কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাবের হেফাজতে নারীর মৃত্যু
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাবের হেফাজতে সুরাইয়া খাতুন (৫২) নামের এক নারী আসামির মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহানের উপস্থিতিতে হাসপাতালে পড়ে থাকা মরদেহের সুরতাল রির্পোট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টায় সুরাইয়া খাতুনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর ১২ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সুরতাল রির্পোট তৈরি করা হয়। তবে আটকের পর ক্যাম্পের ভেতরে র্যাবের হেফাজতে সুরাইয়া কীভাবে মারা গেলেন এ বিষয়ে সুস্পর্ষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি র্যাব কমান্ডার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার ভেড়ামারি গ্রামের রেখা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ হত্যা মামলার প্রধান আসামি গৃহবধূর স্বামী তাইজুল ইসলাম মিলন ও তার মা সুরাইয়া খাতুনকে আটক করেন ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে আটক দুজনকে র্যাব হেফাজতে রাখা হয়। তারা ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
দেড় বছর আগে একই উপজেলার ভেড়ামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে তাইজুল ইসলাম লিমনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তাইজুল ইসলাম দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ সৃষ্টি করেন। এরপর অটোরিকশা কিনতে রেখার পরিবার তার স্বামীকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলেও তিনি অটোরিকশা কেনেননি বলে রেখার পরিবারের অভিযোগ। পরে আরও একলাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে টাকা দিতে অস্বীকার করেন তারা।
এরইমধ্যে রেখা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত ২৬ এপ্রিল রাতে রেখাকে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী তাইজুল ইসলাম লিমন, শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও তার শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন নির্যাতন করেন। এরপর রাতেই তাকে আহত অবস্থায় পাশের উপজেলা ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তার স্বামী ও শাশুড়ি হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালিয়ে গেলেও শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালের কর্মচারীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এদিন শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রচার করে রেখা ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু চিকিৎসক বলেন, তার গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। খবর পেয়ে রেখার পরিবারের লোকজন মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ময়নাতদন্তের পর দাফন করে। কিন্তু থানায় তারা মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা করে। এরপর গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে (স্বামি, শাশুড়ি ও শ্বশুর) অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেন। আদালতের বিচারক মামলার শুনানি শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দেন। গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয় (মামলা নং ১৫)। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছেন নান্দাইল থানার এস আই নাজমুল হাসান।
এরইমধ্যে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় নান্দাইল থানায় গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন, স্বামী তাইজুল ইসলাম ও শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে ডেকে আনেন। এ সময় শ্বশুরকে ছেড়ে দিয়ে দুজনকে আটক করে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসেন গভীর রাতে। শুক্রবার সকালে মৃত অবস্থায় ভৈরবের হাসাপাতালে নিয়ে যান সুরাইয়াকে। রেখার স্বামী তাইজুল ইসলাম বর্তমানে র্যাবের হাতে আটক।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নান্দাইল থানা পুলিশ। আসামিরা যদি থানায় আসে তাহলে পুলিশই গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু তাদের আটক করে র্যাব ভৈরব ক্যাম্পে আনলো কেন?
নিহত সুরাইয়া খাতুনের স্বামী আজিজুল ইসলাম বলেন, রেখা আক্তার ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তারপরও তার পরিবার মামলা করেছে। আমরা আইনিভাবে মোকাবিলা করবো। শুক্রবার রাতে নান্দাইল থানায় পুলিশ আমাদেরকে ডেকে এনে র্যাবের হাতে সুস্থ অবস্থায় আমার স্ত্রী ও ছেলেকে তুলে দিলো। খবর পেলাম রাতেই মারা গেছে আমার স্ত্রী। র্যাব নির্যাতন করে আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। আমি এ বিষয়ে আদালতে মামলা করবো। আমি বিচার চাই।