ভারতের প্রতিশোধ, মালয়েশিয়ার বদলা!
কাশ্মির ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সোচ্চার হওয়ায় গত ডিসেম্বরে ভারত সরকার মালয়েশিয়া পাম ওয়েল আমদানির ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত সরকার। বেসরকারি আমদানিকারকদেরকে গত বছরের নবেম্বরেই ‘অনানুষ্ঠানিকভাবে’ অর্ডার দেয়া বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। আর চলতি বছরের শুরুতে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে যে তারা মালয়েশিয়া থেকে পাম ওয়ে আমদানি করা বন্ধ করবে। আমদানির ওপর কোনো আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে সরকার পাম ওয়েল আমদানি ‘মুক্ত’ থেকে ‘বিধিবদ্ধ’ তালিকায় স্থানান্তর করেছে। ভারত হলো ভোজ্য তেলের বৃহত্তম আমদানিকারক। আর মালয়েশিয়া হলো ভারতে পাম ওয়েলের প্রধান সরবরাহকারী।
অবশ্য, ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে আরো কয়েকটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মালয়েশিয়ার পাম ওয়েলের একটি বড় অংশ পরিশোধিত হয় নেপালে। সেখান থেকে তা ভারতে রফতানি হয়। নেপালও মালয়েশিয়ার পাম ওয়েল আমদানি বন্ধের ভারতীয় সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাশ্মির ও নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (সিএএ) নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, সিএএ প্রসঙ্গে বলেছেন, ভারত দাবি করে যে সে সেক্যুলার দেশ, এখন সে নাগরিকত্ব থেকে মুসলিমদেরকে বঞ্চিত করছে। ভারত সরকার তার এই মন্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করে বলেছে, এটা একে অপরের অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপ না করার কূটনৈতিক রীতির লঙ্ঘন।
তবে দিল্লির বিজেপি সরকার কুয়ালামপুরে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকেই মাহাথিরের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। ভারতীয় টিভিতে ইসলামপ্রচারক জাকির নায়েককে ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় আশ্রয় প্রদান করা হয় ভারত সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও। অর্থ পাচার ও ‘বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার’ অভিযোগে তাকে আটক করতে চায় দিল্লি। মালশিয়া সরকারের মতে, ভারতে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে জাকির নায়েক ভারতে সুবিচার পাবেন না।
মাহাথির মোহাম্মদ স্বীকার করেছেন যে পাম ওয়েল আমদানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তবে তিনি তার মতে অটল থেকে বলেন যে ভারতে যা ঘটছে, তাতে সেখানকার অনেক লোকের মধ্যে কষ্টের সৃষ্টি হচ্ছে। পুরো দুনিয়া মনে করে, সেখানে অনেককে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
ভারত একা নয়, ট্রাম্প প্রশাসনও মালয়েশিয়া থেকে পাম ওয়েল আমদানি ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়ার হুমকি দিলে মাহাথির পাল্টা হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন যে তোমরা যদি মালয়েশিয়া থেকে পাম ওয়েল আমদানি করা কমিয়ে দাও, তবে আমরাও তোমাদের কাছ থেকে আমাদের আমদানি কমিয়ে দেব। ট্রাম্পের কথা মতো আমরা চলব না। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আসিয়ান এক জোট হয়ে কাজ করতে পারে।
ভারত যদি পাম ওয়েল আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে, তবে মালয়েশিয়াও বদলা নিতে পারে। মাহাথিরের মিডিয়া উপদেষ্টা বলেছেন, তার দেশ ভারতীয় কর্মজীবীদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। অবশ্য মালয়েশিয়া সরকার চাচ্ছে, এর কূটনৈতিক সমাধান। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ভারত সরকারও ইঙ্গিত দিয়েছে, সে মালয়েশিয়ার সাথে উত্তেজনার প্রশমন চায়। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে এক লাখের বেশি ভারতীয় কর্মরত রয়েছে। তারা বিদেশে কর্মরত ভারতীয়দের ৬ শতাংশ।
অর্থাৎ মালয়েশিয়ার বদলার আশঙ্কায় ভারত হয়তো তার ‘প্রতিশোধ’ থেকে সরে আসবে।