পিন্ডি টেস্টের ব্যাটিং অর্ডার বলে দিলেন ডমিঙ্গো
আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলতে রাওয়ালপিন্ডি যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো গতকাল দুপুরে মিডিয়ার মুখোমুখি হন। দল কেমন হলো, টেস্টে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন, কী হবে ব্যাটিং অর্ডার এমন অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান ডমিঙ্গো। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই মাসের শেষে দেশে অনুষ্ঠিত টেস্টে মুশফিকুর রহিমকে দলে ফেরাবেন তো? এই একটা জায়গায় কেমন যেন জবাবটা ধোঁয়াশা রেখে গেলেন ডমিঙ্গো। কেন? ডমিঙ্গোর সঙ্গে কথোপকথনের বিশেষ অংশ তুলে দেওয়া হলো ‘দেশ রূপান্তর’-এর পাঠকদের জন্য।
টেস্টে মোটিভেশন কোথায়?
রাসেল ডমিঙ্গো : দেশের হয়ে খেলতে নামলেই উজ্জীবিত থাকা উচিত। সামনে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এক দলের বিপক্ষে বড় সিরিজ। টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। তাই খেলোয়াড়রা জানে যে তাদের এই সংস্করণে পারফর্ম করতে হবে। অনেক দিন হলো আমরা টেস্টে ভালো করতে পারছি না। দেশের বাইরে একটা টেস্ট সিরিজ জেতার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে আমাদের। সেই হিসেবে আমাদের সামনে অনেক মোটিভেশন।
মোহাম্মদ মিঠুন ও সৌম্য সরকার প্রসঙ্গে…
মিঠুন খারাপ ফর্মে তা বলা চলে না। এখন সে ৬০ রানে (মধ্যাঞ্চলের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৩ করেছে গতকাল) ব্যাট করছে। পাকিস্তানে একটা টি-টোয়েন্টি খেলেছে। আমার মতে বিপিএলও তার ভালো ছিল। সে খারাপ ফর্মে তা বলব না। সৌম্য ভালো খেলছে বলেই মনে হচ্ছে। সে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেন থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে আমাকে। ভারতে কঠিন কন্ডিশনে আমাদের টেস্ট দলে খেলেছে মিঠুন। এক-দুই টেস্ট পরই কাউকে বাদ দেওয়া কঠিন। আমি সবসময় বলি যে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিক হতে হবে। কারও ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাকে কয়েক টেস্ট খেলতে দিতে হবে। এই সফরে অনেকে আছে যারা ভারতের বিপক্ষে দলে ছিল। আমরা তাদের খেলায় উন্নতি করার সুযোগ দিচ্ছি।
চলমান বিসিএলে টেস্ট খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স সম্পর্কে…
তামিমের ট্রিপল সেঞ্চুরিটা দুর্দান্ত। সবসময় এমনটা ঘটে না বলে এর কদর করতে হবে। মুমিনুল ও রিয়াদ সেঞ্চুরি করেছে। মিঠুনও ৬০-এর বেশি করল। কেউ কেউ ৫ উইকেট নিয়েছে। তারা কেন টেস্ট দলে তা দেখিয়েছে। টেস্ট খেলোয়াড়দের ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় পারফরম্যান্স করা জরুরি।
টেস্টের দল নিয়ে...
দল নিয়ে খুব খুশি আমি। ভালো কিছু ব্যাটসম্যান পেয়েছি। দুই স্পিনার আছে। মিরাজ অবশ্য ফিট নয় এখন। শান্ত, সাইফের মতো মিঠুনেরও দলে জায়গা পাকা করার সুযোগ আছে।
মোস্তাফিজকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে…
বিশেষ করে সাদা বলের খেলায় মোস্তাফিজ যে একটু চাপে তা সে নিজেও জানে। অবশ্য এখনো সে আমাদের এক নম্বর বোলার। সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ। চাপের মধ্যে ভালো পারফর্ম করে। নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে বোলাররা চাপে পড়তে পারে। শুরুতে বা ডেথ ওভারে। এটা কঠিন কাজ বলেই ফর্মে ওঠানামা হতে পারে। সাদা বলের ক্রিকেটে সে ভালোভাবে ফিরবে এ বিশ্বাস আমার আছে। টেস্টের জন্য কিছু কাজ করতে হবে ওকে। শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট ওকে নিয়ে কাজ করছিল। ওটিস গিবসন এখন তাকে ডানহাতিদের বল করার মতো সঠিক পথে নিয়ে আসবে। টেস্টে তাকে আবার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আগে তাকে টেকনিক নিয়ে কিছু কাজ করতে হবে।
পাকিস্তানে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে…
