ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে: অলি আহমদ

0

ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে জানিয়ে একটি বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখতে প্রতিবেশী ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ। তিনি বলেছেন, “আমরা জানি, ভারত সরকার তাদের পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি দেশের (প্রদেশ হবে, লিখিত বক্তব্যে তিনি ‘দেশ’ উল্লেখ করেছেন) নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের উদ্দেশে আমরা বলতে চাই, আমরা অন্য কোনও দেশের ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না, অন্য দেশের কোনও ক্ষতি হোক এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে চাই না। কারণ এই ধরনের কর্মকাণ্ড ইসলাম ধর্মের পরিপন্থি। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ভারত সরকার কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে সম্পর্ক করা থেকে বিরত থাকবে বরং ভারতের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্ব স্থাপনে মনোযোগী হবে।”

শনিবার (১৮ মে) বিকালে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথ এলাকায় এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ভারতের প্রতি অলি আহমদ বলেন, ‘ভারত সরকারের উচিত হবে না বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে শত্রুতামূলক আচরণ করা। আমরা সুপ্রতিবেশী হিসেবে থাকতে চাই। বর্তমান সরকার আপনাদের আমাদের দেশের সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর এবং বিভিন্ন সড়ক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। অনেকগুলো অসম চুক্তিতে সইও করেছে। যার ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তারপরও কেন ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে, তা বোধগম্য নয়।’

‘মেহেরবাণী করে, আমাদের আমাদের মতো করে থাকতে দেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না। ভারত সরকারের বর্তমান মনোভাব পরিবর্তন না হলে উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। বাংলাদেশের মানুষ অকৃতজ্ঞ নয়।’ বলে উল্লেখ করেন অলি।

নিজেকে ‘বাংলাদেশের একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে অলি আহমদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বিদ্রোহকারী সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জাতির প্রতি আমার কিছু কর্তব্য রয়েছে। কোনও কারণে যদি আমি আমার দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন না করি তার জন্য আমাকে পুরো জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আইনের শাসন, অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, পাঠ্যবইয়ে ইসলাম প্রসঙ্গ, চাকরিহীনতা, বেকারত্বসহ নানা প্রসঙ্গে সরকারের সমলোচনা করেন, বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

জলবায়ু প্রসঙ্গে অলি আহমদের অভিযোগ ভারতের প্রতি। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ- ভারতের সঙ্গে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী আমরা কোনও নদী থেকে পানির ন্যায্য অংশ পাচ্ছি না। ভারত সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে শুষ্ক মৌসুমে পানি বন্ধ করে দিয়ে দেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ গঙ্গা এবং তিস্তা নদীতেও আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ সচিবালয়ে ভারতের তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী শ্রী জগজীবন রামের সঙ্গে বৈঠক করে গঙ্গার পানি বন্টনের ব্যাপারে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হন এবং ওই চুক্তিতে লেখা ছিল, ভারত বাংলাদেশকে ৩২ হাজার কিউসেক পানি রিলিজ করবে এবং ওই পানি গঙ্গা বাঁধের ওপরে যেন মজুত থাকে তা নিশ্চিত করবে। অর্থাৎ ওই চুক্তিতে একটা গ্যারান্টি ক্লজ সন্নিবেশ করা হয়েছিল।’

‘পরবর্তীতে এরশাদ আমলে গ্যারান্টি ক্লজ উঠিয়ে দিয়ে ৩২ হাজার কিউসেকের স্থলে ২৮ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহের চুক্তি হয়। যা বর্তমান সরকারের আমলে আরও হ্রাস পেয়েছে। ফলে সারা দেশে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিম্নে নেমে যাচ্ছে।’ বলেন অলি।

তার মন্তব্য, ‘জলবায়ু উত্তপ্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। এছাড়াও পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম ভারতের তৈরি খাদ্যদ্রব্য এবং ব্যবহারিক সামগ্রীগুলোতে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর অনেক পদার্থ মেশানো থাকে। যার ফলে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর প্রায় ১৪-১৫ লাখ লোক ওই সমস্ত রোগের চিকিৎসার জন্য ভারতের হাসপাতালগুলোতে ভিড় জমায়। নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গরিব মানুষের ছেলে মেয়েরা বিদেশ গমন করে বহু কষ্টার্জিত ডলার দেশে পাঠায়। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ওই ডলারগুলো ভারতে চিকিৎসার জন্য ব্যয় করে।’

বিএনপির সঙ্গে যুগপতে যুক্ত এলডিপি সভাপতি জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি’র নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরতিহীন আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com