ইহুদি স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে প্রচারণায় অর্থ ঢালছে মার্কিন-ইসরাইল লবি
আমেরিকার ইতিহাসের প্রথম সম্ভাবনাময় ইহুদি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে প্রচারণার অর্থ যোগানে সহায়তা করছে দেশটিতে ইসরাইলপন্থি বৃহত্তম লবি গ্রুপ ‘আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি’ (আইপ্যাক)। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক দলের অভ্যন্তরীণ মনোনয়ন লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য নেভাদায় এই প্রচারণা শুরু হয়েছে। টেলিভিশন থেকে শুরু করে অনলাইনে বিজ্ঞাপন আকারে স্যান্ডার্সের বিপক্ষে নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে। এসব বিজ্ঞাপনে সরাসরি অর্থ ঢালছে ‘ডেমোক্রেটিক মেজরিটি ফর ইসরাইল’ (ডিএমএফআই) নামে একটি গোষ্ঠী, যেটি প্রতিষ্ঠা করেছেন আইপ্যাকের দীর্ঘদিনের কৌঁসুলি মার্ক মেলম্যান। এর আগে আইওয়া অঙ্গরাজ্যেও নির্বাচনের আগেআগে স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করে বিজ্ঞাপন প্রচার করে একই সংগঠন। দুইটি সূত্রের বরাতে দ্য ইন্টারসেপ্ট জানিয়েছে, এই সংগঠন সৃষ্টি ও অর্থায়নে নেপথ্যে থেকে ভূমিকা রাখছে আইপ্যাক। ডেমোক্রেট সমর্থকদের ব্যানারে পরিচালিত সংগঠনটি অবশ্য সরাসরি স্যান্ডার্সের বিভিন্ন নীতিমালা নিয়ে কথা বলছে না। বরং, যুক্তি হিসেবে হাজির করা হচ্ছে যে, মূল নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জয়ের সক্ষমতা নেই স্যান্ডার্সের।
আইওয়া রাজ্যে বিজ্ঞাপন চালাতে ৮ লাখ ডলার ব্যয় করেছিল ডিএমএফআই।তবে নেভাদায় কত টাকার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে তা এখনও জানানো হয়নি। আইপ্যাক তাদের সমর্থক ও দাতাগোষ্ঠীকে বলছে, ডিএমএফআই-কে অর্থ দেওয়া হলে, সেটি আইপ্যাককে অর্থ দেওয়া বলে গণ্য হবে। আইপ্যাকের দাতা হলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন, ক্ষেত্রবিশেষে কংগ্রেস সদস্য বা সিনেটরদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপেও অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে। ফলে আইপ্যাক এমনভাবে ডিএমএফআই-এ অর্থের সংস্থান করছে, যেখানে আইপ্যাক-এর নাম-নিশানা থাকবে না। তবে ডিএমএফআই-এর একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা যতদূর জানি এ ধরণের কোনো সহযোগিতার কথা একেবারেই অসত্য। তবে আমরা যেহেতু আলাদা সংগঠন, ফলে অন্য একটি সংগঠন কী করছে, তা আমরা বলতে পারবো না। এ ব্যাপারে আইপ্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করাই ভালো।
অপরদিকে আইপ্যাক বিষয়টি অস্বীকার করেছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আইপ্যাক কোনো রাজনৈতিক একশন কমিটির বিজ্ঞাপন প্রচারণায় সম্পৃক্ত নয়। এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’
মূলত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেট দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বার্নি স্যান্ডার্স ফিলিস্তিনি স্বাধিকার নিয়ে বেশি সরব। নিজে ইহুদি হলেও, তিনিই একমাত্র প্রার্থী যিনি প্রকাশ্যেই বলছেন, ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি প্রত্যেকেরই রয়েছে সমান অধিকার। এছাড়া তার প্রচার শিবিরে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে ২ মুসলিম নারী কংগ্রেস সদস্যের, যারা প্রকাশ্যেই ইসরাইলের বিরোধী। আরেক প্রগতিশীল নারী কংগ্রেস সদস্য বেটি ম্যাকালাম বুধবার আইপ্যাকের কড়া সমালোচনা করে বলেন, আইপ্যাক তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উস্কে দিচ্ছে। সম্প্রতি, আইপ্যাকের সোস্যাল মিডিয়া পেইজে ম্যাকালাম ও ২ নারী মুসলিম কংগ্রেস সদস্য রাশিয়া তলাইব ও ইলহান ওমরের ছবি যুক্ত করে বলা হয়, কংগ্রেসের এই উগ্রবাদীরা হয়তো জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস’র চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর। ওই ঘটনার পর ভয়াবহ সমালোচনার মুখে আইপ্যাক ক্ষমা চায়। এছাড়া কংগ্রেসে ডেমোক্রেট দলীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটির নেতারা।
স্যান্ডার্স দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সমর্থনের সমালোচক। তিনি অক্টোবরে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি ইসরাইলকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সহায়তার সঙ্গে শর্ত যুক্ত করবেন যেন ইসরাইল তার বসতি স্থাপন নীতি পরিবর্তন করে। এছাড়া তিনি এ-ও বলেছেন যে, ওই সামরিক সহায়তার একটি অংশ ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে। মূলত, এসবই ক্ষুব্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইল লবিকে।