জান্নাত অবধারিত যার জন্য!
জান্নাত অবধারিত হওয়া যে কোনো মুমিনের জন্য অনেক বড় সুখবর। এমন সুসংবাদই দিয়েছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কিন্তু অবধারিত জান্নাতের জন্য কী কী আমল করতে হবে। এ সম্পর্কে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলালাইহি ওয়া কী বলেছেন?
হ্যাঁ, এটি সত্য এবং এ ঘোষণা এসেছে স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে। ইসলামের দিকনির্দেশনাও এমন। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘অজু শেষে কিছু জিকির ও সুন্দরভাবে দুই রাকাত নামাজ পড়ার মাধ্যমেই জান্নাত অবধারিত।’
যে আমলের বিনিময় জান্নাত অবধারিত; সে সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ওঠে এসেছে-
১. হজরত উকবা ইবনে আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, উট দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল আমার উপার। আমার পালা আসলে আমি সেগুলেঅকে সন্ধ্যার সময় নিয়ে আসি। এসে দেখতে পাই- আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে বলছেন, আমি (উকবা) তাঁর এ কথাটুকু শুনতে পাই-
‘কোনো মুসলিম যদি অজু করে এবং তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে, তারপর দাঁড়িয়ে অন্তর ও চেহারা একনিষ্ঠ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।’
এ কথা শুনে আমি (উকবা) বলি, ‘কী চমৎকার কথা!’ তখন আমার সামনে থাকা একজন বলে ওঠেন- এর আগের কথাটি ছিল আরও চমৎকার! তাকিয়ে দেখি (নবিজীর) সামনের লোকটি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু!’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আপনি এই মাত্র এসেছে। (এর আগে) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি অজু করে এবং যথাযথভাবে তা সম্পন্ন করে, তারপর বলে-
أَشْهَدُ أَنْ لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُاللهِ وَ رَسُوْلُهُ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহুল্লাহি ওয়া রাসুলুহু।’
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি- আল্লাহ ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই; আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি- মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর দাস ও বার্তাবাহক।
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে; যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম)
এ সম্পর্কে আরও দুটি বর্ণনা পাওয়া যায়-
২. হরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে এবং তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে, তারপর বলে-
أَشْهَدُ أَنْ لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ – اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
উচ্চারণ : আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু; আল্লাহুম্মাঝআলনি মিনাত তাওয়্যাবিনা ওয়াঝআলনি মিনাল মুতাত্বিহিরিন।’
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি- আল্লাহ ছাড়া কেনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই; আর আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি- মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও বার্তাবাহক। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত করে দাও। আর আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের একজন বানিয়ে দাও।’
তার জন্যও জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে যাবে; যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি)
৩. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে বলে-
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا اِلَهَ اِلَّا أَنْتَ أًسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ اِلَيْكَ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাহ আন্তা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি ত্রুটিমুক্ত; প্রশংসা শুধু তোমারই। আমি সাক্ষী দিচ্ছি- তুমি ব্যতিত কোনো ও সার্বভৌম সত্তা নেই; আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই এবং তোমার কাছে ফিরে আসছি।’
তা একটি চামড়ার মধ্যে লিখে সিলগালা করে দেওয়া হয় এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা খোলা হবে না।’ (নাসাঈ)
পবিত্রতা অর্জনের জন্য অজু শেষে জিকির। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোনো ব্যক্তি যদি সুন্দরভাবে অজু করে; তাপরপর অন্তর ও চেহারা একনিষ্ঠ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। এ কথাটি সত্য? আর সত্য হলেও এটি কার কথা? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জান্নাতের মেহমান হতে উল্লেখিত সুন্দরভাবে অজু করে চেহারা ও অন্তরের একনিষ্ঠতার সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ পড়া। অজুর পর উল্লেখিত তিনটি দোয়া নিয়মিত পড়া। আর তাতেই এ আমলকারীর জন্য জান্নাত অবধারিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুনিশ্চিত জান্নাতের অধিকারী হতে ছোট ছোট আমলগুলোর মাধ্যমে নিজেদের জান্নাতের উপযোগী করে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।