‘এই যুবারাই একদিন বড়দের বিশ্বকাপ জিতবে’

0

দারুণ অধিনায়কত্ব আর পারফরম্যান্সে দেড় যুগ আগে সাড়া ফেলেছিলেন নাফীস ইকবাল। এরপর নেতৃত্ব আর পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছিলেন সোহরাওয়ার্দী শুভ, মাহমুদুল হাসান কিংবা এনামুল হক বিজয়ও। নামগুলো অনূর্ধ্ব-১৯ দল পর্যন্ত যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে পরবর্তী সময়ে সেটা ধরে রাখতে পারেননি তারা। বয়সভিত্তিক দলে বাংলাদেশের প্রতিভার অভাব ছিল না কখনই। যুব দলে থাকতে মুগ্ধতা ছড়ানো পারফরম্যান্সে আবেশ ছড়িয়েছেন অনেকেই। এদেশে বয়স

বাড়ার সঙ্গে একসময় অনেক প্রতিভাই হারিয়ে যায়। রোববার পচেফস্ট্রুমে যেভাবে প্রথমবারের মতো দেশকে যুব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন আকবর আলীরা, সেটা বহুদিন মনে রাখবে বাংলাদেশ। বিসিবি আকবরদের পূর্বসূরিদের ধারায় যেতে দিতে চায় না। ছোট বিশ্বকাপে যে ইস্পাতকঠিন স্নায়ু দেখিয়েছেন আকবর-শরিফুলরা, সেটা আরও দৃঢ় করতে নতুন পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বোর্ড।

তাদের হাত ধরেই বড়দের বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন বাংলাদেশের। ভারতকে হারিয়ে যুব টাইগাররা যে ইতিহাস গড়েছে তাতে বাংলাদেশ আরও বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। সাবেক জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক রকিবুল হাসান, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, আকরাম খান, এনামুল হক বিজয়রা মনে করছেন পরিকল্পিত কাঠামোই ধরে রাখতে পারে এই অমিত প্রতিভাদের। বিজয়ী দল দেশে ফেরার পর তাদের বরণ করে নেবে জাতি, দেয়া হবে বীরোচিত সংবর্ধনা। সেই অপেক্ষাতে আছে পুরো জাতি। এতকিছুতেও তাদের মাথা ঘুরে যাবে না এই প্রত্যাশা সবার।

রকিবুল হাসান মনে করছেন, মানসিকতা ধরে রাখাই হবে আসল কাজ। তিনি বলেন, ‘একটা অর্জন ছেলেরা করেছে। যেটা করেছে আগে কখনও করতে পারেনি বাংলাদেশ। এতেই প্রমাণ করে ছেলেদের কতটা প্রতিভা আছে। সবকিছুরই একটা পরিবর্তন হয়। আমাদেরও ঝরে যাওয়া থেকে পরিবর্তন আনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শক্ত কাঠামো দাঁড় করাতে হবে। মানসিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য বিসিবিকে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এই ছেলেগুলোকে যে প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে হবে।’

গাজী আশরাফ হোসেন লিপু মনে করছেন একটা বড় সাফল্য অর্জন করেছে তারা। এটাকে নিয়মিত করতে পারলেই শুধু আসল সাফল্য আসবে। এই অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিজেদের প্রমাণ করেছে। দলগত পারফম্যান্স, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স, দৃঢ় মানসিকতা, নেতৃত্ব, শক্তি-স্কিল- সবই দেখিয়েছে এই বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক যে ঝরে যাওয়ার শঙ্কা আমাদের অনেক বেশি। ঝরে যাওয়াতেই এখন আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু সেখান থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। এই ছেলেরা একটা পথ দেখিয়েছে। সেটাই ধরে রাখতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো উন্নতি করতে হবে। একাডেমির সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। জেলা, বিভাগীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর সঙ্গে কোচ, ট্রেনার, ম্যানেজমেন্টে শক্ত ভিত তৈরি করতে হবে। একটা পূর্ণাঙ্গ কাঠামো দাঁড় করাতে হবে। কিছু কিছু হচ্ছে; কিন্তু প্রয়োজন পুরোটাই।’

গাজী আশরাফ মনে করছেন, মনসিকতার পরিবর্তন একটা বড় বিষয়। তিনি বলেন, ‘এই দলের অনেকেই ঝরে যাবে, আবার অনেকে এই ট্রফি জয়ের শক্তি নিয়েই আরও শক্তভাবে এগিয়ে যাবে। ফাইনালের পর দেখলাম আকবর ভালো ইংলিশ বলছে, আরেকটা ছেলে শরিফুলের বাংলা অনুবাদ করে বলছে। এসব একেকটা অর্জন। নতুন তারকা তৈরি হচ্ছে। আগে সাকিব-তামিম হতে চাইত, এখন অনেকে আকবর-শরিফুল হতে চাইবে। পরিচর্যার প্রক্রিয়া শক্ত কাঠামোয় দাঁড়াতে পারলে ঝরে পড়ার সংখ্যাও কমে যাবে। প্রক্রিয়াটা ধরে রাখতে পারলে এই যুবারাই একদিন বড়দের বিশ্বকাপ জিতবে।’

এদিকে সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান জানালেন এই যুব দলের ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে আনার চেষ্টা করবে বিসিবি। তিনি বলেন, ‘যারা অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলে, আমরা তাদের জাতীয় দলের জন্য তৈরি করার চেষ্টা করি। এদের সুযোগ আছে। এরা যদি ভালো খেলতে পারে, তাহলে সবার জন্য দরজা খোলা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন কাজ হবে ছেলেদের ভালো পরিকল্পনা দেয়া। তাদের ট্রেনার, ফিজিও, কোচ বা সুবিধা কী দিচ্ছি সেটা দেখা। তারপর ভালো উইকেটে খেলানো, বিদেশে ভালো দলের সঙ্গে খেলানো। একই সঙ্গে তাদেরও বড় দায়িত্ব নিতে হবে।’

অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে ঝরে যাওয়ার তালিকা যেমন বেশ লম্বা, তেমনি সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালরা দেখিয়েছেন কীভাবে নিজেদের এগিয়ে নিতে হয়। সেই ধারায় মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাইফ হাসানদেরও খুঁজে পেয়েছে বিসিবি। এখন থেকে যুবাদের আরও স্কিল বাড়ানোর লক্ষ্য বাংলাদেশের। তবে সোহরাওয়ার্দী শুভ, এনামুল হক বিজয়, মাহমুদুল হাসানদের মতো প্রতিভাবান নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি।

২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেয়া এনামুল হক বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করেছে। নিজেরা বিশ্বাস করেছে তারা বড় কিছু করতে পারবে। এই বিশ্বাসটাই অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে আকবরদের।’ তিনি বলেন, ‘একটা পরিবর্তন এখান থেকে আসবেই। তাদের হাত দিয়ে শুরু হয়েছে, তারা সেটা পরবর্তী সময়েও ধরে রাখার চেষ্টা করবে। তারা শুধু নিজেদের মানসিকতা ধরে রাখতে পারলেই তাদের নিয়ে চিন্তা করা লাগবে না।’ এদিকে বিশ্বকাপ জয়ের পর আগামীকাল দেশে ফিরবে অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এরপর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও তাদের নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানাবেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com