দিল্লিতে কামাল কেজরিওয়ালের
দিল্লির বুকে দাঁড়িয়ে কামাল করেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মাফলার ও সোয়েটার পরিহিত আইআইটির তুখোড় ছাত্রের চাকরি ছেড়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার মধ্যে অরবিন্দ কেজরিওয়াল দেখিয়েছেন প্রবল আত্মবিশ্বাস। রাজনৈতিক পরিচিতি ছাড়াই দল গড়ার সাহস দেখিয়েছেন। আর তাই আত্মপ্রকাশের আট বছরে দিল্লির দুঁদে রাজনীতিদের ঘোল খাইয়ে তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লি বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছে আম আদমি পার্টি। অন্য সব দল ধুয়ে মুছে গিয়েছে। একমাত্র বিজেপি ৮টি আসনে জয়ী হয়েছে। কেজরিওয়ালের এই হ্যাটট্রিক জয়ে দিল্লিতে আম আদমি শিবিরে উচ্ছ্বাসের হাওয়া বইছে।
উচ্ছ্বসিত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও। ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষ যে দেশপ্রেমের রাজনীতিকেই মাথায় করে রেখেছে সে কথাই দিল্লির নির্বাচনী ফলে স্পষ্ট হয়েছে। বিপুল জয়ের পর বিকালে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘গজব কর দিয়া আপলোগোনে।’ বলেছেন, ‘এটা আমাদের ভারতমাতার জয়। আমাদের গোটা দেশের জন্য।’ তার কথায়, দিল্লিবাসী আজ এক নতুন রাজনীতির জন্ম দিলো। আর সেটা হলো কাজের রাজনীতি। তিনি আরো বলেছেন, এই জয় আসলে সেইসব পরিবারের জয়, যাদের আজ বিদ্যুৎ আছে, যদের সন্তানরা আজ পড়াশোনা করছে, যারা আজ দিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারে।
কেজরিওয়ালের জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। দিল্লি জয়ের নেপথ্য কারিগর বলা হচ্ছে যে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে তিনি দুপুরেই টুইট করে বলেছেন, জোট হয়ে ‘?দেশের আত্মা’? বাঁচিয়েছেন দিল্লিবাসী। টুইট পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘?ধন্যবাদ দিল্লি, দেশের আত্মরক্ষার্থে উঠে দাঁড়ানোর জন্য।’ মঙ্গলবার সকালে ভোট গণনা শুরুর পর থেকেই আম আদমি পার্টির বিপুল জয়ের ধারা স্পষ্ট হয়েছে। তবে গণনা যত এগিয়েছে ততই বিজেপি’র আসন কমেছে। বেড়েছে আপ-এর আসন। অবশ্য গত ৮ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর সব বুথফেরত সমীক্ষাতেই কেজরিওয়ালের বিপুল জয়ের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। তবে বাস্তবে সব ইঙ্গিতকে ছাপিয়ে ৬৩ আসনে জয়ী হয়েছে আম আদমি পার্টি। অবশ্য গতবার ৬৭টি আসনে জিতেছিল আম আদমি পার্টি। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে বিজেপি’র বিপুল সাফল্যের পরও অরবিন্দ কেজরিওয়াল উন্নয়নের রাজনীতির মাধ্যমে দিল্লির মানুষের মন জিতেছেন। এদিন ফল প্রকাশের পর শহর দিল্লি ও তার আশেপাশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ জানিয়েছেন, ৫ বছরে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছে কেজরিওয়ালের দিল্লি উন্নয়ন মডেল। অবশ্য একদিকে দিল্লিবাসীর জন্য কেজরী বাহিনীর কাজের তালিকা, অন্যদিকে বিজেপি’র জাতীয়তাবাদী প্রচার, তার মধ্যেই সিএএ-এনআরসি-এনপিআর আর শাহিন বাগের উত্থান এবারের নির্বাচনে প্রবলভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই ফলে প্রমাণ হয়েছে, বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন সাধারণ মানুষ। তার বক্তব্য, দেশে ঘৃণার রাজনীতির কোনো জায়গা নেই। বিজেপি শুরু থেকেই বিদ্বেষের রাজনীতি করে এসেছে। মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। মমতা বলেছেন, দিল্লিতে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। যেখানেই ভোট হচ্ছে, বিজেপি হারছে। বিদ্বেষের রাজনীতি করে বিজেপি। কিন্তু মানুষ বিভাজনের রাজনীতি চান না। তাদের কাছে ঘৃণার রাজনীতির কোনো জায়গা নেই। কেজরিওয়ালকে ফোন করে মমতা অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এই জয় শুধুমাত্র আপের নয়, এটা মানুষের জয়। দিল্লিবাসীর এই সিদ্ধান্ত গোটা দেশের মানুষের চিন্তারই প্রতিফলন।
একদিকে যখন আপ শিবিরে প্রবল উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে তখন বিজেপি শিবিরে প্রবল হতাশা। বিজেপি’র সদর দপ্তরে দেখা নেই কোনো শীর্ষ নেতার। বিজেপি নেতা গৌতম গম্ভীর পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, বিজেপি সর্বোতভাবে চেষ্টা করেছে, কিন্তু মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থই হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে দিল্লি উন্নতি করবে।