‘হরিজন কলোনি উচ্ছেদ করে তাদের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে’
‘হরিজন কলোনি উচ্ছেদ করে তাদের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। মিরনজিল্লা হরিজন কলোনি উচ্ছেদে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী বুধবারও হামলা করেছে। তাদের উচ্ছেদ বন্ধ করে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা।
নাগরিক সংলাপে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন উন্নয়ন গবেষক ও টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার আমিনুর রসুল। এ সময় বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ লাল, মহাসচিব নির্মূল চন্দ্র দাস, ঢাকা মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনুদাস, ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মহেশ লাল রাজু।
বক্তারা বলেন, রাজধানীর মিরনজিল্লা হরিজন সম্প্রদায়ের কলোনি সন্ত্রাসী কায়দায় উচ্ছেদ করা হচ্ছে। বুধবার স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী ওই কলোনিতে হামলা চালিয়েছে। এসব দলিত জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন থেকে বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করা এসব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অধিকাংশই অন্যের জায়গায় বসবাস করে। তাদের স্থায়ীভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা, তাদের মানবাধিকার সুরক্ষা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।
ধারণাপত্রে বলা হয়, বর্ণভিত্তিক, বংশভিত্তিক ও পেশাগত বিবেচনায় সামাজিক শ্রেণি-বিন্যাসের আলোকে বিভেদ ও বঞ্চনার ইতিহাস বাংলাদেশে অতি পুরোনো। যদিও দেশটি স্বাধীন হয়েছে তবুও বঞ্চনার প্রকোপ বিলীন হয়নি। এই বঞ্চিতদের এক বড় অংশই হরিজন।
প্রাক-গবেষণা এবং অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভৌগোলিকভাবে হরিজনরা এ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন। আবার নৃতাত্ত্বিকভাবেও তারাও বহুভাবে বিভক্ত। ফলে হরিজনদের অবস্থান নানান ভৌগোলিক, ধর্মীয় ও জাতিগত বিশেষত্ব রয়েছে এদেশে।
ধারণাপত্রে একটি সমীক্ষায় তুলে ধরে বলা হয়, যে সমাজে অস্পৃশ্যতা যত বেশি সে সমাজে দারিদ্র্যের প্রকোপও তত বেশি। উন্নয়নবিদদের এ কথাটা মনে রাখতে হবে, হরিজনদের জন্য যেকোনো উন্নয়ন পরিকল্পনায়, বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে অন্যান্যের মতো একই কর্মসূচি নিলে তা সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং যেকোনো কর্মসূচিতে তাদের সরাসরি যুক্ত করে অস্পৃশ্যতাজনিত বৈষম্যটি মাথায় রেখে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
সমীক্ষায় মাত্র ৮ শতাংশ হরিজন পাওয়া গেছে, যারা পুরোপুরি পাকা দালানে থাকেন এবং এর মালিকানাও সচরাচর সরকার না অন্য কারো। এখনো ঘর ও মাটির ঘরে থাকেন ১৮ শতাংশ হরিজনদের পরিবার। ৫৪ শতাংশ খানায় পুরো পরিবার মাত্র একটি কক্ষে থাকে। এসব দৃশ্য থেকে হরিজনদের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি আঁচ করা যায়। হরিজনদের মধ্যে ভূমিহীনতা ব্যাপক।