নেতৃত্ব সংকটে ডেমোক্র্যাটরা
অভিশংসন প্রক্রিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়মুক্তির পর আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান শিবির বাড়তি সুবিধা পেতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অভিশংসন থেকে দায়মুক্তি ট্রাম্পকে আইনের ঊর্ধ্বে তুলে দিয়েছে। এমন অবস্থায় ডেমোক্র্যাট শিবির আগামী নির্বাচনে চমকপ্রদ কোনো ঘটনার জন্ম না দিতে পারলে রিপাবলিকানরাই ফের ক্ষমতায় আসবেন এমন সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
ডেমোক্র্যাট শিবিরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হলেও নেতা নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানেই রয়েছে তাদের দুর্বলতা। গত সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউ হ্যাম্পশায়ারের নির্বাচনী র্যালিতে অংশ নেন। আর তখনই মূলত ডেমোক্রেট শিবিরের নেতৃত্ব সংকটের বিষয়টি সামনে আসে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে সোমবার রাতে তীব্র ঠা-া ও বৃষ্টির মধ্যেও বহু মানুষ দাঁড়িয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য শোনেন। আর তখন ডেমোক্র্যাটরা আগামী নভেম্বরে কে হবেন তাদের কা-ারি তা নির্বাচনে ব্যস্ত ছিলেন।
২০১৬ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ারে হিলারি ক্লিনটনের কাছে ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন ট্রাম্প। ডেমোক্রেটরা এবারও একই ধারাবাহিকতা চাইছেন ভোটের ফলে। ২০০৮ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ারে ডেমোক্র্যাট শিবিরের নেতৃত্বের লড়াইয়ে নেমেছিলেন বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন। তখন ভোটে হিলারি পান ৩৯ শতাংশ ও ওবামা পান ৩৮ শতাংশ ভোট। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ক্রমেই হিলারির অবস্থান দুর্বল হতে থাকে।
ডেমোক্র্যাটদের অপর শক্তিশালী নেতা জো বাইডেন এবার আর আইওয়া থেকে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন করতে পারছেন না। সাউথ ক্যারোলিনা থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্বে আসার আশা জাগিয়ে রেখেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারের সার্ভে সেন্টারের করা এক জরিপে দেখা যায়, ডেমোক্র্যাটদের নেতাদের মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ সমর্থন পেতে পারেন, এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বার্নি স্যান্ডার্স। জরিপে বার্নি স্যান্ডার্স ২৯ শতাংশ ও পিটি বুত্তিগিয়েগ পেয়েছেন ২২ শতাংশ। নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি ভোটাররা এখনো নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে মনস্থির করেনি। সিএনএন’র জরিপকারী কর্মকর্তা জেনিফার আগিয়েস্তার মতে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন এই সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন। আগামী ছয়দিনে ডেমোক্র্যাট শিবিরে স্থিতিশীলতা না এলে ওই ভোটাররা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারেন। এদিকে যত দিন যাচ্ছে ততই ডেমোক্র্যাট নেতাদের মধ্যকার মতপার্থক্য স্পষ্ট হচ্ছে। প্রকাশ্যে জো বাইডেনকে বলতে শোনা যায়, ‘বার্নি একজন ডেমোক্রেটিক স্যোশ্যালিস্ট, তিনি নিজেকে এভাবেই চিহ্নিত করেছেন। আমার মনে হয় প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়ন পেলে বার্নিকে সবাই ওভাবেই দেখবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনবিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট শিবিরের শেষ মুহূর্তের চমক হতে পারে স্বাধীন কোনো প্রার্থী। নথিভুক্ত ডেমোক্র্যাটরা ও অনথিভুক্ত পার্টির সদস্যরা ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট শিবির থেকে দাঁড়াতে পারেন ধনকুবের মাইক ব্লুমবার্গ, এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বার্নি স্যান্ডার্সের জায়গায় ব্লুমবার্গকে দেখতে চান অনেক ডেমোক্র্যাট। কিন্তু মজার ব্যাপার, নিউ হ্যাম্পশায়ারেই ব্লুমবার্গের কোনো দেখা নেই। ব্লুমবার্গ ইতিমধ্যেই সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন নির্বাচনী প্রচারে। টেলিভিশন, ইউটিউব থেকে শুরু করে সবখানে ব্লুমবার্গের প্রচার লক্ষ করা যাচ্ছে। সিএনএন’র জরিপে ব্লুমবার্গের পেছনে মাত্র পনেরো শতাংশ ডেমোক্র্যাট রয়েছেন বলে দেখা যায়।