মানুষের জীবনে দান-সাদকার যত উপকারিতা

0

দান-সাদকা মানুষের জীবনে অনেক উপকার বয়ে আনে। এতে দাতার দুনিয়া ও পরকালের জীবন হয় সম্মান ও গৌরব মণ্ডিত। দান-সাদকায় দাতা-গ্রহীতা উভয়ের মাঝে থাকতে হবে যথাযথ শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান। পবিত্র মনে সম্মান ও তাজিমের সঙ্গে দান-সাদকা করতে হবে। ইসলামে দান-সাদকার উপকারিতা অনেক। দান-সাদকার উপকারিতা, ফজিলত ও সম্মান-মর্যাদার ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর অনেক দিকনির্দেশনা রয়েছে।

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কল্যাণময় কাজে দান-সাদকা করার সুফল ঘোষণা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে এসেছে-

১. قُلۡ اِنَّ رَبِّیۡ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ وَ یَقۡدِرُ لَهٗ ؕ وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَهُوَ یُخۡلِفُهٗ ۚ وَ هُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ

‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, ‘আমার প্রভু তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার জীবিকা বাড়িয়ে দেন অথবা কমিয়ে দেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার বিনিময় দেবেন। আর তিনিই শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।’ (সুরা সাবা : আয়াত ৩৯)

২. হজরত আদি ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের বাঁচাও; যদি তা অর্ধেক খেজুর দ্বারা হয় তবুও।’ (বুখারি ও মুসলিম)

৩. وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ فَلِاَنۡفُسِکُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡنَ اِلَّا ابۡتِغَآءَ وَجۡهِ اللّٰهِ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ یُّوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ

‘আর তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজেদের জন্যই। আর তোমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যয় কর এবং তোমরা কোনো উত্তম ব্যয় করলে তা তোমাদের পরিপূর্ণভাবে দেওয়া হবে। আর তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭২)

৪. হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তি ছাড়া আর কারো প্রতি হিংষা পোষণ করা বৈধ নয়। তাদের একজন হলেন- যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য দিয়েছেন। আর অন্যজন হলেন- যাকে আল্লাহ জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচার-বুদ্ধি দান করেছেন এবং সে তার সাহায্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং (অপরকে) তা শিক্ষা দিয়ে থাকেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

৫. وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِیۡمٌ

‘আর যে সম্পদ তোমরা ব্যয় কর, অবশ্যই আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৩)

দান-সাদকার উপকারিতা

দান-সাদকার ফজিলত মর্যাদা ও সম্মান সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহয় এ রকম অনেক দিকনির্দেশনা এসেছে। যেখানে দান-সাদকার করার প্রতি নির্দেশ, দিকনির্দেশনা ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দুনিয়া ও পরকালীন জীবনের জন্য দান-সাদকার উপকারিতাও বর্ণিত হয়েছে। দান-সাদকার সেসব উপকারিতার কিছু তুলে ধরা হলো-

১. দান-সাদকা জান্নাতের দরজাসমূহের একটি।

২. দান-সাদকা আমলের মধ্যে উত্তম আমল।

৩. দান-সাদকা কেয়ামতের দিন ছাঁয়া হবে এবং দান-সাদকা আদায়কারীকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হবে।

৪. দান-সাদকা আল্লাহ তাআলার ক্রোধকে ঠাণ্ডা করে এবং কবরের উত্তপ্ততায় শীতলতার উপকরণ হবে।

৫. মৃতব্যক্তির জন্য উত্তম বদলা এবং সবচেয়ে উপকারী বস্তু হল দান-সাদকা। আর দান-সাদকার সওয়াবকে আল্লাহ তাআলা ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে থাকেন।

৬. দান-সাদকা পবিত্রতার আসবাব, আত্মশুদ্ধির মাধ্যম ও সৎ কাজের বৃদ্ধিকারক।

৭. দান-সাদকা কেয়ামতের দিন দান-সাদকাকারীর চেহারার আনন্দ ও প্রফুল্লতার কারণ হবে।

৮. দান-সাদকা কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় নিরাপত্তা হবে। অতীতের জন্য আফসোস করা থেকে বিরত রাখে।

৯. দান-সাদকা গুনাহের ক্ষমা এবং খারাপ কাজের কাফফারা।

১০. দান-সাদকা উত্তম মৃত্যুর সুসংবাদ এবং ফেরেশতাদের দোয়ার কারণ।

১১. দান-সাদকা দানকারী সর্বোত্তম বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত এবং দান-সাদকার সওয়াব প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি পায় যে কোনো না কোনোভাবে অংশীদার হয়।

১২. দান-সাদকা দানকারীর সঙ্গে সীমাহীন কল্যাণ ও বিরাট প্রতিদানের ওয়াদা রয়েছে।

১৩. খরচ করা মানুষকে মুত্তাকিদের কাতারে শামিল করে। দান-সাদকাকারীকে সৃষ্টিকুল মুহাব্বত করে।

১৪. দান-সাদকা দয়া-মায়া ও দানশীলতার আলামত।

১৫. দান-সাদকায় দোয়া কবুল এবং জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম।

১৬. দান-সাদকায় বালা মসিবত দূর করে দুনিয়াতে সত্তরটি খারাপ কাজের দরজা বন্ধ করে দেয়।

১৭. দান-সাদকা হায়াত ও মাল বৃদ্ধির মাধ্যম। সফলতা এবং রিজিকের প্রশস্ততার মাধ্যম।

১৮. দান-সাদকা রোগীর জন্য চিকিৎসা, ঔষধ ও সুস্থতা।

১৯. দান-সাদকা আগুনে পোড়া, পানিতে ডোবা ও অপহরণসহ (সব) অপমৃত্যুর প্রতিবন্ধক।

২০. দান-সাদকার প্রতিদান পাওয়া যায় চাই তা পশু-পাখিকেই দেওয়া হোক না কেন।

মনে রাখা জরুরি

দুনিয়ার আবশ্যক আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা হচ্ছে দান-সাদকা করা। আল্লাহ তাআলা দান-সাদকাকে (জাকাত) যেমন ফরজ করেছেন। আবার তা সবার জন্য বিশেষ নফল ইবাদত হিসেবেও সাব্যস্ত করেছেন। যারা এ কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখবে উল্লেখিত সব কল্যাণের দরজা তাদের জন্য উম্মুক্ত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে (ধন-সম্পদের মালিককে) ফরজ দান-সাদকা জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে বেশি বেশি নফল দান-সাদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com