গিবতের পরিণতি ভয়াবহ
‘গিবত’ মুসলিম উম্মাহ পরনিন্দা বলে জানে। কোনো মানুষের অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন কথা বলা যা ওই ব্যক্তি শুনলে মনে কষ্ট পাবে; তাই গিবত বা পরনিন্দা। গিবতের অপরাধ ব্যভিচার হতেও মারাত্মক। তাই গিবত করা হারাম ও কবিরা গোনাহ। আল্লাহ বলেন, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে সামনে এবং পিছনে পরনিন্দা করে। (সুরা হুমাযা : আয়াত ১)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘গিবত কী, তা কি তোমরা জান? লোকেরা বলল, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘গিবত হলো তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে তোমার এমন কথা বলা; যা সে অপছন্দ করে।
জিজ্ঞাসা করা হলো- আমি যা বলি তা যদি ভাইয়ের মধ্যে থাকে, এটাও কি গিবত? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি যা বল তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলেই সেটা হবে গিবত।’
আর তুমি যা বল তা যদি তার মধ্যে না থাকে, সে ক্ষেত্রে সেটা হবে ‘বুহতান’ বা অপবাদ। (মিশকাত)
সংশোধনীর প্রশ্নে…
শুভাকাঙ্ক্ষীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যদি কোনো মুসলমান একে অপরের দোষত্রুটি পরস্পরকে জানায়, তবে দোষী ব্যক্তি সংশোধন হতে পারে। তবে উদ্দেশ্য থাকতে হবে ব্যক্তি সংশোধন।
যদি কাউকে সমাজে হেয় করার লক্ষ্যে তার অনুপস্থিতিতে দোষত্রুটি বর্ণনা করা হয়; তাহলে এটা হবে ওই ব্যক্তির মনোকষ্টের কারণ। এটা মারাত্মক অপরাধ।
গিবতের ক্ষতি
গিবতের কারণে মানবজীবনে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, বিদ্বেষ জন্মে ও সমাজের শান্তি-শৃংখলা বিনষ্ট হয়। সমাজ সচেতন ব্যক্তিগণ গিবতকারীকে পছন্দ করেন না। হাদিসে গিবতকারীর তিনটি মারাত্মক ক্ষতির কথা বর্ণিত আছে।
হাদিসে এসেছে- ‘তোমরা গিবত বা পরনিন্দা করা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ তাতে রয়েছে তিনটি ক্ষতি-
প্রথমত- গিবতকারীর দোয়া কবুল হয় না।
দ্বিতীয়ত- গিবতকারীর কোনো নেক আমল কবুল হয় না এবং
তৃতীয়ত- আমলনামায় তার পাপ বৃদ্ধি হতে থাকে। (বুখারি)
সুতরাং ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় জীবনে আত্মার পরিশুদ্ধতা লাভে গিবত পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি।
পরিশেষে…
গিবতের মারাত্মক অপরাধের বিষয়টি বিশ্বনবির হাদিসে সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে, ‘গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার হতেও গুরুতর অপরাধ। সাহাবাগণ বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! গিবত কিভাবে ব্যভিচার অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ হতে পারে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ব্যভিচার করার পর মানুষ আল্লাহর নিকট তাওবা করলে আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুল করেন। কিন্তু গিবতকারী ব্যক্তিকে যে পর্যন্ত ওই ব্যক্তি (যার গিবত করা হয়েছে) ক্ষমা না করে; ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। (মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গিবতের ভয়াবহতা থেকে হিফাজত করুন। গিবত তথা পরনিন্দা করা থেকে বিতর থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।