দেশজুড়ে এনআরসি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেই : ভারত
দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের পার্লামেন্টে বহুল বিতর্কিত এনআরসি নিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায়।
তিনি বলেন, জাতীয়পর্যায়ে এনআরসি বাস্তবায়নের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সরকার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। সরকারের এই অবস্থানের মাধ্যমে গত দুই মাস ধরে দেশটিতে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)-বিরোধী যে বিক্ষোভ চলছে তা শান্ত হবে বলে আশা করছে বিজেপি সরকার।
ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটির পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে সংশোধনী নাগরিকত্ব আইন পাস হয়। বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সেই সময় দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়। রাজধানী নয়াদিল্লির শাহিনবাগে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা এই আইন বাতিলের দাবিতে এখনো টানা বিক্ষোভ করে আসছেন। তবে দেশটির সরকার নতুন নাগরিকত্ব আইনের খসড়া এখনো প্রকাশ করেনি। সমালোচকরা বলছেন, এই আইনের বিরুদ্ধে নাগরিক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিক্ষোভের কারণে সরকার সিএএর বাস্তবায়ন পেছানোর মূল কারণ।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, যেসব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বিজেপির নন এবং বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়নে অস্বীকার করেছেন; তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করছে। এমনকি এই আইনের চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের আগে বিজেপির বাইরের মুখ্যমন্ত্রীদের আলোচনার টেবিলে এনে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় বলেন, অনেক রাজ্যে (সিএএ নিয়ে) উদ্বেগ রয়েছে। আমরা বিজিপি এবং বিজেপির বাইরের অনেক মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আমরা তাদের শঙ্কা সমাধানের চেষ্টা করছি।
ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার বলছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তিন দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে যে সংখ্যালঘুরা ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে সহায়তা করবে এই আইন। কিন্তু সমালোচকরা এই আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য এবং দেশটির সংবিধানের মূলনীতির লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
এর আগে গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, দেশজুড়ে এনআরসি বাস্তবায়নের ব্যাপারে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, আমি ভারতের ১৩০ কোটি নাগরিককে বলতে চাই, ২০১৪ সালে আমার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও এনআরসি বাস্তবায়নের ব্যাপারে আলোচনা করেনি। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর শুধু আসামে এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।