সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা
সার্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (১ জুলাই) থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ অচলাবস্থার কারণে সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে তা মেকআপ করার কথা জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের পাশাপাশি হল প্রাধ্যক্ষের অফিস, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ থাকবে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ পরান বলেন, শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে আন্দোলন করছেন। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপর। শিক্ষকদের আন্দোলন যৌক্তিক হলেও কোনো অগ্রসর চিন্তাশীল রাষ্ট্রে এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা অযৌক্তিক। এতে সেশনজটের শঙ্কা যেমন বাড়ছে, তেমনি আমরা শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
আরবি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী নুরুল্লাহ আলম নুর বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন এবং কর্মবিরতির ফলে আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে, যা সেশনজটের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় পড়াশোনা ও গবেষণা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। পাশাপাশি অনলাইন এবং সন্ধ্যাকালীন কোর্স বন্ধ থাকায় কর্মজীবী শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে আমাদের উচ্চশিক্ষা এবং ক্যারিয়ার পরিকল্পনা ব্যাহত হবে এবং মানসিক চাপ বাড়বে। তাই শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি।
রাবির গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির হোসাইন বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলনে প্রথমত আমাদের একাডেমিক কারিকুলামে ব্যাঘাত ঘটছে। করোনার কারণে সব ডিপার্টমেন্টেই সেশনজট বেধে আছে। সেগুলো আরও ত্বরান্বিত হতে পারে। এছাড়া অনেক ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষা চলমান। তাদের পরীক্ষা বন্ধ হয়ে আছে। গরমের ও ঈদের ছুটি একসঙ্গে হওয়ায় আমরা অনেক ছুটি পেয়েছি। এখন আবার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ভেতরে আসতে পারছে না।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সেশনজটের মতো কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করছি। আর যদি হয়ও তাহলে আমরা তা অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে মেকআপ করার চেষ্টা করবো। ছুটির দিনে আমরা ক্লাস নিয়ে এটা করতে পারি। করোনা পার করে যেমন আমরা সবকিছু গুছিয়ে নিতে পেরেছি এবারও পারবো।
তিনি আরও বলেন, এ আন্দোলন কিন্তু আমরা শিক্ষকদের জন্য করছি না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্যই করছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য করছি। গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি করে আসছি। তাতে কোনো কাজ হয়নি। কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছি।