‘আবারও সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো’

0

আবারও সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো। ইতোমধ্যে কোনও কোনও জোট সম্ভাব্য দিন তারিখও নির্ধারণ করেছে। তবে সদ্য বিদায়ী বছরের আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা ও ভবিষ্যৎ কৌশলগত অবস্থান কী হবে, এ নিয়ে বিএনপির ব্যাখ্যার অপেক্ষায় রয়েছে বিরোধী দলগুলো।

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত দল ও জোটের নেতারা বলছেন, রমজান শেষ হওয়ায় এখন নতুন করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাবেন তারা। এক্ষেত্রে চলমান ইস্যুসহ অন্যান্য বিষয় যুক্ত হতে পারে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য মনে করেন, আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বর্তমান বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা করলে দেখা যাবে, যুগপৎ ধারায় পরিবর্তন আসতে পারে। এক্ষেত্রে পরিবর্তিত কৌশলে বাম ও প্রগতিশীল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো যুগপতে যুক্ত থাকবে কিনা, এ নিয়ে সন্দিহান বিএনপি। এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হবে। একইসঙ্গে যুগপৎ ধারায় যারা আগ্রহী, তাদের সঙ্গে আলোচনার পরই স্পষ্ট হবে কীভাবে যুগপৎ ধারা এগিয়ে যাবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে মঞ্চের পক্ষ থেকে সাতটি বিভাগীয় সদরে প্রতিনিধি সভা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে বিভাগীয় সভা শুরু হতে পারে। শেষ হবে জুনে। প্রতিনিধি সভাগুলো সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহে হতে পারে।

অন্তত ৩৯টি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ধারায় কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব দল ও জোট হলো, গণতন্ত্র মঞ্চ (৬ দলীয় জোট), ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম-পিপলস পার্টি (দ্বিদলীয় জোট), সমমনা জোট (১১), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য (৪ দল)। এককভাবে পালন করেছে বিএনপি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি।

বিএনপির নেতৃত্বে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার পতনের যুগপৎ কর্মসূচি শুরু করে বিরোধী দলগুলো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওই দিন থেকে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত যুগপৎ ধারায় কর্মসূচি পালিত হয়।

গণতন্ত্র মঞ্চ ও ১২ দলীয় জোটের নেতারা বলছেন, আপাতত যুগপৎ ধারায় রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ আছে। এখন বিএনপির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী উদ্যোগ সামনে আসবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আপাতত যুগপৎ ধারায় কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। অফিসিয়ালি মিটিং করার আগে যুগপৎ কর্মসূচির সম্ভাবনা কম। জরুরি বিষয় থাকলে যুগপৎ কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে লিয়াজোঁ কমিটিকে শক্তিশালী করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করা।’

সাইফুল হকের ভাষ্য, ‘বিগত আন্দোলন নিয়ে বিএনপির কী অ্যাসেসমেন্ট, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের আগে আমাদের বিষয়টি জানা দরকার।’

নির্বাচনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির সঙ্গে বৈঠক হলেও এরপর কোনও ‘ফলোআপ’ করা হয়নি। সর্বশেষ ১৩ জানুয়ারি গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি।

এর আগে, ৯ জানুয়ারি ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করেন তারেক রহমান। এরপর কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও গণতন্ত্র মঞ্চ এবং ১২ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

জানতে চাইলে সোমবার বিকালে ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘মাত্র ঈদ শেষ হলো। এবার আমরা জোটের বৈঠক করবো। এরপর রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবো। বিএনপি কী করে সেদিকেও নজর রাখছি। তবে আমরা নিজেরাও ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালন করবো। আমাদের জোট সক্রিয় আছে। যেকোনও পরিস্থিতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আমরা প্রত্যয়ী।’

বিএনপির যুগপৎসঙ্গী গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘যুগপৎ ধারা নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বরাবরই আলোচনা ছিল। বিশেষ পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থ, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে যুগপৎ ধারা গড়ে উঠেছিল। এই উদ্যোগকে কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, এ নিয়ে দলীয় ও ব্যক্তিগত পরিসরে আলোচনা কিন্তু চলমান আছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর যুগপৎ দেখা যায়নি। এটা বিএনপির ওপর নির্ভরশীল ছিল। আন্দোলনের বড় স্টেকহোল্ডার হিসেবে বিএনপি সবার সঙ্গে আলোচনা করেছে, সিদ্ধান্ত দিয়েছে। নির্বাচনকালীন ও আগে বিএনপির প্রায় ২৮ হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছিল। নির্বাচন যেহেতু সরকার করে নিয়েছে, এ জন্য আমাদের অগ্রাধিকার ছিল নেতাকর্মীদের মুক্ত করা; আইনি প্রক্রিয়া সংহত করা; নিজেরা সুসংগঠিত হওয়া।’

‘এখন দলগুলো আগের চেয়ে সুসংগঠিত হচ্ছে। সব দল সংগঠন গোছাচ্ছে। ঈদ শেষ হলো, আলোচনা শুরু হবে’ বলে উল্লেখ করেন নুর।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, যুগপৎ ধারা আপাতত স্থগিত থাকলেও যুগপতেই ফিরবে বিএনপি। তবে কীভাবে, কবে থেকে তা এখনও ঠিক হয়নি। বিএনপিও আলোচনা করেনি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান দাবি করেন, যুগপৎ ধারা এখনও অব্যাহত আছে। রমজান ও ঈদের কারণে কর্মসূচি না থাকলেও আবার চলমান হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু সাংগঠনিক কাজের কারণে টাইমিং হয়নি। এখন আবার শুরু হবে। যুগপৎ ধারা চলবে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com