মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০: প্রার্থী বাছাই চলবে এক বছর
তিন বছর শেষে আবারও কে হোয়াইট হাউস পরিচালনা করবেন সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার শেষ বছরজুড়ে চলবে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া। নির্বাচনে দলীয় টিকিট পেতে হলে দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের।
এটিই ‘প্রাইমারি’ ও ‘ককাস’ নামে পরিচিত। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিটি রাজ্যের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান সমর্থকরা নির্ধারণ করেন কারা তাদের দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন। এ প্রক্রিয়া আজ (সোমবার) থেকে আইওয়া ককাসের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে। শেষ হবে ৭ জুন পুয়ের্তো রিকোর প্রাইমারিতে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০’র পুরো প্রক্রিয়া তুলে ধরা হল-
ককাস ও প্রাইমারি পার্থক্য : প্রাইমারি হচ্ছে প্রথাগত নির্বাচন, যেখানে দিনব্যাপী নাগরিকরা গোপন ব্যালটে ভোট দেন। প্রাইমারিতে বিজয়ী প্রার্থী ওই রাজ্যের নিজ দলীয় প্রতিনিধিদের জাতীয় সম্মেলনে তার পক্ষে ভোট দিতে নিয়ে যান।
অন্যদিকে ককাস হচ্ছে দলের নিবন্ধিত ভোটার ও কর্মীদের সভা, যা পূর্বনির্ধারিত দিন ও ক্ষণে অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক ঘণ্টার এ সভায় প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী ইস্যু নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। পরে তারা ভোটের আয়োজন করে একজন প্রার্থী নির্বাচন করেন। কাউন্টি পর্যায়ের সম্মেলনে ওই প্রার্থীকে সমর্থন দিতে প্রতিনিধিও নির্বাচন করা হয়।
প্রথম ধাপ- প্রার্থিতা ঘোষণা : প্রথম ধাপে মনোনয়নে নাম লেখানো। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ২৮ জন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন।
কিন্তু ফান্ড সংকট, জনগণের রোষানল এবং নিজ জনপ্রিয়তার ভরসা না পেয়ে ইতিমধ্যে ১৬ জন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। ‘প্রাইমারি’ পর্যায়ে ১২ জন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী রয়েছেন। নিয়মানুসারে, তাদের মধ্যেই একজনই মনোনয়ন পাবেন। রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী তালিকায় রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ পাঁচজন।
দ্বিতীয় ধাপ- আইওয়া ককাস : আইওয়া রাজ্য দিয়েই প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু। এ কারণে আইওয়া ককাসের গুরুত্ব খুবই বেশি। আজ (৩ ফেব্রুয়ারি) এ রাজ্যে প্রার্থী বাছাইয়ে ককাস শুরু হবে। শুরুর জয় যে কোন প্রার্থীর জন্য আগামী ককাস ও প্রাইমারিগুলোতে বড় জয় এনে দিতে পারে।
তবে এখানে জয় মানেই আবার বড় কিছু না-ও হতে পারে। যেমন বিগত নির্বাচনগুলোতে মাইক হুকাবি, রিক স্যান্তোরাম ও টেড ক্রুজ আইওয়া ককাসে জিতলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি।
তৃতীয় ধাপ- নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারি : ১১ ফেব্রুয়ারি নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রথম প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ছোট্ট রাজ্যটির ১৩ লাখ বাসিন্দা প্রাইমারি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
কিভাবে ককাস-প্রাইমারি কাজ করে? : ককাস ও প্রাইমারিতে বেশি ভোট পাওয়া মানে বেশি সংখ্যক ‘প্রতিনিধি’ পাওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি রাজ্যে প্রতিনিধির সংখ্যা আলাদা আলাদা। এবার প্রতি প্রার্থীকে ‘প্রতিনিধি’ জিততে হলে প্রত্যেক ককাস ও প্রাইমারিতে অন্তত ১৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে।
চতুর্থ ধাপ- সুপার টিউসডে : এটা হচ্ছে সেই দিন, যেদিন বেশিরভাগ রাজ্য এবং টেরিটরি তাদের প্রাইমারি নির্বাচন অথবা ককাসের আয়োজন করে থাকে। এ বছর সুপার টিউসডে অনুষ্ঠিত হবে ৩ মার্চ। এদিন ১৬টি রাজ্য ও টেরিটরিতে ককাস ও প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হবে। সুপার টিউসডের পর পরিষ্কার হয়ে যাবে- ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হচ্ছেন কে।
পঞ্চম ধাপ- তিন মাস চলবে ককাস-প্রাইমারি : এক সপ্তাহের বিরতির পর আরেকটি ব্যস্ততম দিন ১০ মার্চ। এদিন ছয় রাজ্যে ৩৫২ জন প্রতিনিধি বাছাইয়ে ককাস ও প্রাইমারি হবে। এভাবে আরও প্রায় তিন মাস চলবে ককাস ও প্রাইমারি।
ষষ্ঠ ধাপ- জাতীয় সম্মেলন : ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে অনেকটা নিশ্চিত। ২৪-২৭ আগস্টে নর্থ ক্যারোলিনার চার্লটে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনে শপথ নেবেন ট্রাম্প। এর আগে ১৩-১৬ জুলাইয়ে উইসকনসিনের মিলওয়াউকিতে অনুষ্ঠিত হবে ডেমোক্রেটিক দলের সম্মেলন।
জাতীয় সম্মেলন কিভাবে কাজ করে? : চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে। এর আগে রাজ্যগুলোতে ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রতিনিধি (ডেলিগেট) নির্বাচিত করে জাতীয় সম্মেলনে পাঠানো হয়। দলীয় প্রতিনিধিরা সেখানে ভোট দিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করেন।
রাজ্যের ভোটাররা শুধু প্রাইমারি বা দলীয় ককাসে তাদের মতামত সরাসরি দিতে পারেন। যেমন ডেমোক্রেটিক দলের প্রতিনিধি রয়েছেন তিন হাজার ৯৭৯ জন। প্রাইমারি ও ককাসে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ প্রতিনিধি (১,৯৯০) জয় করতে পারেন তিনি জাতীয় সম্মেলনে ভোটের জন্য মনোনীত হবেন।
৫০ শতাংশের প্রতিনিধি না পেলে তাকে ‘কনটেসটেড বা ব্রোকার্ড সম্মেলন’ বলে। সেখানে আরও ৭৭১ জন সুপার ডেলিগেট অংশ নেবেন। তারা হলেন দলের সাবেক ও বর্তমান জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্সের মতো নেতার সুপার ডেলিগেট।
সপ্তম ধাপ- নির্বাচন : শেষ ধাপে বাকি থাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ৩ নভেম্বর সেটি অনুষ্ঠিত হবে। ২১ জানুয়ারি অভিষেক।