যে চিন্তা মানুষকে সফলতা ও সঠিক পথ দেখাবে
অন্যায় থেকে ফিরে থাকা এবং সঠিক পথের অনুসারী হওয়া ঈমানের একান্ত দাবি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নারী-পুরুষের জন্য এমন কিছু চিন্তা-উপলব্ধি রয়েছে, যা মানুষকে অন্যায় পথ থেকে দূরে রাখে। সঠিক পথের সন্ধান দেয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এ বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন-
– ‘তোমরা জেনে রাখ! দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা, শোভা-সৌন্দর্য, পারস্পরিক গর্ব-অহংকার আর ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা মাত্র। তার উদাহরণ হলো- বৃষ্টি; আর তা থেকে উৎপন্ন শষ্যাদি। (যা) কৃষকের মনকে আনন্দে ভরে দেয়; তারপর তা পেকে যায়; তখন তুমি তাকে হলুদ বর্ণ দেখতে পাও, পরে তা খড়-ভুষি হয়ে যায়। (আর আখেরাতের চিত্র অন্যরকম, পাপাচারীদের জন্য), আখেরাতে আছে কঠিন শাস্তি, (আর নেককারদের জন্য আছে) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার বস্তু ছাড়া আর কিছুই না।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ২০)
– ‘তোমরা এগিয়ে যাও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্য, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের প্রশস্ততার মতো। তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাদের জন্য; যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলদের প্রতি ঈমান এনেছে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছে করেন, তা দেন। আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ২১)
উল্লেখিত আয়াত থেকে মানুষের শিক্ষা নেয়া উচিত, যে এ দুনিয়া আসলেই মরীচিকা। ধোকার বস্তু ছাড়া কিছু নয়। দুনিয়ার ধন-সম্পদ, জ্ঞান-বুদ্ধি, স্ত্রী-সন্তান সবাই মহান আল্লাহর নেয়ামত। কিন্তু মানুষ এসব নিয়ে কমই তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। বরং এসব নিয়ে মানুষের অহংকারের শেষ নেই। এ মুহূর্তের জন্যও মানুষ মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না।
মানুষ যে ধন-সম্পদ, জ্ঞান-বুদ্ধি, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গর্ব ও অহংকার করে, এসবের কোনো কিছুই তার সঙ্গে যাবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা তার মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মানুষের চিন্তা ও উপলব্দি
দুনিয়ায় মানুষের যেসব চিন্তা ও উপলব্দি খুবই জরুরি, তাহলো মৃত্যুর আগের জীবন নিয়ে ভাবা এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করা। এ বিষয়গুলো নিয়ে গভীর মনোযোগ সহকারে চিন্তাভাবনা করা। তাহলো-
– মৃত্যুর পর দাফন হলে তার সুন্দর দেহ থাকবে না। তা পচে-গলে মাটিতে মিশে যাবে।
– মৃত্যুর পর লাশ দাফন করার পরপরই তার কষ্টে অর্জিত রেখে যাওয়া ধন-সম্পদ নিয়ে ওয়ারিশরা ভাগাভাগিতে ব্যস্ত হয়ে যাবে। বণ্টন করে নেবে।
– সুন্দরী হয়তো ইদ্দত পালন তথা নির্ধারিত সময় ৪ মাস ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার নতুন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে। আবার স্বামীও স্ত্রীর মৃত্যুর পর নতুন বিয়ের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করবে না।
– মৃত্যুর পর দিন যতই গড়াতে থাকবে, কলিজার টুকরো ছেলে-মেয়ে আত্মীয়-স্বজন আস্তে আস্তে তোমার স্মৃতি ভুলতে থাকবে। হাসি আর খেলায় মেতে উঠবে।
মনে রাখা জরুরি
মৃতব্যক্তি দুনিয়ার কোনো সম্পদই ভোগ করতে পারে না। আর তা তার সঙ্গেও যায় না। তবে হ্যাঁ, দুইটি জিনিস ছাড়া। তাহলো-
– একদিকে বদ কাজের পাপের বোঝা। আর অন্যদিকে
– তার ভালো কাজের উত্তম নেকগুলো তার সঙ্গে যাবে।
মানুষের করণীয়
মৃত্যুর আগে এসব ধন-সম্পদ, জ্ঞান-বুদ্ধি, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দুনিয়াতেই সঠিক চিন্তা ও উপলব্দির মাধ্যমে সঠিক পথে পরিচালিত করা। পরকালের চিন্তা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি মনে জাগ্রত রাখা। তবেই পাপের বদলে পূণ্য পাবে মুমিন। সুখময় হবে পরকালীন জীবন।
দুনিয়ার প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা ও উপলব্দিই দিতে পারে সঠিক পথের সন্ধান। আর তাতেই মানুষ দুনিয়া ও পরকালে পাবে সফলতা।
সুতরাং মুমিন মুসলমানে উচিত, অন্ধকার কবরে যাওয়ার আগেই এসব বিষয় নিয়ে বেশি বেশি চিন্তা-ফিকির করা। সঠিক পথে নিজেকে পরিচালিত করা। দুনিয়াকে ধোঁকা ও মরিচীকা মনে না করে নেক আমলে নিয়োজিত করা। আর আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করা-
হে আল্লাহ!আমরা দিন-রাত যে পাপ করছি। তুমি তা থেকে আমাদের হেফাজত কর। পাপের গোনাহ থেকে মুক্তি দান কর। মৃত্যু আসার আগে দুনিয়ার জীবনকে সঠিক কাজে লাগানোর তাওফিক দান কর। আমিন।