নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে: সালাউদ্দীন আহমেদ

0

নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন আহমেদ।

বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর আলমাস মোড়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি আয়োজিত শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

সালাউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি আলমাস মোড় হয়ে কাজীর দেউরী, লাভ লেইন, জুবলী রোড, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালি হয়ে লালদিঘি পাড়ে শেষ হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব রহমান শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।

এ সময় সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন আমরা করেছিলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। সেই কেয়ারটেকার সরকার বিলুপ্ত করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নতুনভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রবর্তন করে। অন্তঃহীন সংগ্রাম, ত্যাগ তিতিক্ষা, রক্ত শ্রম এবং প্রাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই স্বাধীনতা, এই গণতন্ত্রের জন্য যারা যুদ্ধ করেছে, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম শহীদ রংপুরের সাঈদ, দ্বিতীয় শহীদ চকরিয়া পেকুয়ার সন্তান, আমার সন্তান ওয়াসিম। সমস্ত গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, আন্দোলনে, যুদ্ধে চট্টগ্রাম সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে।

‘কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন, সবকিছু এমনি এমনি এসেছে, তাহলে এটা ভুল কথা। মোট ৪৮৫ জন শহীদের মধ্যে এ গণঅভ্যুত্থানে, এ গণবিপ্লবে ৪২২ জন শহীদ বিএনপির নেতাকর্মী। ১১৩ জনের বেশি ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এ আন্দোলন সংগ্রামে সাতশ’র বেশি মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৪২৩ জন শুধু বিএনপির নেতাকর্মী। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে প্রায় ২৭০০ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তার মধ্যে শত শত মানুষ বিএনপির নেতাকর্মী।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যাকারীর আর কোনোদিন জায়গা হবে না। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের, গণহত্যাকারীদের কোনো রাজনীতি চলবে না। যদি গণহত্যাকারীদের রাজনীতি চলে, তাহলে বাংলাদেশ আবার পরাধীন হবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের এখানে তাবেদারি চলবে না। যদি সত্যিকারভাবে স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, যদি সাম্যভিত্তিক একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, যদি আইনের শাসনের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, তাহলে শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাদের পরস্পরের অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি দিতে হবে। কেউ আইনের চেয়ে বড় নন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, বিগত সতেরো বছর নির্যাতনের পরও বিএনপিকে স্তব্ধ করতে পারেনি। আগামী ১৭ বছর চেষ্টা করলেও পারবে না। রাত যত গভীর হয় ভোর তত নিকটে আসে। আওয়ামী লীগ মনে করেছিল ভোর বুঝি আর হবে না। কিন্তু সকাল ঠিকই হয়েছে। শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। শেখ হাসিনা মা-বোনদের জন্য কলঙ্ক। হাসিনার মতো স্বৈরশাসক ইতিহাসেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তাই বলে আমাদের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের কেউ যেন আশ্রয় না পায়। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেক টাকা। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দিয়েছে। তার শাসনামলে এই জাতিকে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণে আবদ্ধ করে গেছে। পাচার হয়ে গেছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। দুঃশাসনে সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়েছে। বর্তমান সরকার হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা আশা করবো, তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দেবে।

সভাপতির বক্তব্যে এরশাদ উল্লাহ বলেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। দেশ আজকে একটি নবতর স্বাধীনতা পেয়েছে। একবার আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পেয়েছি। আর এবার সত্যিকার অর্থে ৫ আগস্ট নতুন প্রজন্ম দেখতে পেলো, স্বাধীনতা কাকে বলে। মানবাধিকার ছিল না। এক ব্যক্তির শাসন ছিল সেখান থেকে আজ আমরা মুক্ত হয়েছি। গণতন্ত্রের যাত্রা পথের মুক্তিকে আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com