চলুন জেনে নেওয়া যাক শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে কোন কোন লক্ষণ দেখা দেয়-
পুরুষের চেয়ে নারীদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বেশি দেখা দেয়। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বেড়ে যায় ও অস্টিওপোরোসিস হয়। বিশেষ করে মেনোপজ পরবর্তী সময় হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে নারীদের পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ও ভিটামিন ডি কম গ্রহণের ফলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত ক্যালসিয়াম গ্রহণ ও পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য। চলুন জেনে নেওয়া যাক শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে কোন কোন লক্ষণ দেখা দেয়-
মাসিকের আগে প্রচণ্ড পেটে ব্যথা
ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে ভুগছেন এমন নারীরা পিরিয়ডের সময় প্রচুর ব্যথার মধ্য দিয়ে যায়। হাইপোক্যালসেমিয়ার ফলে গুরুতর উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে এই লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
দাঁতে ব্যথা
ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায়, তাহলে দাঁতে অসহ্য ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে ভালো মুখের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার পরে পিরিয়ডেন্টাল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
পেশীতে ব্যথা
ক্যালসিয়াম শরীরের পেশী ফাংশনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশেষ করে পেশী সংকোচন ও শিথিলকরণের জন্য। তাই শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে পেশীর দুর্বলতা বাড়ে। ফলে নারীদের শরীরে ব্যথা, পেশীর ক্র্যাম্প ও খিঁচুনি হতে পারে, যা যন্ত্রণাদায়ক।
ভঙ্গুর নখ
ভঙ্গুর নখ আপনার শরীরে কম ক্যালসিয়ামের মাত্রার লক্ষণ। ক্যালসিয়াম নখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি দেখে আপনার নখ দুর্বল ও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়েছে।
ক্লান্তি
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরও শক্তির মাত্রা কম থাকে। ক্যালসিয়াম প্রধানত শক্তি বিপাকের সঙ্গে জড়িত। এক্ষেত্রে অলসতা ও ক্লান্তি বাড়তে পারে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে যে জটিলতা দেখা দিতে পারে
নারীদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বিভিন্ন গুরুতর জটিলতার কারণ হতে পারে। যেমন- অস্টিওপোরোসিস, এটি এমন একটি অবস্থা যা দুর্বল হাড় ও ফ্র্যাকচার ঝুঁকি বাড়ায়।
অন্যান্য জটিলতার মধ্যে আছে অস্টিওপেনিয়া (নিম্ন হাড়ের ঘনত্ব), হাড়ের ব্যথা ও পেশীর ক্র্যাম্প ও গুরুতর ক্ষেত্রে রিকেটের ঝুঁকি বাড়ে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও দাঁতের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে দাঁত ভঙ্গুর হয়ে যায় ও গহ্বরের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কম ক্যালসিয়াম মাত্রা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাও বাড়াতে পারে যেমন- উচ্চ রক্তচাপ। সামগ্রিক হাড় ও কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
নারীদের মধ্যে কেন বেশি ক্যালসিয়ামের অভাব ঘটে?
এর মূল কারণ হলো নারীদের মধ্যে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন- দুগ্ধজাত খাবার ও শাক-সবজি কম খাওয়া। অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে আছে ভিটামিন ডি’র অভাব, যা ক্যালসিয়াম শোষণকে ব্যাহত করে।
এছাড়া জীবনধারায় তারতম্য, উচ্চ ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল সেবন ও নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের দীর্ঘায়িত ব্যবহার (যেমন- কর্টিকোস্টেরয়েড) অবদান রাখতে পারে। একই সঙ্গে গর্ভাবস্থা ও স্তন্যপান করানোর ফলে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়, ফলে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ না করলে পরবর্তী সময়ে এর ঘাটতি হতে পারে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে কী কী খাবেন?
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার মজবুত হাড় ও দাঁতের জন্য অপরিহার্য। দুগ্ধজাত পণ্য যেমন দুধ, পনির ও দই সুপরিচিত উৎস। যারা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলেন, তাদের জন্য ফোর্টিফাইড উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ (বাদাম, সয়া, বা চালের দুধ) ও জুস চমৎকার বিকল্প।
এর পাশাপাশি পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। অন্যান্য উত্সের মধ্যে আছে টফু, বাদাম ও তিলের বীজ। এছাড়া সার্ডিন ও টিনজাত সালমন মাছেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম মেলে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া