যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে আইসিসির তদন্তকে ব্যর্থ করতে ইসরায়েলের গোপন প্রচেষ্টা

0

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ৯ বছর ধরে চলমান গোপন অভিযানের কথা উন্মোচিত হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক সম্মিলিত অনুসন্ধানে এই বিষয়টি উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (২৮ মে) এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে উঠে এসেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে আইসিসির তদন্তকে ব্যর্থ করতে ইসরায়েলের গোপন প্রচেষ্টার কথা। এই গোপন অভিযানে নজরদারি, হ্যাকিং, ভীতি প্রদর্শন ও প্রধান প্রসিকিউটর ও আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়ার মতো বিষয় ছিল।

নজরদারি ও হ্যাকিং

আইসিসির বর্তমান প্রসিকিউটর করিম খান ও তার পূর্বসূরি ফাতৌ বেনসুদাসহ আদালতটির কর্মকর্তাদের টেলিফোন, মোবাইল ও ইমেইলে আড়ি পেতেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এসব গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে রয়েছে শিন বেট ও সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতর আমার।

এই নজরদারির ফলে আইসিসির প্রসিকিউটরদের অভিপ্রায় সম্পর্কে আগেভাগেই জানতে পেরেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদনের বিষয়টিও ছিল।

আইসিসি কর্মকর্তা ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিনিময়কৃত ই-মেইল হ্যাক ও ফোনে আড়ি পেতে তথ্য সংগ্রহ করেছিল ইসরায়েল।

ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি

অনুসন্ধানে আইসিসি কর্মীদের বিরুদ্ধে কথিত ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ার ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। মোসাদের সাবেক প্রধান ইয়োসি কোহেন ব্যক্তিগতভাবে বেনসুদার সঙ্গে যোগাযোগ ও সাক্ষাৎ করেছিলেন। কোহেনের পক্ষ থেকে অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি ও অবাঞ্ছিত কল পেয়েছেন বেনসুদা। শুরুতে মোসাদ প্রধানের আচরণ বন্ধুত্বপূর্ণ থাকলেও পরে তা হুমকির দিকে মোড় নেয়। যার ফলে বেনসুদা নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন হন। এছাড়া বেনসুদাকে বদনাম করার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের গোপন তথ্য সংগ্রহ করে পশ্চিমা কূটনীতিকদের কাছে হস্তান্তর করেছিল ইসরায়েল, এমনও অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাক-চ্যানেল কূটনীতি

ইসরায়েল ব্যাক-চ্যানেলেও আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ ও বৈঠক করেছিল। এই ব্যাক-চ্যানেল কূটনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রখ্যাত ইসরায়েলি আইনজীবীও কূটনীতিক তাল বেকার। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অনুমোদিত এই বৈঠকগুলোর উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর আইসিসির এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করা এবং সম্ভাব্য বিচারের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করা। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই বৈঠকের সময় তাদের আইনি কৌশল অবহিত করার জন্য নজরদারি ও আড়িপাতা থেকে সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করেছেন।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও চাপ

অনুসন্ধানে আইসিসির তদন্ত মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সহযোগিতার কথাও উঠে এসেছে। আইসিসিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের তদন্ত থেকে ঠেকাতে উভয় দেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিল এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ চাপ প্রয়োগ করেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তদন্তের নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে উল্লেখ করে আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধিতার নেপথ্যে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের যুদ্ধাপরাধের তদন্তের বিষয়টিও কারণ ছিল বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

আইসিসির প্রতিক্রিয়া ও চলমান তদন্ত

বৈরী মনোভাবাপন্ন সক্রিয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যে নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ করছিল তা সম্পর্কে জানত আইসিসি। এসব জানার পর নিজেদের তদন্তের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় আদালতটি। বিভিন্ন দেশের চাপ ও হুমকি সত্ত্বেও, বর্তমান প্রসিকিউটর করিম খান যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি ও হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছেন। তিনি নিরপেক্ষতা ও মানবিক আইন মেনে চলার প্রতি আদালতের অঙ্গীকারের ওপর জোর দিয়ে আসছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com