হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বাড়ছে বিশ্বব্যাপী
হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে এখন শুধু বয়স্কদের মধ্যেই নয় বরং কমবয়সীরাও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন। বয়স ও জীবনধারণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের কারণেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় সোমবারে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বেশি ঘটে। ২০২৩ সালে ৯ জুন ম্যানচেস্টারে ব্রিটিশ কার্ডিওভাসকুলার সোসাইটি (বিসিএস) সম্মেলনে উপস্থাপিত হয় নতুন এই গবেষণা।
বেলফাস্ট হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ার ট্রাস্ট ও আয়ারল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস’র চিকিৎসকরা এই গবেষণা করেন। আয়ারল্যান্ড দ্বীপের (আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র ও উত্তর আয়ারল্যান্ডসহ) হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১০ হাজার ৫২৮ রোগীর রেকর্ড পরীক্ষা করেন গবেষকরা।
২০১৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হার্ট অ্যাটাকের জন্য ভর্তি করা রোগীদের উপর সমীক্ষা করা হয়। এ ঘটনাকে চিকিৎসার ভাষায় এসটি অর্থাৎ সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (এসটিইএমআই) নামে পরিচিত।
যখন হৃদযন্ত্রের প্রধান করোনারি ধমনী, যা আপনার হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ করে সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ হয়ে যায় তখনই হার্ট অ্যাটাক ঘটে। জরুরি যত্ন ছাড়া এসটিইএমআই মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
গবেষণা বলছে, যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ গুরুতর হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদেরকে বাঁচাতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট (গুলি) এর মাধ্যমে অবরুদ্ধ করোনারি ধমনী পুনরায় খোলা ও হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালান চিকিৎসকরা।
গবেষকরা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখেন কর্ম সপ্তাহের শুরুতে এসটিইএমআই হার্ট অ্যাটাকের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। যার হার সোমবারে সর্বোচ্চ (১৩ শতাংশ বাড়ে)।
রবিবারের চেয়ে সোমবারে হার্ট অ্যাটাক নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর হার বেশি। গবেষকরা একে ‘ব্লু সানডে’ বলে অভিহিত করেন। তবে এই প্রভাবের পেছনের সঠিক কারণ সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি।
কী বলছেন গবেষকরা?
কার্ডিওলজিস্ট ডক্টর জ্যাক লাফান, যিনি বেলফাস্ট হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ার ট্রাস্টের গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি বলেছেন ‘আমরা সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় সোমবারে গুরুতর হার্ট অ্যাটাক অর্থাৎ এসটিইএমআই এর ঘটনা বেশি ঘটার তথ্য খুঁজে পেয়েছি। তবে কেন এটি ঘটে, তা জানার জন্য আরও গবেষণা জরুরি।’
এ বিষয়ে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের রায় হলো, যদিও এসটিইএমআই হার্ট অ্যাটাক সোমবারে হওয়ার ঝুঁকি বেশি তার মানে এই নয় যে সপ্তাহের বাকি সময়ে এটি হওয়ার ঝুঁকি নেই। তাই সবারই সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সবারই ধারণা রাখতে হবে।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের (বিএইচএফ) মেডিকেল ডিরেক্টর প্রফেসর স্যার নীলেশ সামানি বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্যে প্রতি পাঁচ মিনিটে প্রাণঘাতী হার্ট অ্যাটাকের কারণে অন্তত একজন হলেও ভর্তি হন, তাই হার্ট অ্যাটাক কীভাবে ও কেন হয় সে বিষয়ে সবাইকে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে ও সচেতন হতে হবে।’
সম্ভাব্য কারণ
সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় সোমবারে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বেশি হওয়ার সুস্পষ্ট কারণ এখনও গবেষকদের অজানা। তবে এ বিষয়ে ডক্টর জ্যাক লাফানের এক বক্তব্য এই গবেষণার সম্ভাব্য প্রভাবগুলোর উপর আরও আলোকপাত করে।
তার মতে, ‘আমরা সোমবারে গুরুতর হার্ট অ্যাটাকের উচ্চ ঝুঁকি খুঁজে পেয়েছি। ঘটনাটি পশ্চিমা বিশ্ব জুড়ে আগেও বর্ণিত হয়েছে। আমরা জানি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঘটনা শীতকালে ও সকালের প্রথম দিকে বেশি ঘটে।’
‘ঠিক তেমনই ধারণা করা হচ্ছে, এক্ষেত্রে সার্কাডিয়ান ছন্দ সঞ্চালনকারী হরমোনগুলো প্রভাবিত হওয়ার কারণেই হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঘটনা হয়তো সম্পর্কযুক্ত।’
‘আর সোমবারে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বেশি হওয়ার পেছনের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে সপ্তাহের প্রথমদিকের কাজের চাপ। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের বেড়ে যাওয়ার কারণেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়ে।’
সূত্র: ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন.অর্গ