বাংলাদেশ একটি নদী বিধৌত অঞ্চল হওয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির কোনো বিকল্প নেই: এবি পার্টি
এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, গণআন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পলায়ন ও ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করার কোনো সুযোগ নেই।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত নিয়ে সরকারের করণীয় বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান।
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বাংলাদেশ একটি নদী বিধৌত অঞ্চল হওয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে চরাঞ্চল, দ্বীপ এলাকা, পার্বত্য অঞ্চলসহ প্রচুর দুর্গম এলাকা রয়েছে, যেখানে বিদ্যুতের মূল সংযোগ থেকে ওই সমস্ত এলাকার জনগণকে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর বাইরে পরিবেশগত জটিলতায় গোটা পৃথিবীই নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাচ্ছে। এখন পরিবেশ দূষণ কমাতে বৈদ্যুতিক যানবাহনের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় আগামী এক দশকে বিদ্যুতের চাহিদা দ্বিগুণ হতে পারে। যার ফলে বহু নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত নিয়ে ১০ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন–
১. দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ছাড়া আমাদের অন্য কোনো বিকল্প নেই। তাই এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকে কোনোভাবেই বাধা দেওয়া যাবে না। যে সমস্ত প্রকল্প সরকার থেকে কাজের ইচ্ছাপত্র প্রাপ্ত হয়েছে সেগুলোতে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পে’ ভিত্তিতে উৎপাদন সচল করতে হবে, তার মানে কোনো ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দেশের টাকা অপচয়ের সুযোগ নেই। প্রয়োজনে পুনঃ দর কষাকষি করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন নিশ্চিত করে মহা দুর্নীতির প্রকল্পগুলো আর নবায়ন না করে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমাতে হবে। প্রায় ২৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম ৩৪টি কোম্পানিকে, যাদের অধিকাংশগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ আছে, কাজ চলমান রাখার অনুমতি দিতে হবে। অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে; এতে বিদেশি বিনিয়োগ অনুৎসাহিত হবে, ব্যবসাবান্ধব দেশের তালিকাতে আমরা পিছিয়ে পড়ব আর হাজার হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রকে গচ্ছা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে দেশি এবং বিদেশি আদালতে। প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ, ৬০ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের এবং দেশের বদনাম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না;
২. নবায়নযোগ্য জ্বালানি মূল্য কমাতে সরকারি উদ্যোগে অনাবাদী খাস জমি ও চরাঞ্চলগুলো বাছাই করে সেখানে সঞ্চালন লাইন তৈরি করে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে;
৩. বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চারটি চরে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে যে সম্ভাবনা পরীক্ষা চলমান সেটা দ্রুত শেষ করে সেখান থেকে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে;
৪. লাখ লাখ ডিজেলচালিত সেচের মেশিন সোলার পাম্পে রূপান্তরিত করতে হবে, এতে যেমন উৎপাদন খরচ কমবে ঠিক তেমনি আমাদের ডলার দিয়ে বিদেশ থেকে ডিজেল কম কিনতে হবে;
৫. গ্যাস/বিদ্যুতের কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ছাদ মালিক ও বিনিয়োগকারী কোম্পানির সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে নেট মিটারিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে বাড়ির ছাদে স্থাপিত সোলার থেকে হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে;
৬. দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুতায়িত গাড়ি উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে, সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তা এবং গ্রাহকদের সমন্বিত বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করতে হবে;
৭. নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যবহৃত সোলার প্যানেল, ইনভার্টারসহ প্রয়োজনীয় পণ্যে কর শূন্যে বা ন্যূনতম পরিমাণে নামিয়ে আনতে হবে;
৮. দরকার হলে বাংলাদেশ কে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে ‘ফিড অ্যান্ড ট্যারিফ’ দিয়ে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতে হবে;
৯. ভুটান ও নেপাল থেকে ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইন করে কীভাবে কমমূল্যে জলবিদ্যুৎ আমদানি করা যায়, যদি কখনো একান্ত প্রয়োজন হয়, তার পদক্ষেপ নিতে হবে;
১০. অফ পিক আওয়ারে (দিনের তুলনামূলক কম ব্যস্ত সময়ে) কম মূল্যে বিদ্যুৎ ব্যাটারি স্টোরেজের মাধ্যমে মজুত করে ব্যস্ত সময়ে ব্যবহার, স্ট্যাবল ট্রামিশন সিস্টেম ও চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের পদক্ষেপ নিতে হবে।