এই মুহূর্তে মুমিনুল তো ৪-এ পাকা। হয়তো শান্তকে ৩-এ পাঠাব। তামিম ইকবালের সঙ্গে সাইফ হাসান ব্যাটিং ওপেন করবে। মিঠুন ও রিয়াদ ৫ ও ৬-এ। লিটন সম্ভবত ৭-এ।
মুশফিককে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফেরানো প্রসঙ্গে…
আমার কাছে এটা একটা টেস্ট ম্যাচের স্কোয়াড। ফিরে এসে আবার আমরা মূল্যায়ন করব। মনে রাখতে হবে মুশফিক শেষ টেস্টেও (ভারতের বিপক্ষে) রান পেয়েছে। কিন্তু আমাদের এটাও বিবেচনা করতে হবে যে একটা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে এক টেস্টের পর তা বদলে ফেলা, আবার তৃতীয় টেস্টের জন্য অন্য একটা ব্যাটিং লাইনআপ বেছে নেওয়ার ব্যাপারটা।
টেস্টের প্রস্তুতি নিয়ে…
আদর্শ হয়নি। একটা টেস্ট ম্যাচের অন্তত সাত-আট দিন আগে আমাদের সবসময় সেখানে থাকা দরকার। ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলা, দিন দুয়েক অনুশীলনে কাটানো জরুরি। আমাদের প্রস্তুতিতা তেমন ভালো হয়নি। কিন্তু আমাদের তো করার কিছু নেই। খেলোয়াড়রা এখানে প্র্যাকটিস করেছে, খেলেছে। বুধবার সকালে আমরা ওখানে (পিন্ডি) পৌঁছাব। বৃহস্পতিবার প্র্যাকটিস করব। শুক্রবার তো খেলা। তাই এটা ভালো নয় (প্রস্তুতি)।
বিদেশে বাংলাদেশের লক্ষ্য…
বাস্তবতা মানলে আমাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার সুযোগ নেই। টেস্ট র্যাংকিংয়ে আমরা ১০ নম্বর। কিন্তু আমরা সত্যি বাংলাদেশের বাইরে একটা সিরিজ জিততে চাই। সেটা করতে চাইলে দলের অনেক আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হবে। দেশের বাইরে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই।
রাওয়ালপিন্ডির চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে…
এখানে খেলোয়াড়রা যে উইকেটে খেলে তাতে পেস ও বাউন্স তেমন থাকে না। আমি নিশ্চিত, পিন্ডিতে তা থাকবে। ছেলেদের জন্য এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের কেউ কেউ (ব্যাটিং কোচ) নিল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে ভালোই কাজ করেছে। ম্যাকেঞ্জি টেস্টের খেলোয়াড়দের টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কাজ করছে। ভারতে বাজে পারফরম্যান্সের কথা মাথায় রেখে খেলোয়াড়দের অনেকে জানে যে বড় পারফরম্যান্স দেখাতে হবে তাদের। ব্যাট হাতে আমাদের আরেকটু কমিটমেন্ট দেখাতে হবে। কন্ডিশন ভালো না হলেও রান করার পথ খুঁজে বের করতে হবে।
নতুন বোলিং কোচ ওটিস গিবসন প্রসঙ্গে…
ওটিসকে আগে থেকে চিনি। অভিজ্ঞ কোচ সে। ওকে শুধু বোলিং কোচ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই না আমি। দলকে কোচিং করানোর অন্যান্য বিষয়েও তাকে জড়িত করতে চাই। এটা তার ভালো লাগছে। সে আমাকে ১০ বোলারের একটা তালিকা দিয়েছে যাদের সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো ভালো মনে করে। আগামী কয়েক মাসে তাদের খেলানোর সময় বের করতে হবে।
পাকিস্তানে লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ কতটা হুমকি?
আমাদের কয়েকজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছে। তা কাজে আসবে। এই সময়ে ইয়াসির শাহ তার সেরাটায় নেই। পাকিস্তান সবসময় মানসম্পন্ন ফাস্ট বোলার ও লেগ স্পিনারের জন্ম দেয়। তবে ওদের খেলতে আমাদের ইতিবাচক ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। ওটিস যেমন বলেন খেলাটা খেল, নাম দেখে খেল না।
পাকিস্তানে কি জয় সম্ভব?
অবশ্যই। জানি যে আমরা টেস্টে ভালো খেলছি না। কিন্তু জিততে পারব না এমনটা ভেবে যদি পাকিস্তানে যাই তাহলে না যাওয়াই ভালো। যদি সবকিছু ঠিকমতো করতে পারি, ভারত সফরের চেয়ে বলার মতো উন্নতি করতে পারি তাহলে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে পারব। কঠিন হবে। তারা মানসম্পন্ন দল। তবে এটাও জানি যে, তাদের একটা দিন খারাপও যেতে পারে। তাদের খারাপ দিনটাকে আমাদের অসাধারণ দিন বানিয়ে ফেলতে হবে। এমনটা ঘটলে আমাদের সুযোগ আছে।