দিল্লিতে বিজেপির হারের নেপথ্যে
নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের নেতৃত্বেও ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি এড়াতে পারেনি। রাজধানীর ৭০টি আসনের মধ্যে ৬৩ আসন পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো দিল্লির মসনদের দখল ধরে রেখেছে অরবিন্দ কেজরিওয়াল নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি (এএপি)।
পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা দিল্লিতে বিজেপির হারের পাঁচটি কারণ বের করেছেন। কারণগুলোর মধ্যে প্রথমটি দিল্লিতে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা। ২০১৪ সাল থেকে মোদি-অমিত শাহের নেতৃত্বে নির্বাচনে জেতার একটি সফল ফর্মুলা তৈরি করে বিজেপি। দলটির এ নির্বাচনে জেতার মডেল টানা কয়েকবার কাজে লাগলেও দিল্লিতে হোঁচট খেয়েছে এর দূরদর্শিতার অভাবের কারণে। হিন্দুত্ববাদ ও পাকিস্তানের বিরোধিতার বিষয়টি দিল্লিবাসী হজম করেনি। ২০১৪ থেকে এ ককটেল কাজে দিলেও নাগরিকত্ব আইন প্রশ্নে নাগরিকদের বিরোধিতা সবকিছু ভেস্তে দেয়।
দ্বিতীয় কারণটি হলো গুজরাট মডেল। ২০১২ সালের দিকে গুজরাটকে সাংহাইয়ের মতো উন্নত শহর তৈরির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মোদি। তার ওই স্বপ্ন দেখানোতে কাজও হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর মোদি সাংহাই মডেল তো দূরের কথা, স্বাভাবিক উন্নতিও করেননি গুজরাটের। অথচ দিল্লির শাসক কেজরিওয়াল কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা ছাড়াই একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প হাজির করেছেন জনগণের সামনে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বিকাশ পুরুষ’ মডেল। দিল্লিতে বিজেপির ভরাডুবির তৃতীয় কারণ কংগ্রেস। বিজেপি ভেবেছিল দিল্লিতে তাদের অন্যতম শত্রু কংগ্রেস। এবারের নির্বাচনে কংগ্রেস একটা আসন না পেলেও বিজেপি ও আম আদমির মধ্যে দাবার ঘুঁটি হিসেবে কাজ করেছে। কংগ্রেস আগে থেকেই জানত তারা নির্বাচনে জিততে পারবে না। কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে না দাঁড়ানোয় কংগ্রেসবিরোধীদের বিরাট অংশই এএপিকে ভোট দিয়েছে। চতুর্থ ফ্যাক্টর ছিল মনোজ তিওয়ারি। ২০১৫ সালে কিরন বেদি সরে দাঁড়ানোর পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোনো যোগ্য প্রার্থী তৈরি করার চেয়ে মনোজ তিওয়ারির প্রতি অধিক মনোযোগী হয় বিজেপি। কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যবিত্ত ইমেজের কাছে মনোজের এলিট ইমেজ কোনো কাজে আসেনি। শাহিনবাগের প্রতিরোধ ও মনোজের বিতর্কিত মন্তব্য বিজেপিকে ধরাশায়ী করে দিয়েছে।
আর শেষ কারণ নির্বাচনী কৌশল। জাতীয় রাজনীতির কৌশল যে দিল্লিতে কাজ করেনি তার প্রমাণ এএপির জয়। বিজেপির সব কৌশলই জানা ছিল কেজরিওয়ালের। ফলে শুরু থেকেই কেজরিওয়ালের আইটি দল বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।