লিবিয়ায় যুবককে নির্যাতন, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
পরনে সাদা শার্ট ও প্যান্ট। দুই পা কাপড় দিয়ে বাঁধার পর পায়ের নীচ দিয়ে বাঁধা হয়েছে দুই হাতও। আর একই ভাবে বাঁধা হয়েছে মুখ। এরপর মারা হয় চড়-থাপ্পড়। তখনই মেঝেতে লুটে পড়েন রুবেল হোসেন নামে এক যুবক। তারপর তাকে লাঠি দিয়ে আরও মারধর করা হয়। মারধর করায় ওই যুবক কথা বলতে চাইলেও মুখ বাঁধার কারণে কিছুই বলতে পারছিলেন না। শুধু গোঙ্গানির আওয়াজ হচ্ছিল।
লিবিয়ায় থাকা রুবেল হোসেন নামে এক যুবককে এভাবে মারধরের পর ভিডিও করে তার পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণের জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। চার দিন আগে পাঠানো ভিডিওতে নির্যাতনের শিকার রুবেলের চেহারা স্পষ্ট দেখা গেলেও নির্যাতনকারী ব্যক্তির চেহারা দেখা যাচ্ছিল না।
লিবিয়ায় মুক্তিপণ আদায়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার রুবেল হোসেনের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার রামেশ্বপুর ইউনিয়নের নিশুপাড়া গ্রামে। রুবেলের স্ত্রীর বড় বোন আক্তারুনের বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তেমারিয়া গ্রামে। রুবেলকে লিবিয়ায় পাঠানো দালাল মিজানুর রহমান ওরফে ধলুর বাড়িও তেমারিয়া গ্রামে।
জানা গেছে, আক্তারুন তার ভগ্নিপতি রুবেলকে গ্রামের দালাল মিজানুর ও তার বাবা আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিয়েছিলেন। এরপর রুবেল হোসেন নিজেই দালাল মিজানুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রুবেল তার জমি বিক্রি করে প্রায় ৪ লাখ টাকা দালাল মিজানুর রহমানের স্বজনদের হাতে দিয়েছিলেন। এরপর গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রুবেল লিবিয়ায় পাড়ি জমান। এরপর সেখানকার একটি শহরের অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে তার হাত-পা একসঙ্গে বেঁধে ও মুখ কাপড় গুজিয়ে দিয়ে তাকে চড়-থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে বেদম পেটানো হয়। এ সময় রুবেলের মুখ থেকে শুধু গোঙ্গানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। এরপর ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে রুবেলকে নির্যাতন করার ভিডিও তার পরিবারের মোবাইলে পাঠানো হয়।
লিবিয়ায় নির্যাতনের শিকার রুবেলের স্ত্রীর বড় বোন আক্তারুন বলেন, দালাল মিজানুর রুবেলকে লিবিয়ায় নিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন। রুবেলকে ভালো কাজ দেওয়ার কথা বলে ১০ দিন আগে লিবিয়ার আরেকটি জায়গায় নিয়ে যায়। তারা সেখানে রুবেলকে আটকে রেখে মারধর করছেন। অচেনা কণ্ঠের একজন বাংলাদেশি লিবিয়া থেকে আমাকে কল করে রুবেলের মুক্তিপণের জন্য ১০ লাখ টাকা চেয়েছেন। এ ছাড়া রুবেলকে মেরে ফেলবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। ভিডিও পাঠানোর পর লিবিয়ায় থাকা দালাল মিজানুরের কাছে ফোন করে তাকে পাইনি। মিজানুরের বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবাকে বলেছি।
আক্তারুন আরও বলেন, ভিডিও পাঠানোর পর মুক্তিপণ চাওয়ার সময় সাইড থেকে রুবেল বলছিল, টাকা পাঠাও, টাকা পাঠাও, নইলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। জমিজমা বিক্রি করে রুবেল লিবিয়া গেছে। আমার বোন তাহেরা ঢাকায় থাকে। এখন ১০ লাখ টাকা কোথায় পাব। এখন পর্যন্ত রুবেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কোথায় গেলে রুবেলকে মুক্ত করতে পারব তা ভেবে পাচ্ছি না।
দালাল মিজানুরের প্রতিবেশীরা জানান, মিজানুর সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি গ্রামের বাড়িতে মৎস্য চাষ ও মুরগির খামার করেন। দেড় বছর আগে লিবিয়ায় চলে যান। এরপর থেকে মিজানুর লিবিয়ায় লোকজন নিয়ে যেতে শুরু করেন। মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান ও ছোট ভাই শাহিন ঘুরে-ঘুরে লিবিয়ায় পাঠানোর জন্য লোক সংগ্রহ করতেন। লিবিয়ায় চট্টগ্রামের চার তরুণকে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন স্থানের লোক মিজানুরদের বাড়িতে আসতে শুরু করেন। এরপর গত শুক্রবার সকালে বাড়ির মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে মিজানুরের মা-বাবা ও ভাই অন্যত্র চলে যান।
প্রসঙ্গত, লিবিয়ায় চট্টগ্রামের আনোয়ারার চার তরুণকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে একইভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই তরুণদের মুখে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তেমারিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিবিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমানের নাম এসেছে।