মোদীর মন্ত্রিসভায় শরিকদের মধ্যে কে কে মন্ত্রিত্ব পেলেন-
টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তার সঙ্গে শপথ নিয়েছেন নতুন মন্ত্রিসভার আরও ৭১ সদস্য। রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় তাদের শপথবাক্য পাঠ করান ভারতীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
ভারতের গত দুই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও এবার ২৭২ আসনের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারেনি বিজেপি। ফলে সরকার গড়তে জোট শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের। এর প্রভাব দেখা গেছে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও। মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নিয়েছে টিডিপি, জেডিইউ, শিবসেনা, এলজেপিসহ প্রায় সব প্রধান মিত্র।
রোববার শপথ নেওয়া নেতাদের মধ্যে ৩০ জন হয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, পাঁচজন স্বতন্ত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে ১১টি পদই পেয়েছেন বিজেপির মিত্ররা। তবে কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিজেপির শরিকদের মধ্যে কে কে মন্ত্রিত্ব পেলেন-
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
এইচডি কুমারস্বামী: সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার ছেলে এইচডি কুমারস্বামী জনতা দলের (সেক্যুলার) নেতা এবং কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ২০০৬ সালে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন এবং বিজেপির সঙ্গে জোট সরকারের নেতৃত্ব দেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে ক্ষমতায় বসেন তিনি।
জিতন রাম মাঞ্জি: ১৯৮০ সাল থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া এই দলিত নেতা ২০১৪-১৫ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার (এইচএএম) এ নেতা ছিলেন রাজ্যের মুসাহার সম্প্রদায়ের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। বিহারে তিনি বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং একাধিক মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
লালন সিং: চারবারের এমপি লালন সিংয়ের আসল নাম রাজীব রঞ্জন সিং। ৬৯ বছর বয়সী এ নেতা জেডিইউর সাবেক জাতীয় সভাপতি এবং বিহারের মন্ত্রী। লালন সিং বহু বছর ধরে নীতিশ কুমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন। তিনি সমাজতান্ত্রিক আইকন এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কার্পুরী ঠাকুরের পরামর্শক ছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বেগুসরাই আসনের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে মুঙ্গের আসন থেকে জয়লাভ করেছেন।
রাম মোহন নাইডু: অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলাম থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য রাম মোহন নাইডু টিডিপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এমবিএ ডিগ্রিধারী ৩৬ বছর বয়সী এ নেতা টিডিপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন এবং বিদায়ী লোকসভায় দলের ফ্লোর লিডার ছিলেন। তার বাবা কাইয়েরান নাইডু দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা, সাবেক বিধায়ক, সাবেক এমপি এবং ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত যুক্তফ্রন্ট সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় টিডিপির যে দুজন নেতা জায়গা পেয়েছেন তাদের মধ্যে রাম মোহন নাইডু একজন। এবারের নির্বাচনে বিজেপির শরিকদের মধ্যে টিডিপি সর্বোচ্চ ১৬ আসনে জয়লাভ করেছে।
চিরাগ পাসোয়ান: বিহারের হাজিপুরের সংসদ সদস্য চিরাগ পাসোয়ান লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি সাবেক মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে। চলচ্চিত্রে কিছুদিন কাজ করার পর রাজনীতিতে প্রবেশ করেন চিরাগ। ২০২০ সালে বাবার মৃত্যুর পর এলজেপির হাল ধরেন তিনি। আগে দুবার এমপি হলেও এই প্রথমবার মন্ত্রী হলেন বিহারের এই তরুণ নেতা।
প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্ব)
জয়ন্ত চৌধুরী: রাষ্ট্রীয় লোকদলের (আরএলডি) জয়ন্ত চৌধুরী রাজ্যসভার সদস্য। অতীতে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও তার দল গত মার্চে এনডিএ জোটে যোগ দেয়। এবার মোদীর মন্ত্রিসভায়ও ঢুকে পড়লেন জয়ন্ত। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংয়ের নাতি। সম্প্রতি চরণ সিংকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে। লোকসভায় উত্তর প্রদেশের মথুরা কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করছেন জয়ন্ত।
প্রতাপরাও গনপতরাও যাদব: ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা থেকে তিনিই একমাত্র প্রতিনিধি। চারবারের এই সংসদ সদস্য মহারাষ্ট্রে মনোহর জোশী এবং নারায়ণ রানের নেতৃত্বাধীন সরকারগুলোতে রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছিলেন। এবার জায়গা পেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়ও।
প্রতিমন্ত্রী
রামদাস আঠাওয়ালে (আরপিআইএ): তিনি রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়ার (আঠাওয়ালে) নেতা। বিআর আম্বেদকর প্রতিষ্ঠিত তফসিলি জাতি ফেডারেশনের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে দলটির। মোদীর আগের মন্ত্রিসভায় সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন রামদাস।
রাম নাথ ঠাকুর: ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করা রাম নাথ ঠাকুর বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কার্পুরী ঠাকুরের ছেলে। তিনি রাজ্যসভার সদস্য এবং ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে জনতা দলের (ইউনাইটেড) নেতা। অতীতে বিহার আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং লালু প্রসাদ যাদবের প্রথম মন্ত্রিসভায় আখ শিল্প মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাম নাথ। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নীতিশ কুমারের দ্বিতীয় সরকারে রাজস্ব ও ভূমি সংস্কার, আইন এবং তথ্য ও জনসংযোগ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভারও সদস্য ছিলেন রাম নাথ ঠাকুর।
অনুপ্রিয়া প্যাটেল: অনুপ্রিয়া প্যাটেল ২০১৬ সাল থেকে আপনা দলের (সোনিলাল) সভাপতি। ২০২১ সাল থেকে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। ২০১৪ সাল থেকে লোকসভায় মির্জাপুরের প্রতিনিধিত্ব করছেন অনুপ্রিয়া।
চন্দ্রশেখর পেমমাসানি: গুন্টুর থেকে নির্বাচনে জয়ী চন্দ্রশেখর পেমমাসানি টিডিপির আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ৪৮ বছর বয়সী এ চিকিৎসক এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে ধনী প্রার্থীদের মধ্যে একজন ছিলেন। তার পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৮৫ কোটি রুপিরও বেশি। ১৯৯৯ সালে ডা. এনটিআর ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর চন্দ্রশেখর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইন্টারনাল মেডিসিনে এমডি করেন। সেখানে ২০২০ সালে তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াং অ্যাওয়ার্ডও জেতেন তিনি।
সূত্র: এনডিটিভি