরপর থেকে যে কটা খেলা হচ্ছে, তাতে চার বছর ধরে দেখে আসা দলের সঙ্গে মিল খাচ্ছে না।’ এ ছাড়া নতুন অধিনায়ক মুমিনুলকে মাঠ ও মাঠের বাইরে বিশেষভাবে সহায়তা করার দায়িত্ব দিয়েছেন মুশফিক ও তামিমকে। সেই সঙ্গে সিনিয়রদের বলা হয়েছে সবসময় জুনিয়রদের উজ্জীবিত রাখতে।
২৯ অক্টোবর সাকিব নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরতে পারবেন। বাছাই পেরিয়ে অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে পারলে শেষটায় তাকে পাওয়ার সুযোগ থাকবে। আর ফেরার পর সব ঠিক থাকলে সাকিব ওয়ানডে নেতৃত্ব পাবেন জানিয়ে পাপনের উচ্চারণ, ‘ওয়ানডেতে তো অবশ্যই। ও যদি ফেরত আসে, যদি আবার ফর্মে চলে আসে এবং যা ছিল সাকিব সে রকম থাকে তাহলে ও তো প্রধান দাবিদার।’