ঋণখেলাপিদের ঋণের সুদ মওকুফ করা খুবই আপত্তিকর: ফরাসউদ্দিন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, এবারের বাজেটে আইএমএফের প্রভাব থাকায় পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনায় তেমন দিক নির্দেশনা দেখা যায়নি। অর্থপাচার, দুনীর্তি ও ঋণখেলাপি চক্র রোধ করা না গেলে এটিই সরকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
বড় বড় ঋণ খেলাপিদের ঋণের সুদ মাফ করা হচ্ছে। ঋণখেলাপিদের ঋণের সুদ মওকুফ করা খুবই আপত্তিকর।
শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানী তেজগাঁয়ের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কপোর্রেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো যে ৫০ হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে তা খেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা উচিত। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। বাজেট বক্তব্যে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বললেও তা অর্জিত হবে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা মজুদ ও সরবরাহের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় খাদ্যাভাবে ৭৪ সালে বহু লোকের মৃত্যু হয়। তাই মজুদ ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। বাজেটে বিদেশ থেকে যে ৯৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে এটা মারাত্মক ক্ষতিকর অস্ত্র হতে পারে। সরকার দেশি—বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ায় জোর দেয়া উচিত। ব্যাংক থেকে অধিক পরিমাণে ঋণ নিলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ পাবে না, বিনিয়োগ আরও স্থবির হয়ে যাবে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত শক্তিশালী হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাজেট আসে বাজেট যায়। বাজেটের পর সাধারণ মানুষ দুশ্চিন্তায় থাকে বাসা ভাড়া, যাতায়াত ব্যয়, দ্রব্যমূল্য, সন্তানের লেখাপড়া খরচ, চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে কি না তা নিয়ে। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হলে বিপাকে পড়ে সীমিত আয়ের মানুষেরা। তবে প্রতি বছর বাজেটের পরে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়া একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। দিনে দিনে আয় বৈষম্য বেড়ে চলছে। ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্যের কারণে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।
মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলে তা হবে দুঃখজনক। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা, অর্থপাচার, লাগামহীন দুনীর্তি রোধে করণীয় নিয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি এ বাজেটে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা, পুঁজিপাচার, হুন্ডি বন্ধসহ ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে এ বাজেটে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। কর ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, বৈষম্য, দুনীর্তি বজায় রেখে বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। কর প্রশাসনে সুশাসন ও দক্ষতা বাড়ানো না গেলে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
কিরণ আরও বলেন, অনেক সৎ ব্যবসায়ী ন্যায্যভাবে কর দিতে চাইলেও এনবিআরের প্রক্রিয়াগত জটিলতায় অথবা কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় ন্যায্য কর প্রদান করতে পারছে না। দেশে বর্তমানে মোট অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। অথচ দেশি—বিদেশি মিলিয়ে বর্তমান ঋণের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। ক্রমান্বয়ে আমাদের কঠিন শর্তের ঋণ বাড়ছে, ডেট সার্ভিসিংয়ের বোঝা বাড়ছে। সে কারণে আমরা যে টাকাটা ঋণ হিসেবে নিচ্ছি তা সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই সুশাসন, জবাবদিহিতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।