কুরআন মানুষের জন্য যে দিক-নির্দেশনা নিয়ে এসেছে
আল্লাহ তাআলার কথামালার অসামান্য ভাণ্ডার মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারিম। এ মহাগ্রন্থের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষ। মানুষকে নিয়েই পবিত্র কুরআনুল কারিমের যত আলোচনা। মানুষের জীবন পরিচালনার একমাত্র মহাগ্রন্থও আল-কুরআনুল কারিম। আর এ কারণেই মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা অপ্রতিদ্বন্দ্বি।
পৃথিবীতে যত আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই অনুসারিরা নিজেদের প্রয়োজনে পরিবর্তন পরিবর্ধন করেছে। যা অবিকৃত নয়। আর মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব হলো আল্লাহর রহমতে তা আজো অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান। কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তা হেফাজত করবেন।
কুরআন বিশ্ব মানবতার মুক্তির মহাসনদ। যা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দীর্ঘ ২৩ বছর যাবত নাজিল করা হয়। যাতে মানবজীবনের সব সমস্যার সমাধান বর্ণিত রয়েছে। এ মহাগ্রন্থ নাজিলের উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হলো-
সঠিক পথ-নির্দেশনা
মানুষের সুন্দর জীবন পরিচালনায় কুরআনের বিধান বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এ কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত, রহমত ও সুসংবাদের ঘোষণার পাশাপাশি দিশেহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য নাজিল করা হয়েছে।
সমস্যার সমাধান
বিশ্বমানবতা যখন চরম অত্যাচার নির্যাতন ও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত, যখন বিশ্বমানবতা সঠিক ফয়সালার আশা করছিল, ঠিক সে সময়টিতেই আল্লাহ তাআলা সব সমস্যার সমাধানকল্পে বিশ্বনবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনসহ প্রেরণ করেছিলেন। যাতে রয়েছে সব সমস্যার সমাধান।
সতর্কবার্তা প্রদান
এ গ্রন্থ মানুষের জন্য সতর্ককারী। প্রথমে আল্লাহ তাআলা তার দেয়া সব নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অতঃপর অতিতের সব জাতির কথা ও তাদের সুফল ও কুফলের কথা তুলে ধরে মানব সমাজকে হুশিয়ার করে দেয়ার জন্যই এ গ্রন্থ নাজিল করা হয়।
ভ্রান্ত বিশ্বাসের নির্মূল
জাহেলিয়াতের যুগে আরবের অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে, আল্লাহ তাআলার বিধি-বিধান সম্পর্কে তারা সুস্পষ্ট ধারণা পরিবর্তে ভ্রান্ত বিশ্বাসে লিপ্ত হয়েগিয়েছিল। নিজেদের মনমত বিধান তৈরি করে জীবন-যাপন শুরু করেছিল। চরম কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। মানুষের সে ধ্যান-ধারণা খণ্ডনের জন্যই পবিত্র কুরআন অবর্তীণ করা হয়।
ইসলামী সমাজের রুপরেখা প্রণয়ন
মানবরচিত সব মতাদর্শ উৎখাত করে আল্লাহ প্রদত্ত কুরআনি সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নাজিল করা হয় পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনুল কারিম। মূলত এটাই ছিল কুরআন নাজিলের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
শিরক মুক্ত সমাজ গঠন
কুরআন নাজিলের পূর্বে মানবতা চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সে সময়টি শিরক তথা কুফরি সমাজের প্রতি কাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছিল। মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে মানুষের কাছে মুখাপেক্ষী হয়ে ওঠেছিল। কুরআন এসেই মানুষের সামনে এ কথা সুস্পষ্ট করে দিয়েছিল যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নেই।
ইনসাফ প্রতিষ্ঠা
কুরআন নাজিলের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো অত্যাচার নির্যাতনের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা। ইসলামের আগমনের আগে জোর-জবরদস্তি ও মানবাধিকার লংঘণ মহামারী আকার ধারণ করেছিল। কুরআন নাজিলের মাধ্যমে আলোকিত হয়েছিল জাহেলিয়াতের অন্ধকার সমাজ।
রবের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন
এ কুরআন হেদায়ের অনুসারি মুমিন বান্দার একমাত্র পথ নির্দেশিকা। পরকালে মাওলার দিদারের জন্য প্রস্তুতির পাথেয় হলো এ কুরআন। কুরআনের বিধান বাস্তবায়নই ছিল বান্দার সঙ্গে রবের সম্পর্ক জোরদারের একমাত্র মাধ্যম।
তাওহিদ ও রিসালাতের সত্যায়নকারী
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠ মুজিজা হলো আল-কুরআনুল কারিম। এ কুরআনই প্রিয়নবিকে সত্যয়নকারী একমাত্র কিতাব। যে কথা আরবের লোকেরা বলতে বাধ্য হয়েছে যে, এটা কোনো মানুষের কিতাব নয়; বরং এটা আসমানি কিতাব। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল।
তাজকিয়ায়ে নফস গঠন
সর্বদা মহান রবের ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত রাখার একমাত্র নসিহত গ্রন্থও এ কুরআনুল কারিম। যারা এ কুরআনের সংস্পর্শে আসবে, সেই হবে তাজকিয়ায়ে নফসের একান্ত অনুসারী। পরকালীন মুক্তি তার জন্য অবধারিত।
অথচ মানুষ বর্তমানে কুরআনুল কারিম নাজিলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে। যে কুরআনের বিধান বাস্তবায়নে রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের শান্তি ও স্বস্তি।
আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাহকে কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য অনুধাবন করে, কুরআনের সমাজ নির্মানে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। কুরআনের বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে কুরআন নাজিলের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।