শিক্ষাজ্বরে পাল্টে গেল কোরিয়া

0

আধুনিক কোরিয়া ১৯৫০ এর দশকে বিশ্বের সবচেয়ে গরীব,নিরীহ, জরাজীর্ণ, যুদ্ধবিধ্বস্ত, অশিক্ষিত, নিরক্ষর মানুষের দেশ ছিল। আর সেই দেশেই বর্তমান বিশ্বের মিরাকল।

তাদের মিরাকলের মূল জীয়নকাঠি উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা। কয়েকবছর ধরে দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের সেরা শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে এই প্রযুক্তির দেশটি।

গতকাল গুগলে বিশ্বের একহাজার র‍্যাংকিং বিশ্ববিদ্যালয় দেখলাম। যার মধ্য কোরিয়ার ৩৫টি রয়েছে।

দেখুন ১৯৫৩ থেকে ২০২০– এই ৬৭ বছরে কোরিয়ার পথচলা একেবারেই মিরাকলে মতো। কোরিয়া তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাজিয়েছে প্রাণের বর্ণিল সাজে, সুদূরিকা দিয়ে। জাতির বীজ রুপনের ধাপ হিসেবে। সকলে জানেই কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বখ্যাত ও গবেষণাপ্রসূত।

বিশ্ব শিক্ষাব্যবস্থার র‌্যাংকিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান নিয়মিত হয়ে উঠেছে। সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কাইস্ট, কোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইয়নসে ইউনিভার্সিটি, হংগিক ইউনিভার্সিটির মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার আলো বিকিকিনি করছে কোরিয়া তথা বিশ্বজুড়ে।

প্রকৌশল বিদ্যা আর গবেষণার মাধ্যমে নানা, উদ্ভাবনে, উৎকর্ষে তারা প্রতিযোগিতা দিচ্ছে সমানতালে বিশ্বের দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।

কথা প্রসংগে কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি সম্পন্নকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.সাইফুল হক ফারুকী বলেছিলেন, কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চমকপ্রদ দিক হচ্ছে উৎসর্গিত, গবেষণা নির্ভর।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানিয়েছিলেন,সারাদিন ল্যাবে পড়ে থাকতে হয়,সুপারভাইজার তদারকি করেন সবসময়।

তাছাড়া কোরিয়ান শিক্ষকদের গবেষণা জ্বরের কারণ এখানকার ছাত্রদের মেধাবী করে তুলেছে। উচ্চমানসম্পন্ন শিক্ষকই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রেষিত করে তুলেছে। এ দেশের উচ্চশিক্ষার শিক্ষার মান গবেষণার বহুমুখিতাই বিশ্বব্যাপী সমাদৃত, নন্দিত।

তৃতীয় বিশ্ব থেকে উন্নত বিশ্বের ছাত্রছাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে কোরিয়ার উচ্চশিক্ষার মাঠে।

কোরিয়ান পরিবারগুলো সন্তানকে উচ্চ শিক্ষাদানে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে, সন্তান গঠন করার জন্য সর্বস্ব উজাড় করে। তারা সন্তান মানুষ করাকে জাতীয় প্রজেক্ট মনে করে।কোরিয়ান আমজনতার শিক্ষা শিক্ষণের ওপর অসীম অপার আগ্রহ।

শিক্ষা তাদের রক্তের সঙ্গে মিশ্রিত। সত্যকার অর্থে কোরিয়ানদের মধ্যে শিক্ষার এই প্রবল আগ্রহ সময়ের অংকনে। বিশ্বের উদারমনা প্রগতিশীল শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে মিশেল রেখে কোরিয়া তার ফোকাস নির্ধারণ করে এই পর্যায়ে এসেছে।

টোটাল জনশক্তির শেখার আগ্রহ,রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের যুগসি শিক্ষানীতি। রাষ্ট্রের চিন্তকরা উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কার্ণিসে আত্ননিয়োগ করেছে। এই তিন দশকের মধ্যেই টেকনিক্যাল শিক্ষায় যে বিনিয়োগ করেছে ফেরত আসে কয়েক লাখ গুণে। তৈরী হয় দক্ষ কোরিয়ান টেকনিশিয়ান।

এরাই বিনির্মাণ করে আধুনিক কোরিয়া।

সরকার পাশাপাশি জিডিপির ৫% বিনিয়োগ করেছে গবেষণা।যুগোপযোগী টেকনিক্যাল শিক্ষা ও গবেষণায় এই শতাব্দীতে সেরা কোরিয়া।

দেশকে উন্নত করতে, পর্যাপ্ত টেকনেশিয়ান তৈরী করতে বছরে ৫০ হাজার টেকনিশিয়ান তৈরীর জন্য প্রত্যেক প্রদেশে কমপক্ষে ১টি করে মোট ১১টি টেকনিক্যাল স্কুল তৈরী করে। যার ফলাফল পেতে কোরিয়ার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি।

ম্যাজিক পন্থায় দাঁড়িয়ে গেল এশিয়ার এই দেশটি। এখন কোরিয়ানরা গর্ব করে বলে উরি নারা (আমাদের দেশ) উরি হাংগুগিন (আমরা কোরিয়ান)। আজ তাই কোরিয়ানরা জাতি হিসেবে সফল। উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে ও সফল শিক্ষা ব্যবস্থার পেছনে কাজ করেছে সরকারের যুগসই পলিসি আর গণমানুষের শিক্ষাপীড়া বা শিক্ষাজ্বর।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com