রাহুল গান্ধীকেই বিরোধী দলনেতা হিসেবে দেখতে চায় কংগ্রেস
রাহুল গান্ধীকে ভারতের লোকসভায় বিরোধী দলনেতা হিসেবে দেখতে চাইছে কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবিরের বড় অংশ। সূত্রের খবর, অধিকাংশ কংগ্রেস নেতা মনে করেন, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা হিসেবে রাহুলেরই বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব নেওয়া উচিত। এমনটি হলে তিনি ২০২৯ এর লোকসভা নির্বাচনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন। এখন এই প্রস্তাবে রাজি হবেন কি না, সেটিই মূল প্রশ্ন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, বুধবার (৫ জুন) দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতাদের জমায়েতে এই প্রসঙ্গে কথা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা না হলেও বিরোধী নেতাদের অনেকেই ঘরোয়া ওই আড্ডায় মত দিয়েছেন যে, রাহুলেরই বিরোধী দলনেতা হওয়া উচিত। বৈঠকের আগে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, পরের বার যদি ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করতে পারে, আর সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে যদি রাহুল রাজি হন, তাতে তাদের আপত্তি থাকবে না।
কংগ্রেস নেতাদের মতে, বিরোধী দলনেতাকে সিবিআই প্রধান, লোকপাল, মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার নিয়োগের বাছাই কমিটির বৈঠকে যেতে হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও প্রধান বিচারপতি থাকেন। রাহুল বিরোধী দলনেতা হলে মোদীর মুখোমুখি বসে নিজের মতামত বা আপত্তি জানাতে পারবেন।
তবে কংগ্রেসের আরেকটি অংশের মত হলো, রাহুল কোনোদিনই সারাদিন সংসদে বসে থাকার ব্যক্তি নন। ফলে তার পক্ষে বিরোধী দলনেতার ভূমিকা পালন করা কঠিন। সংসদে বসে থাকার বদলে তিনি ভারত জোড়ো যাত্রার মতো প্রচারে বা সংগঠন মজবুত করার কাজে বেশি আগ্রহী। এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস আগের বারের চেয়ে ৪৭টি আসন বেশি পেয়েছে। ভোটের হারও বেড়েছে। কিন্তু ৯৯টি আসন জিতলেও বহু রাজ্যে দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট।
২০১৪ ও ২০১৯ এর নির্বাচনের পরে লোকসভায় কোনো বিরোধী দলনেতাই ছিলেন না। কংগ্রেস বৃহত্তম বিরোধী দল হলেও লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা বিরোধী দলনেতার তকমা পাননি। কারণ, তার জন্য কংগ্রেসকে লোকসভার মোট আসনের ১০ শতাংশ জিততে হতো। প্রথম মোদী সরকারে মল্লিকার্জুন খাড়গে ও দ্বিতীয় মোদী সরকারে অধীর চৌধুরী বৃহত্তম বিরোধী দলনেতার পদে ছিলেন।
এবার অধীর হেরে গেছেন। তার সঙ্গে মধ্যপ্রদেশে দিগ্বিজয় সিংহ, ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল, রাজস্থানের সি পি জোশি, হিমাচলে আনন্দ শর্মার মতো প্রবীণ নেতারা হেরে গেছেন। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের ছেলে নকুল নাথ, রাজস্থানে অশোক গহলৌতের ছেলে বৈভব গহলৌত, হিমাচলের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের ছেলে বিক্রম আদিত্য সিংহ হেরে গেছেন। রাজবব্বর, কান্তিলাল ভুরিয়ার মতো পরিচিত মুখও হেরেছেন।
ফলে, রাহুল রাজি না হলে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা বিরোধী দলনেতা কে হবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পুরনো সংসদ সদস্যদের মধ্যে শশি থারুর, মণীশ তিওয়ারি ও কে সি বেণুগোপাল লোকসভায় জিতে এসেছেন। বেণুগোপাল রাহুলের সবচেয়ে আস্থাভাজন হলেও, তিনি এখন কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক। ফলে তাকে লোকসভার বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব দিলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে সরানোর দাবি উঠতে পারে।
গত লোকসভায় কংগ্রেসের উপ-দলনেতা গৌরব গগৈও ‘ডার্ক হর্স’ হিসেবে সবাইকে পিছনে ফেলে দিতে পারেন। বিশেষত কংগ্রেস এবার আসামে তিনটি আসন জেতা ছাড়াও উত্তর-পূর্বের মণিপুর, নাগাল্যান্ডে সব আসন জিতেছে। আমেঠিতে স্মৃতি ইরাণিকে হারিয়ে আসা কিশোরীলাল শর্মা আজ ১০ জনপথে এসে সনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে কিশোরীলালকে বিরোধী দলনেতার দৌড়ে কেউ রাখছেন না।
২০০৪ সালে রাজনীতিতে অভিষেক হওয়ার পর থেকে ৫৩ বছর বয়সী রাহুল গান্ধী তার দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কোনো সাংবিধানিক পদে থাকেননি। গত বছর মানহানির মামলার কারণে তার সংসদ সদস্য পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। যদিও পরে সুপ্রিম কোর্ট তার পদ ফিরিয়ে দেয়।
সূত্র: এনডিটিভি, আনন্দবাজার