ঠেকানো যায়নি হিন্দুত্ববাদীদের, ৬ দিন পর কারফিউ প্রত্যাহার
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে মহারাষ্ট্র উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করে মহারাষ্ট্র বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দল। সরাসরি সমাধি ভেঙে ফেলার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলাে। সংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থান হওয়ায় সরকারের বাধ্যতামূলকভাবে এটি রক্ষা করার কথা।
কিন্তু প্রশাসনের নমনীয়তায় হিন্দুত্ববাদীদের ঠেকানো যায়নি। গত সোমবার (১৭ মার্চ) হিন্দুত্ববাদীরা আওরঙ্গজেবের একটি ছবি এবং সবুজ কাপড়ে ঢাকা এক প্রতীকী কবরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ নিয়ে শুরু হয় সহিংসতা। শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয় কারফিউ।
এদিকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশ রোববার জানিয়েছেন, নাগপুরে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ হওয়ায় শহরের কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সিয়াসাত ডট কম।
পিম্প্রি চিনচওয়াদ এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ফডনবীশ দাবি করেন, নাগপুরে পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। কোথাও কোনো উত্তেজনা নেই। সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে একসাথে বসবাস করছেন। সেজন্যই কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী নাগপুরের বিধায়ক হিসেবে এই মন্তব্য করেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ (সোমবার) সকালে নাগপুরের বাকি চারটি এলাকায় কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়েছে, ছয় দিন পর নাগপুরে সহিংসতার পর এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
১৭ মার্চ সহিংসতার পর, নাগপুরের কটওয়ালি, গনেশপেঠ, তেহসিল, লাকাডগঞ্জ, পাচপাওলি, শান্তিনগর, সাক্করদারা, নন্দনবান, ইমামবাড়া, যশোধরা নগর ও কাপিল নগর পুলিশ স্টেশন এলাকায় কারফিউ আরোপ করা হয়েছিল।
২০ মার্চ নাগপুর পুলিশের কমিশনার রবি সিংগাল জানিয়েছেন, কটওয়ালি, তেহসিল, গনেশপেঠ এবং যশোধরা নগর পুলিশের এলাকার কারফিউ রবিবার বিকেল ৩টায় প্রত্যাহার করা হয়।
পুলিশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্নিহিত এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় পুলিশের সাথে টহল দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
১৭ মার্চ নাগপুরে সহিংসতার ঘটনায় ৩৩ পুলিশ কর্মকর্তা, তিনজন ডেপুটি কমিশনারসহ আহত হন। সহিংসতার ঘটনায় ১০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সমালোচকরা বলছে, সহিংসতার ঘটনায় হিন্দুদের রক্ষা করে শুধুমাত্র মুসলিমদের অভিযুক্ত ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
ফডনবীশ শনিবার বলেছিলেন, নাগপুরে সহিংসতার ফলে যেসব সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে এবং প্রয়োজন হলে ‘বুলডোজার’ ব্যবহার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, যদি সহিংসতার সঙ্গে জড়িতরা ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করা হবে।
মূলত এর মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষােভকারীদের টার্গেট করে এ মন্তব্য করেছেন তিনি। অথচ আগে সমাধি সরানোর দাবি ও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সংঘাতমূলক পরিবেশ তৈরি করেছিলেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
ভারতে একের পর এক মুসলিম চিহ্ন, নির্দর্শন ও স্থাপত্য মুছে ফেলতে মরিয়া দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো। সরিয়ে ফেলতে হবে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি, ভারতের মহারাষ্ট্রে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর এমন দাবিকে ঘিরে হিংসার আগুন জ্বলেছে ভারতের নাগপুর শহর। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায়- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা হয় কারফিউ।
আওরঙ্গজেবের আমলেই ভারতীয় উপমহাদেশে মোগল সম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তার ঘটে। তার সমাধি মহারাষ্ট্রের সম্ভাজিনগর জেলার খুলদাবাদে অবস্থিত। এই জেলার আগের নাম ছিল আওরঙ্গাবাদ। বর্তমান নাম ছত্রপতি শিবাজির জ্যেষ্ঠ পুত্র সম্ভাজির নামে, সম্ভাজিনগর। জেলার খুলদাবাদ থেকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সমাধিটি সরানোর দাবি অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছে।
এই দাবিতে বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রতিনিধিরা গত সোমবার ( ১৭ মার্চ) নাগপুর শহরের মহল অঞ্চলে জমায়েত করে। আওরঙ্গজেবের একটি ছবি এবং সবুজ কাপড়ে ঢাকা এক প্রতীকী কবরে আগুনও লাগানো হয় ওই কর্মসূচিতে।
ওই অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে।