বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই: মেজর হাফিজ
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য এক বছর যথেষ্ট সময় বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমরা সবসময় বলেছি, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নির্বাচন দেওয়ার জন্য এক বছর সময় যথেষ্ট।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, এই সরকার গঠিত হয়েছে জনরায়ে, জনগণের ইচ্ছায়। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে আমরা ধীরে ধীরে হতাশ হচ্ছি। প্রফেসর ইউনূস দেশের কৃতি সন্তান, সারা বিশ্বব্যাপী তার পরিচিতি। তিনি বিদেশে বাংলাদেশের ফেস, ওনার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আমরা এই মুহূর্তে পেতাম না। তিনি ক্ষমতায় থাকতেও চান না, আগেও তাকে অফার করা হয়েছিল, থাকেননি। এখনো যে তিনি খুব এনজয় করছেন, তা মনে হয় না। কিন্তু একটা কথা আমার বলতে হচ্ছে, ওনার টিম সিলেকশনটা ঠিক হয়নি। তিনি যাদের সঙ্গে নিয়েছেন, তাদের অনেকের আজীবন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা আছে। প্রকাশ করতে হয়তো পারেন না কিন্তু ভাবভঙ্গিতে এমনই মনে হয়।
সংস্কারের জন্য কত সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, ছয়টি যে কমিশন করা হয়েছে, এদের প্রজ্ঞাপন করতেই ৬ দিনের বেশি সময় লেগেছে, যেটা দুই দিনের বেশি লাগার কথা না। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে যাচ্ছে। পতিত শক্তি আবার ফিরে আসতে চায়। আনসার বাহিনী পর্যন্ত ক্যু করতে চায়, এমনই দুর্বল একটা সরকার।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ‘গণঅভূত্থ্যানে জনআকাঙ্ক্ষা: রাষ্ট্র মেরামতে প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, প্রফেসর ইউনূস একেক জন উপদেষ্টাকে চারটা-পাঁচটা করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে এদের কোনো অভিজ্ঞতাই তো নেই। এই ব্যাপারে তাকে চিন্তা করতে হবে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ভালোদের নিয়ে দায়িত্ব দেন। দরকার হলে যে ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছে, তাদের থেকে আরও লোক নেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের টিমে খেলে এসেছেন অতীতে তাদের আর মন্ত্রিপরিষদে আমরা দেখতে চাই না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, সরকার অনেক কথা বলে কিন্তু একটা কথা তাদের মুখ থেকে শোনা যায় না যে, নির্বাচন কবে হবে। ইলেকশন কমিশন কবে গঠন হবে? অরাজনৈতিক এবং বিজ্ঞ লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আইন যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তা দ্রুত করা যায়।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যে ক্ষতি করেছে বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা মনে করেছিলাম সুন্দর একটা দেশ আমরা পাব। গণতন্ত্র চিরদিন থাকবে বাংলাদেশের বুকে, কোনো বৈষম্য থাকবে না। মানবিক মর্যাদা, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু কিন্তু যতই দিন গিয়েছে ততই আস্তে আস্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দূরে সরে গিয়েছে। আমরা পেয়েছি একটা একদলীয় রাষ্ট্র বাকশাল।
নির্বাচন ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, নির্বাচনে কেউ যেন টাকা দিয়ে ভোট প্রভাবিত করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেন। জাতীয় সংসদ কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। একজন স্কুল শিক্ষক যেন নির্বাচন করতে পারেন।
তিনি বলেন, আগস্ট বিপ্লবের আরেকটা জিনিস আমরা দেখতে পাব, যে সরকারই আগামীতে ক্ষমতায় আসবে তার মাথার মধ্যে আগস্ট বিপ্লবের কথা থাকবে। তারা ইচ্ছা করে যে আগের মতো লুটপাট করে যাবে তার সাহস করবে না। বিএনপি হোক, জামায়াত হোক আন্দোলনের যে অভিজ্ঞতা, তা প্রত্যেকের মাথায় থাকবে।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে বাহিনীগুলোর প্রধানদের আরও দশ হাজার মানুষকে হত্যা করতে বলে গিয়েছেন জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন, মানুষ যেন পোকামাকড়ের চেয়েও অধম হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হতো, সৃষ্টিকর্তা যদি আমার একটা ইচ্ছা পূরণ করেন, তাহলে আমি আমার দল পরিবার নিজের জন্য কিছুই চাইব না। আমি শুধু একটা জিনিসই চাই, এই আওয়ামী লীগ যেন আর ফিরে না আসে বাংলাদেশে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।