ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধ হলে প্লাস্টিক খাতের ছয় হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে
একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান টাইম) প্লাস্টিক বন্ধ হলে প্লাস্টিক খাতের ছয় হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে চাকরি হারাবে কয়েক লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী।
পাশাপাশি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের তালিকায় এমন কিছু পণ্য আছে, যার সঙ্গে জড়িত আরও লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান, রয়েছে ১৩ লাখ ক্ষুদ্র বিক্রেতার জীবিকা। একই সঙ্গে সরকার বছরে রাজস্ব হারাবে ৪০ হাজার কোটি টাকার।
রোববার (১২ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, বিগত বছরের ১৭টি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য বন্ধ করতে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারের এই প্রচেষ্টার ফলে প্লাস্টিক খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লিংকেজ হিসেবে অন্যান্য খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, এই আইনের কারণে শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সামিম আহমেদ আরও বলেন, দেশের পরিবেশ দুষণমুক্ত করা এবং পরিবেশ উন্নয়নে ২০০২ সালে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ বন্ধ করে দেয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়। এতে প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ প্রস্তুতকারক ৩০০ বড় কারখানা যারা বিপিজিএমইএর সদস্য ছিলেন, তারা কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হন। এতে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ নষ্ট হয়। শ্রমিকরা কাজ হারান। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয় তা কিন্তু কোনো সুফল বয়ে আনেনি। সাশ্রয়ী মূল্য, গুণগত মান এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য শপিং ব্যাগের বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হয়নি।
প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারে এনবিআরের ১০ নির্দেশনা
তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে এক প্রজ্ঞাপনে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। এর ফলে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও কম মূল্যের পিপি ওভেন ব্যাগ মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। পাটের ব্যাগের মূল্য পিপি ওভেন ব্যাগের চেয়ে অনেক বেশি। পাটের ব্যাগের মূল্য বেশি হওয়ায় সব নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাগের সরবরাহ স্বল্পতার কারণে সাপ্লাই চেইন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষেধাজ্ঞা কোনো সমাধান নয় উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- পরিবেশ উন্নত করা আমরাও চাই। তবে পরিবেশ মন্ত্রণালয় পণ্য নিষিদ্ধ করার যে সহজ পদ্ধতি গ্রহণ করছে তা সঠিক নয়। বর্তমানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে যে ১৭টি পণ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, এতে শিল্প পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
প্লাস্টিক প্যাকেজিং পরিহার করা হলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধ শিল্প ও হাসপাতালের সরঞ্জামাদি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এ সময় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ না করে বিকল্প কিছু প্রস্তাবনা দেয় বিপিজিএমইএ। সেগুলো হলো-
১. প্লাস্টিকের পুনঃচক্রায়নের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা। এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানো এবং মহাসাগরীয় প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. অর্থনৈতিক প্রভাব কী হবে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিডা, এফবিসিসিআই এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
৩. যেহেতু ইউএনইএ রেজুলেশন অনুযায়ী ২০৩০ সাল পর্যন্ত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধের কথা আছে, সে অনুযায়ী বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন হবে।
৪. ১৭টি পণ্য নিষিদ্ধ হলে জিডিপি কমে যাবে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আসবে না। উপরন্তু যেসব বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ আছে, তারা চলে যেতে বাধ্য হবে। কারণ কোনো পণ্য প্যাকেজিং ছাড়া বাজারজাত সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে।