গাজীপুরে বোনের বাসায় চুরির পর শ্বাসরোধে হত্যা
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বোনের বাসায় চুরির পর বোনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে এক ভাই ও তার সহযোগী। এ ঘটনায় নিহত শাহনাজ বেগম শিমুর (৩৮) ভাই ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তারা। শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) বিকালে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার বিকালে গাছা থানা এবং রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো শিমুর ভাই কাপাসিয়া উপজেলার কুলগঙ্গা গ্রামের সিরাজ উদ্দিন বেপারির ছেলে কামরুজ্জামান রুবেল (৩৬) এবং তার সহযোগী শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার মামদাবাদী গ্রামের আস্কর আলীর ছেলে মিনাল ওরফে মিস্টার (২১)। তাদের কাছ থেকে শিমুর স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামে স্বামীর বাড়িতে শাহনাজ বেগম শিমুকে হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা গুঁজে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পুলিশ ওই দিন সকালে লাশ উদ্ধার করে। শিমু দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী।
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে গাজীপুর পিবিআইয়ের এসআই সালেহ ইমরান বলেন, রুবেল গাজীপুরের একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করতো। প্রায় পাঁচ মাস আগে চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়ে। এ সময়ে পরিচিতজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ঋণগ্রস্ত হয়। ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বোনের বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা চুরির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বিকালে রুবেল ও মিনাল জয়দেবপুর রেলস্টেশনে আসে। সেখান থেকে তারা ব্যাগে একটি চাকু, প্লাস, গামছা, কেচি নিয়ে ট্রেনে করে শ্রীপুরে আসে। শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশা ভাড়া করে বরমী পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে চা-সিগারেট পান করে। রাত ৮টায় সিংহশ্রী ব্রিজে যায়। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে শিমুর বাসার সামনের আখক্ষেতে লুকিয়ে থাকে।
তিনি বলেন, রাত ১২টার পর শিমুর পাশের বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকে ছাদে ওঠে। পরে রান্নাঘরের টিন কেটে বোনের ঘরে প্রবেশ করে। বোন শব্দ পেয়ে চিৎকার করলে মিনাল চুরি ধরে ভয় দেখায় এবং বলে তোমার কোনও ক্ষতি করবো না, চিৎকার বন্ধ করো। এরপরও চিৎকার বন্ধ না করায় মিনাল গামছা দিয়ে মুখ চেপে ধরে। এই ফাঁকে রুবেল বোনের হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। ভাইকে যেন চিনতে না পারে সে জন্য চোখ-মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। পরে রুবেল আলমারির চাবি খুঁজতে থাকে। এর মধ্যে মিনালের সঙ্গে শিমুর ধস্তাধস্তি হয়। এ অবস্থায় শিমুকে মারধর করে গলা চেপে ধরে। রুবেল টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, নাকফুল, তিন হাজার টাকা এবং শিমুর মোবাইল নেয়। ওই দিকে গলা চেপে ধরায় শ্বাসরোধে মারা যান শিমু। এরপর তার হাত-পা পেছন দিয়ে বেঁধে ফেলে রেখে বাড়ির গেট দিয়ে বের হয়ে যায় তারা। পরদিন সকালে চাকু, প্লাস, মোবাইল সিংহশ্রী ব্রিজের নিচে খালে ফেলে দেয় এবং চুরি করা স্বর্ণালঙ্কার এক লাখ ৫০ টাকা বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে নেয় তারা।