জাহান্নাম থেকে মুক্তির পয়গাম নিয়ে মুমিনের দরজায় নাজাতের দশক
জাহান্নাম থেকে মুক্তির পয়গাম নিয়ে মুমিনের দরজায় নাজাতের দশক।
সংযমের এ মাসে আত্মপর্যালোচনা করা দরকার-আমরা রহমত ও মাগফিরাতের কতটা কামাই করতে পারলাম।
আল্লাহর প্রিয় হতে পারলাম কতটুকু। নবিজির ভালোবাসা কতটা ধারণ করলাম। তাহলে মুক্তির দশক থেকে পরিপূর্ণভাবে উপকৃত হতে পারব।
বিশেষজ্ঞ আলেমদের মতে, রমজানের প্রত্যেক দশকেই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত থাকে। তবে পৃথক পৃথক তিন দশকে বিশেষ তিনটি বিষয়ের প্রাবল্য থাকে। তাই নাজাতের এ সময়ও আল্লাহর কাছে রহমত ও মাগফিরাত কামনায় কোনো বাধা নেই।
প্রিয় পাঠক! মোবারক এ মাসে কল্যাণ ও করুণার স্রোতঃধারা দ্রুত বয়ে চলছে। কৃচ্ছ্রসাধন, সংযম ও সহমর্মিতার সাধনার মাধ্যমে এ সময় যে যতটা সাওয়াব কুড়াবে, তার জীবন হয়ে উঠবে ততটা আনন্দময়।
হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি হলো ইফতারের আনন্দ। আরেকটি হচ্ছে দিদারে ইলাহির আনন্দ। সারা দিন না খেয়ে সন্ধ্যায় যখন রোজাদার এক গ্লাস ঠান্ডা পানির শরবত পান করেন, তখন কী যে ভালো লাগে, এর তুলনা করা চলে না।
রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতারের অনুভূতি-আনন্দ কখনোই রোজা না রেখে খাওয়ার মতো হবে না। এটা একটা চিরন্তন ঐশী ব্যাপার। আরেকটি আনন্দ হলো দিদারে ইলাহির আনন্দ।
আল্লাহপাককে দেখার সাধ। তার সাক্ষাৎ ও সান্নিধ্যের আনন্দ। আমরা যদি সারা জীবন দেহ ও আত্মাকে পাপাচার থেকে উপোস রেখে আল্লাহপাকের কাছে হাজির হতে পারি, তাহলেই আমাদের আত্মার ইফতার হবে প্রভুকে দেখার সৌভাগ্য অর্জনের মাধ্যমে।
খোদাকে দেখার আনন্দে আমাদের দেহ-মন সজীব ও সতেজ হয়ে উঠবে। মনে রাখতে হবে, দেহের রোজা মাত্র কয়েক ঘণ্টার। আর এর আনন্দ হলো দুনিয়ার ইফতার। আর আত্মার রোজা একজীবনের। এর আনন্দও সৃষ্টিজগতের সেরা আনন্দ-দিদারে ইলাহির আনন্দ।
এই এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যেন একজীবনের আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ নিতে পারি-এটাই সিয়াম সাধনার মূল শিক্ষা। রোজা মুসলমানদের ইমান ও বিশ্বাসের উন্নয়ন, আদর্শ চরিত্রগঠন, নিয়মানুবর্তিতা, আমানতদারি, সহমর্মিতা, পরোপকার এবং আল্লাহর রাসুলের প্রতি ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। মার্জিত জীবনাচার ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয় সিয়াম।
সঠিক সময়ে নিয়ম মেনে সেহরি গ্রহণ আবার সময়মতো ইফতার করা, যথাসময়ে তারাবি নামাজ আদায়সহ অন্য অনেক আমল পালনে সময়ানুবর্তী হওয়ার মহান শিক্ষা আমরা রমজান থেকে পাই।
রমজানের শিক্ষা যদি আমরা বাকি জীবনে চর্চা করতে পারি, তাহলে পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনেও আমরা সফল হতে পারব, এটা নিশ্চিত বলা যায়। আল্লাহতায়ালাই একমাত্র তওফিকদাতা।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুত তারবিয়াহ বাংলাদেশ, আলমনগর, সাভার, ঢাকা