আওয়ামী লীগ শাসনামলের যেসব ঘটনা আসতে পারে ফারুকীর সিনেমায়
আওয়ামী লীগ শাসনামলের যেসব ঘটনা সিনেমায় আসতে পারে, সেগুলোর একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ওই সরকারের রেখে যাওয়া দমনমূলক নীতিমালাগুলো থাকলে সেসব সিনেমা হবে না। এমনকি সিনেমাকে স্বাধীন রাখতে হলে কী করা যেতে পারে সে বিষয়েও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এই নির্মাতা।
ফারুকী জানিয়েছেন ‘বিডিআর বিদ্রোহ’, ‘মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার’, ‘হাসিনা-জিয়াউল-তারেক সিদ্দিকীদের গুম’, ‘ব্রিগেডিয়ার আজমি-ব্যারিস্টার আরমানের হৃদয়বিদারক ঘটনা’ নিয়ে সিনেমা হতে পারে। তবে সেটা কি দেশের মানুষ চান? গত রোববার এসব প্রসঙ্গে ফেসবুকে একটি পোস্ট লেখেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘আপনি কি চান আমাদের ইতিহাস নিয়ে আওয়ামী গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে কেউ ফিল্ম করুক? কেউ তার ছবিতে প্রশ্ন করুক, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণে আমাদের উপস্থিতি ছিল না কেন? অথবা চান উল্টা দিকে কেউ বিএনপির ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে ছবি করুক? তাহলে সেন্সরবোর্ড নামক অথর্ব জিনিসটা বাতিল করেন!’
সেন্সরবোর্ড বাতিল করে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সে প্রসঙ্গে নির্মাতা ফারুকী লিখেছেন, ‘একটা রেটিং সিস্টেম চালু করা উচিত, যেখানে বলে দেওয়া হবে কোনটা অ্যাডাল্টদের জন্য, কোনটার প্যারেন্টাল গাইডেন্স লাগবে। প্রশ্ন আসতে পারে, অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি একটা ছবি বানায়, যেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চরিত্রকে রাজাকার দেখালো কোনো আওয়ামী অন্ধভক্ত ফিল্মমেকার, তখন? অথবা উল্টা দিকে আরেক অন্ধ ভক্ত একটা ছবি বানালো যেখানে বঙ্গবন্ধু ডিজইনফরমেশন দ্বারা আক্রান্ত হলো? এই বিষয় ঠেকানোর স্পষ্ট বিধান রেখেও নিশ্চয়ই বিধিমালা করা যাবে, যেখানে ফিল্মমেকাররা ইতিহাসকে প্রশ্ন করতে পারবে। পাশাপাশি ধর্মীয় কিছু সেনসিটিভ ব্যাপার সেইফগার্ড করার কথা নিশ্চয়ই বলবেন সরকারি কর্মকর্তারা। এটা নিয়ে তারা আগেও বলেছিলেন। সেখানেও কি বিধান রাখতে চান, স্পষ্ট ভাষায় রাখুন। ভেইগ টার্মে কিছু রাখা যাবে না, যেটার ব্যাখ্যা একশো রকম হতে পারে এবং এই সুযোগ নিয়ে সরকার কাউকে হয়রানি করতে পারে।’
বর্তমান সেন্সর নীতিমালা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘এখন যে সেন্সর নীতিমালাটা আছে, এটা এমনভাবে বানানো হয়েছে, যাতে যে দল ক্ষমতায় থাকবে, তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো ছবি যেন আটকে দেওয়া যায়। আমরা চাই, যে দলই সরকারে থাকুক, ফিল্মমেকারদের গলা যেন কেউ চেপে ধরতে না পারে।’ সদ্যসাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেন্সর প্রথার বিরুদ্ধে একমত হলেও ক্ষমতায় বসেই তিনি আগের ফিল্ম সেন্সর নীতিমালা বাতিল করেননি, বরং ওটিটির জন্যও একটি সেন্সর নীতিমালা নিয়ে আসলেন। এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফিল্মমেকারদের গলা চেপে ধরা, যাতে তাদের কোনো সমালোচনা না হয়। ফলে চলচ্চিত্র সেন্সর নীতিমালা সংশোধনের পাশাপাশি ওটিটি সেন্সরও বাতিল করতে হবে। আপনি আমাদেরকে খেলতে বলবেন নেটফ্লিক্স-প্রাইমের সাথে, আর হাত পা রাখবেন বেঁধে, এটা তো হয় না।’
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন নিয়েও কথা বলেন ফারুকী। তিনি লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্র সেন্সর নীতি সংশোধনের আগপর্যন্ত আপাতত কাজ চালানোর জন্য সেন্সরবোর্ডটা পুনর্গঠন করতে হবে। কিন্তু দয়া করে প্রাগৈতিহাসিক এফডিসির ততোধিক প্রাগৈতিহাসিক পরিচালক বা প্রযোজকদের এই কমিটিতে ঢোকানোর যে আজব অভ্যাস, সেটা থেকে বের হয়ে আসেন। বাংলাদেশের নতুন দিনের ফিল্মমেকাররা প্রত্যেকেই এদের ঈর্ষার শিকার। কমিটিতে সেনসিবল লোকজন নিন। অনুদান কমিটিও একই রকমভাবে দলীয় প্রোপাগান্ডা মেশিনের হাত থেকে উদ্ধার করেন।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ মুক্তি পায় গত বছর। তাতে প্রথমবারের মতো অভিনয়ও করেন তিনি। ২০১৬ সালের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তার বানানো সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ দেশে সেন্সর ছাড়পত্র পায়নি। দীর্ঘ বিরতির পর সনি লিভ নামের একটি বিদেশি ওটিটিতে মুক্তি পায় ছবিটি, যা এ দেশের মানুষের দেখার সুযোগ ছিল না। এই নির্মাতার বানানো সিরিজ ‘৪২০’ দেশের রাজনৈতিক অবস্থাকে নগ্ন করে তুলে ধরেছিল। সে কারণে মাঝপথে সিরিজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।